চাঁদের মাটি ছুঁয়েছে ভারত। গত বছরের ২৩ অগস্ট সন্ধ্যায় ইসরোর চন্দ্রযান-৩ অভিযান সফল হয়েছে। এই সাফল্যের সঙ্গে সঙ্গে চাঁদের মাটিতে মহাকাশযান নামানো দেশগুলির মধ্যে চতুর্থ স্থানে উঠে এসেছে ভারতের নাম। এর আগে কেবল আমেরিকা, রাশিয়া এবং চিনের এই কৃতিত্ব ছিল।
শুধু তাই নয়, আরও একটি ইতিহাস ছুঁয়েছে ইসরো। চাঁদের দক্ষিণ মেরু এত দিন পর্যন্ত অনাবিষ্কৃত ছিল। ভারতই প্রথম দেশ হিসাবে চাঁদের এই প্রান্তে পা রেখেছে। চাঁদের ‘কুমেরু’ আবিষ্কারের কৃতিত্ব তাই ভারতের।
দক্ষিণ মেরুতে ভারতের সাফল্যের পর চাঁদের সেই গোলার্ধ নিয়ে নতুন করে চিন্তাভাবনা শুরু করেছে ভারতের পড়শি দেশও।
চিনের মহাকাশ বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, খুব শীঘ্রই চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে মহাকাশযান পাঠাবেন তাঁরা। সেই চন্দ্রাভিযানের নাম হবে ‘চাংই-৭’।
সম্প্রতি সেই অভিযানের উদ্দেশ্য এবং অভিযানে কী কী অত্যাধুনিক যন্ত্র ব্যবহৃত হতে পারে, তা প্রকাশ করেছে চিন।
২০২০ সালে আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা এবং জার্মান এরোস্পেস সেন্টারের যৌথ প্রচেষ্টায় নির্মিত সোফিয়া (স্ট্র্যাটোস্ফেরিক অবজারভেটরি ফর ইনফ্রারড অ্যাস্ট্রোনমি) টেলিস্কোপ চাঁদের দক্ষিণ মেরু সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আবিষ্কার করে। জানা যায়, এই অংশে জল এবং অন্যান্য একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ লুকিয়ে রয়েছে।
চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে সূর্যের আলো পড়ে না। এই অংশটি চিরআঁধারে নিমজ্জিত। বিজ্ঞানীদের মতে, এই অংশে প্রাণের অস্তিত্বের জন্য উপযোগী সম্পদ পাওয়া যেতে পারে।
তবে চাঁদের সেই অংশ যতটা সম্ভাবনাময়, ততটাই ‘বিশ্বাসঘাতক’। দক্ষিণ মেরুর পদে পদে রয়েছে বিপদ এবং প্রতিকূলতার হাতছানি। অংশটি সম্পূর্ণ রূপে বরফে মোড়া। এখানে বিশাল বিশাল কিছু খাদ রয়েছে। কোনও কোনও ক্ষেত্রে খাদের বিস্তার হাজার কিলোমিটারেরও বেশি। আলো কম থাকায় উন্নত প্রযুক্তি সম্বলিত মহাকাশযানও এই অংশে এসে কাবু হয়।
চিনের মহাকাশ বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, ‘চাংই-৭’ অভিযানের মূল উদ্দেশ্য হল সেই বরফে ঢাকা দক্ষিণ মেরুর কাছাকাছি অন্ধকারে ডুবে থাকা এলাকাগুলি ঘুরে দেখা।
চিন জানিয়েছে, তাদের সেই আসন্ন অভিযানে যে সব তথ্য উঠে আসতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে তা ভবিষ্যতে চাঁদে বাসস্থান তৈরি করতে এবং গভীর মহাকাশ অভিযানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।
চিনের ‘চাংই-৭’ অভিযান হওয়ার কথা ২০২৬ সালে। মহাকাশে নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করতেই এই অভিযানে যেতে চাইছে চিন। ওই অভিযান মহাকাশ বিজ্ঞানে নিজেদের আরও গুরুত্বপূর্ণ করে তুলতেও চিনের বৃহত্তর কৌশলের অংশ বলেও জানিয়েছেন বিজ্ঞানীদের একাংশ।
বিজ্ঞান পত্রিকা ‘ন্যাশনাল সায়েন্স রিভিউ’তে প্রকাশিত একটি সাম্প্রতিক গবেষণাপত্রে চিনের ‘চাংই-৭’ অভিযানের উদ্দেশ্য তুলে ধরা হয়েছে। সেই প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই অভিযানের উদ্দেশ্য চাঁদের মাটিতে বিভিন্ন উপাদান বিশ্লেষণ করা, চাঁদের বাহ্যিক এবং অভ্যন্তরীণ গঠন ও চাঁদের চৌম্বকীয় ক্ষেত্রগুলি তদন্ত করা।
একই সঙ্গে চাঁদের দক্ষিণ মেরু, পৃথিবীর ম্যাগনেটোটেল এবং প্লাজমা স্তরের উপর গবেষণা চালানোও সেই অভিযানের উদ্দেশ্য।
চিনের বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন মোট ১৮টি পেলোড নিয়ে চাঁদের উদ্দেশে রওনা দেবে ‘চাংই-৭’। সেই পেলোডগুলির মধ্যে থাকবে অত্যাধুনিক সব যন্ত্র।
মহাকাশযানে একটি অরবিটার, একটি ল্যান্ডার, একটি রোভার এবং একটি ছোট উড়ন্ত যান (মিনি-ফ্লাইং প্রোব)-ও থাকবে।
ল্যান্ডারটি চাঁদের দক্ষিণ মেরুর কাছে একটি গর্তে অবতরণ করবে। সেখানে এটি ক্যামেরা, রাডার, খনিজ ও জল বিশ্লেষক, স্পেকট্রোমিটার, ম্যাগনেটোমিটার-সহ একাধিক সরঞ্জাম নিয়ে গবেষণা চালাবে রোভার।
তবে, ‘চাংই-৭’ অভিযানের আগে ‘চাংই-৬’ অভিযানে যাচ্ছে চিন। ২০২৪ সালের প্রথমার্ধেই চিনের মহাকাশযান চাঁদের মাটি ছোঁবে বলে মনে করা হচ্ছে। চাঁদের বুক থেকে নমুনা সংগ্রহের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সেই মহাকাশযানকে।