পর্দায় যে অভিনেতার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ দৃশ্যে অভিনয় করে চর্চায় এসেছিলেন, সেই অভিনেতাকেই প্রতিবেশী বানিয়ে ফেললেন বলি অভিনেত্রী তৃপ্তি দিমরি। চলতি মাসে কোটি কোটি টাকা খরচ করে একটি বিলাসবহুল বাংলো কিনেছেন তিনি।
১৯৯৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি উত্তরাখণ্ডে জন্ম তৃপ্তির। বাবা-মা, ভাই এবং বোনের সঙ্গে সেখানেই কাটিয়েছেন তিনি। মুম্বইয়ে একটি ফ্ল্যাটে থাকলেও উত্তরাখণ্ডের বাড়িটিই মনের মতো সাজিয়েছিলেন তিনি।
চলতি মাসে মুম্বইয়ের বিলাসবহুল এলাকায় একটি বাংলো কিনেছেন তৃপ্তি। মুম্বইয়ের বান্দ্রার পশ্চিমে অধিকাংশ বলি তারকার আস্তানা। শাহরুখ খান, সলমন খান থেকে শুরু করে প্রবীণ অভিনেত্রী রেখার বাংলো ওই এলাকায়।
আলিয়া ভট্ট এবং রণবীর কপূর— বলিপাড়ার জনপ্রিয় তারকা-দম্পতিও থাকেন বান্দ্রার পশ্চিমে। সন্দীপ রেড্ডি ভঙ্গা পরিচালিত ‘অ্যানিম্যাল’ ছবিতে রণবীরের সঙ্গে শয্যাদৃশ্যে অভিনয় করে যতটা চর্চিত হয়েছেন, সাত বছর অভিনয়জগতের সঙ্গে যুক্ত থেকেও তত বেশি চর্চিত হননি তৃপ্তি।
রণবীরের বাড়ির কাছাকাছিই নাকি বাংলো কিনেছেন তৃপ্তি। তা নিয়ে আবার নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে বলিপাড়ায়।
বলিপাড়া সূত্রে খবর, ২,২২৬ বর্গফুট জায়গা জুড়ে তিন তলার বাংলো তৃপ্তির। ১৪ কোটি টাকা খরচ করে বাংলোটি কিনেছেন অভিনেত্রী।
চলতি মাসেই চুক্তিপত্রে সই করেন তৃপ্তি। জানা গিয়েছে, সেই সময় ৭০ লক্ষ টাকার স্ট্যাম্প এবং রেজিস্ট্রেশন ফি বাবদ ৩০ হাজার টাকা দিয়েছেন অভিনেত্রী।
উত্তরপ্রদেশের একটি স্কুল থেকে পড়াশোনা শেষ করে দিল্লি চলে যান তৃপ্তি। দিল্লির কলেজ থেকে ইংরেজি নিয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করে পুণের কলেজ থেকে অভিনয় নিয়ে প্রশিক্ষণ নেন তিনি।
ছোট থেকেই অভিনয়ের প্রতি আগ্রহ ছিল তৃপ্তির। মডেল হিসাবে কেরিয়ার শুরু করেন তিনি। বিভিন্ন নামী সংস্থার বিজ্ঞাপনে অভিনয় করতে দেখা যায় তাঁকে।
২০১৭ সালে বলিপাড়ায় আত্মপ্রকাশ করেন তৃপ্তি। ২০১৭ সালে শ্রেয়স তলপড়ের পরিচালনায় ‘পোস্টার বয়’ ছবির মাধ্যমে অভিনয় শুরু তাঁর। ছবিতে সানি দেওল, ববি এবং শ্রেয়সের সঙ্গে অভিনয়ের সুযোগ পান তৃপ্তি। কিন্তু ছবিটি বক্স অফিসে সফল হয়নি।
২০১৭ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘মম’ ছবিতে শ্রীদেবীর সঙ্গে অভিনয়ের সুযোগ পান তৃপ্তি। তবে পর্দায় তাঁর চরিত্রের সময়সীমা ছিল স্বল্প।
২০১৮ সালে মুক্তি পায় তৃপ্তি অভিনীত ‘লায়লা মজনু’। পরিচালক ছিলেন সাজিদ আলি। তৃপ্তির বিপরীতে অভিনয় করেন অবিনাশ তিওয়ারি। ছবিটি বাণিজ্যিক ভাবে সফল না হলেও অবিনাশ এবং তৃপ্তির জুটি দর্শকের কাছে প্রশংসা পায়।
২০২০ সালে ওটিটির পর্দায় মুক্তি পায় ‘বুলবুল’। প্রযোজক ছিলেন অনুষ্কা শর্মা এবং ভাই কর্নেশ শর্মা। বাঙালি বধূর চরিত্রে তৃপ্তির অভিনয় নজরে আসে। এই ছবিতে তৃপ্তির বিপরীতে অভিনয় করতে দেখা যায় অবিনাশকে। তা ছাড়া রাহুল বসু, পাওলি দাম এবং পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়ের মতো বাঙালি তারকারাও এই ছবিতে অভিনয় করেন।
