বুধবার সন্ধ্যা ৬টা ৪ মিনিটে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে পাখির পালকের মতো অবতরণ (সফ্ট ল্যান্ডিং) করবে চন্দ্রযান-৩। গত ১৪ জুলাই পৃথিবীর উপগ্রহটির উদ্দেশে পাড়ি দেওয়ার পর একাধিক ধাপ পেরিয়ে অবশেষে ‘হাতে চাঁদ’ পেতে চলেছে চন্দ্রযান।
ভারতের এই তৃতীয় চন্দ্র অভিযানের নেপথ্যে যেমন রয়েছে বিজ্ঞানীদের কঠোর পরিশ্রম, ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরোর সুচারু ব্যবস্থাপনা, তেমনই রয়েছে সরকারি, বেসরকারি ১০টি সংস্থার সহযোগিতা।
তিন বছর ধরে এই সংস্থাগুলি প্রযুক্তিগত দিক থেকে নানা ভাবে সাহায্য জুগিয়ে এসেছে তৃতীয় চন্দ্রযানকে। লক্ষণীয় ভাবে গত তিন বছরে ভাল রকম আয়ের মুখ দেখেছে এই ১০টি ব্যবসায়িক সংস্থা।
সংস্থাগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা হিন্দুস্তান অ্যারোনটিক্স লিমিটেড (হ্যাল), ভেল। ১০ সংস্থার তালিকায় রয়েছে পরিকাঠামো নির্মাণশিল্পে ভারত তথা বিশ্বের অন্যতম অগ্রণী সংস্থা লারসেন অ্যান্ড টুবরো (এল অ্যান্ড টি)-ও।
এ ছাড়াও রয়েছে মিশ্র ধাতু নিগম লিমিটেড, ওয়ালচাঁদনগর ইন্ডাস্ট্রি, সেন্টাম ইলেকট্রনিকস, লিন্ডে ইন্ডিয়া, পরশ ডিফেন্স অ্যান্ড স্পেস টেকনোলজির মতো সংস্থা।
১০ সংস্থার তালিকায় রয়েছে এমটিএআর টেকনোলজিস এবং গোদরেজ অ্যারোস্পেস সংস্থাও। ব্যবসায়িক সংস্থা গোদরেজ ইন্ডাস্ট্রিজ়েরই একটি শাখা গোদরেজ অ্যারোস্পেস।
ইসরোর একটি সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, চন্দ্রযানের গতিবর্ধক যন্ত্রপাতির জোগান দিয়েছে এল অ্যান্ড টি সংস্থা। মূলত হেড এন্ড সেগমেন্ট, মিডল সেগমেন্ট এবং নজ়েল বাকেট ফ্লাঙ্গ পোয়াইয়ের কারখানায় পরীক্ষা করে দেখার পর তা তুলে দেওয়া হয়েছে ইসরোর হাতে।
রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ভেল চন্দ্রযানের অত্যাধুনিক ব্যাটারির জোগান দিয়েছে। ভেলের গবেষণা সংক্রান্ত শাখা ওয়েল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউট দু’টি ধাতু দিয়ে নির্মিত বিশেষ অ্যাডাপটারের জোগান দিয়েছে। ফলে অতি শীতল আবহাওয়াতেও চন্দ্রযানের জ্বালানি জমাট বাঁধেনি।
চন্দ্রযানকে যে রকেটটির মাধ্যমে পাঠানো হয়েছিল, সেটি একাধিক মিশ্র ধাতুর সমন্বয়ে তৈরি করা হয়েছিল। এই ব্যাপারে সাহায্য করেছে মিশ্র ধাতু নিগম লিমিটেড।
এ ছাড়াও হ্যাল চন্দ্রযানের একাধিক ছোট-বড় যন্ত্রপাতির জোগান দিয়েছে। উল্লেখ্য যে, রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা নিউ স্পেস ইন্ডিয়া লিমিটেডের তরফে হ্যাল এবং এল অ্যান্ট টি যৌথ ভাবে পাঁচটি স্যাটেলাইট তৈরির বরাত পেয়েছে।
‘হিন্দুস্তান টাইমস’-এর প্রতিবেদন অনুসারে ওয়ালচাঁদনগর ইন্ডাস্ট্রিও একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে চন্দ্রযানকে সহায়তা জুগিয়েছে। অত্যধিক চাপেও যাতে জ্বালানিভর্তি ট্যাঙ্কে কোনও সমস্যা দেখা না দেয়, তার জন্যই বিশেষ প্রযুক্তিগত সাহায্য জুগিয়েছে এই সংস্থা।
ইসরোর তৃতীয় চন্দ্র অভিযানে মোট খরচ হয়েছে ৬১৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে শুধু সফল ভাবে উৎক্ষেপণ করতেই খরচ হয়েছে ৩৬৫ কোটি টাকা। ল্যান্ডার বিক্রম এবং রোভার প্রজ্ঞানের জন্য খরচ হয়েছে ২৫০ কোটি টাকা।
২০০৮ সালে ইসরোর প্রথম চন্দ্রাভিযানে খরচ হয়েছিল ৩৬৫ কোটি টাকা। ২০১৯ সালে চাঁদে চন্দ্রযান-৩ পাঠাতে খরচ হয়েছিল ৯৭৮ কোটি টাকা। সেই অভিযান অবশ্য ব্যর্থ হয়।
‘হাতে চাঁদ’ পাওয়াতেই সব শেষ নয়, আগামী দিনেও মহাকাশ অভিযানে একাধিক পরিকল্পনা রয়েছে ইসরোর। সূর্য সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ‘আদিত্য’কে পাঠাচ্ছে তারা। এই অভিযানের প্রস্তাবিত খরচমূল্য ৩৭৮ কোটি টাকা।
২০২৪ সালে লালগ্রহে মঙ্গলযান-৩ পাঠাতে চলেছে ইসরো। এই অভিযানের সম্ভাব্য খরচমূল্য এখনও পর্যন্ত জানানো হয়নি। এই সব অভিযানেও একাধিক সংস্থা ইসরোর দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছে একটি সূত্র।
বুধবার সন্ধ্যায় চাঁদের মাটিতে নামবে ল্যান্ডার বিক্রম। বিক্রমের পেট থেকে ছ’টি চাকায় ভর করে নেমে আসবে রোভার প্রজ্ঞান। চাঁদের মাটি থেকে তথ্য সংগ্রহ করে ল্যান্ডার মারফত পৃথিবীতে বার্তা পাঠাবে প্রজ্ঞান।