১৯৫০-এর দশকে ভারত থেকে বিলুপ্ত হয়ে যায় চিতা। তাই ভারতে চিতার পর্যাপ্ত বংশবৃদ্ধি করতে আফ্রিকা থেকে আটটি চিতাকে উড়িয়ে আনা হবে ভারতে। নামিবিয়া থেকে এসে মধ্যপ্রদেশের কুনো পালপুর জাতীয় উদ্যানে ঠাঁই পাবে এই চিতাগুলি। বিশেষ ভাবে পরিবর্তিত বি-৭৪৭ জাম্বো জেট বিমানে এই চিতাগুলিকে ভারতে নিয়ে আসা হবে। ‘প্রজেক্ট চিতা’ সফল করতে ইতিমধ্যেই এই বিমান নামিবিয়ার মাটি ছুঁয়েছে। কী কী বিশেষত্ব রয়েছে এই বিমানের?
যে বি-৭৪৭ বিমানে করে চিতাগুলিকে আনা হবে তার সামনের অংশে আঁকা হয়েছে একটি চিতার মুখ।
চিতা আনার জন্য নতুন ভাবে সাজানো হয়েছে বি-৭৪৭ বিমানটির ভিতরের অংশ। বিমানের ভিতরের মূল অংশের বেশির ভাগ জায়গা ফাঁকা করে সেখানে রাখা হয় পশু রাখার খাঁচা। এই খাঁচাগুলিতে ভরেই চিতাগুলিকে ভারতে উড়িয়ে নিয়ে আসা হবে।
বিমানের ভিতরে থাকবেন এক জন পশুচিকিৎসক। যাত্রাপথে চিতাগুলির যাতে কোনও অসুবিধা না হয় তা দেখে রাখার জন্যই এই পশুচিকিৎসককে রাখা হবে বিমানের ভিতরে। প্রয়োজনে খাঁচা খুলে চিতাগুলির চিকিৎসা করার অনুমতিও দেওয়া হয়েছে ওই পশুচিকিৎসককে।
পশুচিকিৎসক ছাড়াও ওই বিমানে থাকবেন বিশেষ ভাবে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত বেশ কিছু নিরাপত্তারক্ষী।
মূলত দূরপথে যাত্রার জন্যই তৈরি করা হয়েছিল বি-৭৪৭ বিমানটি।
বি-৭৪৭ বিমান এক টানা ১৬ ঘণ্টা উড়তে পারে। অর্থাৎ নামিবিয়া থেকে ভারতে আসার সময় জ্বালানি ভরার জন্য কোথাও দাঁড়াতে হবে না এই বিমানকে। চিতাগুলিকে সুস্থ ভাবে ভারতে নিয়ে আসার জন্য এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
ভারতীয় বন বিভাগের এক জন আধিকারিক জানিয়েছেন, পুরো যাত্রাপথে চিতাগুলিকে খালি পেটে রাখা হবে। তাদের যাতে বমি বমি ভাব বা অন্য কোনও অসুবিধা না হয় তার জন্যই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলেও জানা গিয়েছে।
প্রসঙ্গত, ১৭ সেপ্টেম্বর এই কার্গো বিমানে করে রাজস্থানের জয়পুরে আটটি চিতা নিয়ে আসা হবে। এর মধ্যে রয়েছে পাঁচটি মহিলা এবং তিনটি পুরুষ চিতা৷ তার মধ্যে আবার দু’টি চিতা সম্পর্কে সহোদর। এক জোটে শিকার করাই নাকি তাদের অভ্যাস।
এর পর হেলিকপ্টার করে জয়পুর থেকে মধ্যপ্রদেশের শেওপুর এলাকার কুনো জাতীয় উদ্যানে নিয়ে যাওয়া হবে এই চিতাগুলিকে। সেখানেই তারা স্থায়ী ভাবে বসবাস করবে।
১৭ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর জন্মদিন। চিতাগুলিকে স্বাগত জানাতে জন্মদিনের দিন নিজে জাতীয় উদ্যানে উপস্থিত থাকবেন মোদী। নিজে হাতে চিতাগুলিকে ছে়ড়ে আসবেন সেখানে। মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহান মঙ্গলবার এ কথা জানিয়েছেন।
প্রথমেই সরাসরি জঙ্গলে না ছেড়ে তারের বেড়ায় ঘেরা মুক্ত প্রান্তরে ছাড়া হবে আটটি চিতাকে। যাতে তারা পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারে, সেই উদ্দেশ্যেই এই ব্যবস্থা।
কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশ মন্ত্রক সূত্রের খবর, দক্ষিণ আফ্রিকা অথবা নামিবিয়া থেকে আগামী পাঁচ বছর ধরে ধাপে ধাপে ৫০টি চিতা ভারতে আনা হবে। এর মধ্যে অক্টোবর মাসে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আরও ১২টি চিতা আনা হবে বলেও জানা গিয়েছে। যে চিতাগুলি আনা হবে তাদের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ অল্প বয়স্ক চিতা।
অতিরিক্ত শিকার এবং বাসস্থান ধ্বংসের মতো কারণে ভারত থেকে ধীরে ধীরে নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে বিড়াল প্রজাতির এই প্রাণী।
১৯৪৭ সালে সরগুজার (বর্তমান ছত্তীসগঢ় রাজ্যে অবস্থিত) রামানুজ প্রসাদ সিংহদেওর গুলিতে কোরিয়ার শাল বনে মারা যায় ভারতের শেষ তিন চিতা।
পাঁচ বছর পর ১৯৫২ সালে তৎকালীন কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে চিতাকে বিলুপ্ত বলে ঘোষণা করা হয়। সেই সময় থেকে গত সাত দশক ধরে চিতা ছিল না এ দেশে। মোদী সরকারের দাবি, ভারতের অরণ্যে লুপ্ত হয়ে যাওয়া সেই চিতা ফেরানোর উদ্দেশ্যেই এই পদক্ষেপ।
তবে ভারতে যে চিতাগুলি ফিরিয়ে আনা হচ্ছে সেগুলি আফ্রিকার চিতা। কেবল মাত্র ইরানেই এখনও পর্যন্ত এশীয় চিতার দেখা মেলে।
প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের আমলে এক বার ইরান থেকে এশীয় চিতা ভারতে নিয়ে আসার তোড়জোড় শুরু হলেও পরে সেই পরিকল্পনা ভেস্তে যায়।