আফ্রিকা থেকে মধ্যপ্রেদেশের কুনো পালপুল জাতীয় উদ্যানে নিয়ে আসা চিতাদের দেখভালের জন্য সরকারের তরফ থেকে বেশ কিছু কর্মীকে নিয়োগ করা হয়েছে। চিতাদের দেখভাল করা এবং সুবিধা-অসুবিধার দিকে নজর রাখার পাশাপাশি স্থানীয়দের চিতা সম্পর্কে সচেতন করাও এই ‘চিতা মিত্র’ কর্মীদের কাজ। এই চিতা মিত্রদের মধ্যেই আছেন রমেশ সিকারওয়ার নামে ৭২ বছর বয়সি এক ব্যক্তি। বিভিন্ন কারণে তিনি এখন খবরের শিরোনামে।
সরকার রমেশকেই সবচেয়ে যোগ্য ‘চিতা মিত্র’ হিসাবে বেছে নিয়েছে। রমেশের প্রধান কাজ হল কুনো পালপুর জাতীয় উদ্যান লাগোয়া জনবসতিপূর্ণ এলাকাগুলির মানুষজনের মধ্যে চিতা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা।
রমেশ ছিলেন মধ্যপ্রদেশের এক কুখ্যাত ডাকাত দলের সর্দার। বেশ কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে যুক্ত থাকার পর ১৯৮৪ সালে তিনি সদলবলে পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করার সিদ্ধান্ত নেন।
শোনা যায়, ডাকাত থাকাকালীন তিনি এক বার এক দিনে ১৩ জন রাখালকে খুন করেন।
পুলিশ সূত্রে খবর, রমেশের বিরুদ্ধে ৯১টি অপহরণ ও খুনের মামলা ছিল।
১৯৮৪ সালে আত্মসমর্পণ করার সময় রমেশের বয়স ছিল ৩৪। এর পর বেশ কয়েক বছর জেল খাটেন তিনি।
কী ভাবে ‘চিতা মিত্র’ হলেন রমেশ? নিয়োগ পাওয়ার পর সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রমেশ বলেন, ‘‘চিতা সম্পর্কে জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে ‘চিতা মিত্র’ হওয়ার জন্য বন বিভাগের আধিকারিকরা আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন।’’
রমেশ আরও বলেন, ‘‘এক জন ‘চিতা মিত্র’ হিসাবে চিতাদের অযথা ভয় না দেখানোর বিষয়ে আমি মানুষকে সচেতন করছি। চিতারা কখনও কোনও মানুষকে অকারণে আক্রমণ করে না। চিতা কাছাকাছি এলে নিকটতম বন আধিকারিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করার কথাও আমি স্থানীয়দের জানিয়েছি।’’
রমেশ জানান, তিনি চিতাদের নির্দিষ্ট অঞ্চলের মধ্যেই রাখার চেষ্টা করবেন। তবে নির্ধারিত স্থানের বাইরে গেলে চিতাগুলিকে তিনি ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করবেন বলেও তিনি জানান।
কুনো পালপুর জাতীয় উদ্যানে নিয়োগ করা ৪৫৭ জন ‘চিতা মিত্র’-র মধ্যে রমেশের নাম সব থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
কুনো জাতীয় উদ্যানে চিতাগুলি রক্ষার শপথ নিয়েছেন রমেশ। চিতাগুলির যাতে কোনও অসুবিধা না হয়, তা-ও তিনি নিশ্চিত করবেন বলেও জানিয়েছেন।
এই বিষয়ে রমেশ বলেন, ‘‘আমি আমার জীবন থাকতে এই চিতাদের কিছু হতে দেব না। আমি কৃতজ্ঞ যে আমাকে ‘চিতা মিত্র’ হিসাবে নিয়োগ করা হয়েছে। জাতীয় উদ্যানের আশেপাশে অনেকগুলি পরিবার বাস করে। পাশাপাশি, চোরাশিকারিদের রমরমাও এই সব এলাকায় বেশি। এর আগে দুষ্কৃতীরা বন বিভাগের ডেপুটি রেঞ্জারকে খুন করলেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।’’
বর্তমানে রমেশ জাতীয় উদ্যানের আশেপাশের বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে বেড়াচ্ছেন এবং মানুষজনকে চিতাদের সম্পর্কে ওয়াকিবহাল করাচ্ছেন। চিতা এবং চিতাবাঘের মধ্যে পার্থক্যও তিনি মানুষকে ব্যাখ্যা করছেন।
প্রসঙ্গত, ১৭ সেপ্টম্বর বিশেষ কার্গো বিমানে করে আফ্রিকার নামিবিয়া থেকে ভারতে আনা হয় আটটি চিতা।
প্রায় সাত দশক ধরে ভারতে বিলুপ্ত ছিল এশীয় চিতা। ১৯৪৭ সালে সরগুজার (বর্তমান ছত্তীসগঢ় রাজ্যে অবস্থিত) রামানুজ প্রসাদ সিংহদেওর গুলিতে কোরীয়ার শাল বনে মারা যায় ভারতের শেষ তিন চিতা। ১৯৫২ সালে তৎকালীন কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে চিতাকে বিলুপ্ত বলে ঘোষণা করা হয়। মোদী সরকারের দাবি, ভারতের অরণ্যে লুপ্ত হয়ে যাওয়া সেই চিতা ফেরানোর উদ্দেশ্যেই এই পদক্ষেপ।
প্রথমেই সরাসরি জঙ্গলে না ছেড়ে তারের বেড়ায় ঘেরা মুক্ত প্রান্তরে ছাড়া হয়েছে আট চিতাকে। যাতে তারা পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারে, তার জন্যই এই ব্যবস্থা।