২০২২ সালে ওটিটি প্ল্যটফর্মে মুক্তি পায় ‘কলা’। ‘বুলবুল’-এর মতো এই ছবির প্রযোজকও অনুষ্কা শর্মা। ‘কলা’ ছবিতে অভিনয় করতে দেখা যায় প্রয়াত অভিনেতা ইরফান খানের পুত্র বাবিল খান এবং বাঙালি অভিনেত্রী স্বস্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়কে।
কেরিয়ারের ঝুলিতে চার-পাঁচটি ছবি। ২০২৩ সালের শেষ মাসে তৃপ্তির কেরিয়ারে রাতারাতি বদল ঘটে। ‘অ্যানিম্যাল’ ছবিতে পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। কিন্তু তাঁর চরিত্রটি ছিল গুরুত্বপূর্ণ।
‘অ্যানিম্যাল’ ছবিতে অভিনয় করার পর জাতীয় ‘ক্রাশ’-এ পরিণত হন তৃপ্তি। রাতারাতি জনপ্রিয়তাও পেয়ে যান তিনি।
বলিপাড়া সূত্রে খবর, ‘অ্যানিম্যাল’ ছবিতে অভিনয় করে ৪০ লক্ষ টাকা পারিশ্রমিক পেয়েছেন তৃপ্তি।
কানাঘুষো শোনা যায়, তৃপ্তির মোট সম্পত্তির পরিমাণ ২০ থেকে ৩০ কোটি টাকা। বাংলোর পাশাপাশি একটি বিলাসবহুল গাড়ি রয়েছে তাঁর।
বলিপাড়ার অন্দরমহল সূত্রে খবর, পোর্শের একটি গাড়ি রয়েছে তৃপ্তির। এই গাড়িটির বাজারমূল্য এক কোটি টাকার কাছাকাছি।
বলিপাড়া সূত্রে খবর, ইনস্টাগ্রামে কোনও নামী সংস্থার প্রচার করতে পোস্ট প্রতি ৬০ থেকে ৯০ লক্ষ টাকা পারিশ্রমিক আদায় করেন তৃপ্তি। বর্তমানে ইনস্টাগ্রামের পাতায় অভিনেত্রীর অনুগামীর সংখ্যা ৫১ লক্ষের গণ্ডি পার করে ফেলেছে।
ইতিমধ্যে কার্তিক আরিয়ান এবং বিদ্যা বালনের সঙ্গে ‘ভুল ভুলাইয়া ৩’ ছবির শুটিং করেছেন তৃপ্তি। এ ছাড়াও কর্ণ জোহরের পরিচালনায় ‘ব্যাড নিউজ়’ ছবিতে ভিকি কৌশল এবং অ্যামি বির্কের সঙ্গে দেখা যাবে অভিনেত্রীকে। এখানেই শেষ নয়, ‘ধড়ক ২’ ছবিতে সিদ্ধার্থ চতুর্বেদীর সঙ্গে অভিনয় করবেন তিনি।
রাজকুমার রাওয়ের সঙ্গেও একটি ছবিতে অভিনয় করছেন তৃপ্তি। নাম ‘ভিকি বিদ্যা কি উওহওয়ালা ভিডিয়ো’। রোম্যান্টিক কমেডি ঘরানার এই ছবিটির মুক্তি পাওয়ার কথা পরের বছর।
অভিনয়ের চেয়ে সম্পর্কের কারণে অনেক বেশি আলোচিত হয়েছেন তৃপ্তি। কানাঘুষো শোনা যায়, অনুষ্কার ভাই কর্নেশের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন তৃপ্তি। ‘বুলবুল’ এবং ‘কলা’ ছবির প্রযোজক ছিলেন কর্নেশ।
২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর কর্নেশের সঙ্গে একটি ঘনিষ্ঠ ছবি সমাজমাধ্যমে প্রকাশ করেন তৃপ্তি। জানান নিজেদের সম্পর্কের কথা। সম্পর্ক বহু দিন ছন্দে বইলেও তার ছন্দপতন হয়।
বলিপাড়ার অন্দরমহলে কান পাতলে শোনা যায়, সমাজমাধ্যমে একে অন্যকে আনফলো করে দেন তৃপ্তি এবং কর্নেশ। অদ্ভুত একটি পোস্টও দেন তৃপ্তি। সেখানে কর্নেশের উদ্দেশে তিনি লেখেন, ‘‘লোকে অনেক কথা বলবে। কিছু যায়-আসে না। যাতে তুমি ভাল থাকো, তা-ই করো।’’
যদিও তৃপ্তির সঙ্গে সম্পর্ক ভেঙে যাওয়া নিয়ে কর্নেশ কোনও মন্তব্য করেননি। তবে তৃপ্তি বুঝিয়ে দিচ্ছেন, আপাতত কেরিয়ারের দিকেই নজর দিতে চান তিনি। ‘অ্যানিম্যাল’-এর সাফল্য, হাতে একগুচ্ছ ছবির কাজ এবং নতুন বাংলো কেনার ঘটনা অন্তত তারই আভাস দিচ্ছে।