বুধবার সন্ধ্যায় সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। গোটা দেশ যেন বিশেষ ওই মুহূর্তের জন্য অপেক্ষা করে রয়েছে। ঘড়ির কাঁটা যত এগোচ্ছে, তত বিশ্ববাসীর কৌতূহল বৃদ্ধি পাচ্ছে। চন্দ্রযান ৩-এর অভিযান সফল হবে কি না সে দিকে নজর রয়েছে সকলের। কিন্তু চাঁদের বুকে নীল আর্মস্ট্রং পা রাখার আগেই সেখানে পৌঁছে গিয়েছিল বলিউড, তা জানেন কি?
১৯৬৯ সালে অ্যাপোলো ১১ নামে আমেরিকার মহাকাশযান সর্বপ্রথম চাঁদের মাটির নাগাল পায়। মহাকাশযানে ছিলেন নীল আর্মস্ট্রং, মাইকেল কলিন্স এবং বাজ় আলড্রিন। কিন্তু চাঁদের দর্শন তার আগেই পেয়েছিলেন হিন্দি ছবির দর্শকেরা।
মহাকাশ বিজ্ঞানীদের সঙ্গে নিয়ে নয়, বরং বলিপাড়ার অভিনেতাদের সঙ্গী করে ‘চাঁদে’ পাড়ি দিয়েছিল বলিউড। ১৯৬৭ সালে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছিল হিন্দি ফিল্মজগতের কল্পবিজ্ঞান ঘরানার প্রথম ছবি ‘চাঁদ পর চড়াই’।
‘চাঁদ পর চড়াই’ ছবির মূল চিত্রনাট্য বোনা হয়েছে চাঁদের উদ্দেশে পাড়ি দেওয়া এক মহাকাশযান এবং দুই মহাকাশচারীর গল্পের উপর ভিত্তি করে।
কল্পবিজ্ঞান ঘরানার ‘চাঁদ পর চড়াই’ ছবিতে দেখানো হয়েছে, আনন্দ এবং তার সহ-মহাকাশচারী ভগু মহাকাশযানের মাধ্যমে চাঁদের মাটিতে নামে।
চাঁদের মাটি স্পর্শ করার কয়েক মুহূর্তের মধ্যে নানা রকম বিপদের সম্মুখীন হয় আনন্দ এবং ভগু। ভিন্গ্রহীদের পাশাপাশি রোবটের সঙ্গেও সংঘর্ষ হয় তাদের।
‘চাঁদ পর চড়াই’ ছবিতে আনন্দের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন বলি অভিনেতা দারা সিংহ। ভগুর চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছিল ভগবান দাদাকে।
দারার পাশাপাশি ‘চাঁদ পর চড়াই’ ছবিতে অভিনয় করেছিলেন আনওয়ার হুসেন এবং বলি অভিনেত্রী পদ্মা খন্না। বলিপাড়ার একাংশের দাবি, সময়ের চেয়ে অনেকটাই এগিয়ে ছিল ওই ছবি।
ষাটের দশকে মুক্তি পেয়েছিল ‘চাঁদ পর চড়াই’। সেই সময় ইন্টারনেট আবিষ্কারই হয়নি। অথচ ছবিতে তৎকালীন সময়ের চেয়ে বহু উন্নত প্রযুক্তি দেখানো হয়েছে।
‘চাঁদ পর চড়াই’ ছবিতে সিমি নামের এক চরিত্রকে ভিডিয়ো কল প্রযুক্তি ব্যবহার করে কথা বলতে দেখা গিয়েছে। শুধু তাই নয়, তা দেখার জন্য বাক্সের মতো আকারের একটি জিনিসেরও ব্যবহার দেখানো হয় এই ছবিতে। ‘গুগ্ল গ্লাস’ ব্যবহার করে আমরা যে ধরনের সুবিধা পেয়ে থাকি, বাক্সের মতো জিনিসটিও সেই একই রকম ভাবে কাজ করছিল।
আধুনিক যুগে যে ধরনের প্রিন্টার, স্ক্যানার, ডিজিটাল ক্যামেরা এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার হয়, ‘চাঁদ পর চড়াই’ ছবিতেও সেগুলি দেখানো হয়েছে।
পাঁচ দশক আগে মুক্তি পাওয়া ‘চাঁদ পর চড়াই’ ছবিতে দেখানো হয়েছে ইমেল প্রযুক্তির ব্যবহার। অথচ ইন্টারনেট এসেছে তার বহু বছর পর।
টিপি সুন্দরমের পরিচালনায় মুক্তি পেয়েছিল ‘চাঁদ পর চড়াই’ ছবিটি। এই ছবির প্রযোজনার দায়িত্বেও ছিলেন তিনি।
তবে ‘চাঁদ পর চড়াই’ ছবির চিত্রনাট্যকার হিসাবে যিনি সকলকে চমকে দিয়েছিলেন, ছবিমুক্তির পর তাঁর নামের উল্লেখই কোথাও করা হয়নি।
বলিপাড়ার অন্দরমহল সূত্রে খবর, ‘চাঁদ পর চড়াই’ ছবির চিত্রনাট্যকারের দায়িত্বে ছিলেন বালকৃষ্ণ মঞ্জ।
হিন্দির পাশাপাশি ইংরেজি ভাষাতেও মুক্তি পেয়েছিল ‘চাঁদ পর চড়াই’। তবে অন্য নামে। ‘ট্রিপ টু মুন’ নামে মুক্তি পেয়েছিল সেই ছবি।
‘চাঁদ পর চড়াই’ ছবিটি চন্দ্রযানের কাহিনির উপর নির্মিত বলিউডের সর্বপ্রথম ছবি। বক্স অফিসে থেকে চুটিয়ে উপার্জন না করলেও এই ছবি মাঝারি ব্যবসা করেছিল।
ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো জানিয়েছে, বুধবার সন্ধ্যা ৬টা ৪ মিনিটে চাঁদের দক্ষিণ মেরুর মাটি স্পর্শ করতে পারে চন্দ্রযান ৩-এর ল্যান্ডার বিক্রম। তার সঙ্গে চন্দ্রপৃষ্ঠে নামবে রোভার প্রজ্ঞানও।
চাঁদের বুকে অবতরণের সেই দৃশ্য বুধবার বিকেল ৫টা ২০ মিনিট থেকে সরাসরি সম্প্রচার হবে ইসরোর ওয়েবসাইট, ফেসবুক পেজ, ইউটিউবে।
গত রবিবার চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে মহাকাশযান নামাতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছে রাশিয়া। চাঁদের মাটিতে ভেঙে পড়ে লুনা-২৫। তবে ভারতের চন্দ্রাভিযানের সাফল্য নিয়ে আশাবাদী ইসরোর বিজ্ঞানী থেকে গোটা দেশবাসী।
চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে এর আগে কোনও দেশই মহাকাশযান পাঠাতে পারেনি। ফলে বুধবারের পরীক্ষায় ইসরো সফল হলে ইতিহাস তৈরি করবে ভারত।