বলি অভিনেত্রী পুনম ধিলঁ কেরিয়ারে যত দ্রুত সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠেছিলেন, ঠিক সেই গতিতেই সিঁড়ি বেয়ে নেমে এসেছেন। কেরিয়ারে পতনের কারণ তাঁর অভিনয় ছিল না অবশ্য। বার বার পরকীয়া সম্পর্কে জড়ানোর কারণে নিজের কেরিয়ারে ক্ষতি করে বসেন পুনম। এমনকি যাঁকে নিজের ‘গুরু’ মনে করতেন তাঁকেও ঠকিয়ে ফেলেন অভিনেত্রী।
পুনম বুঝতে পেরেছিলেন যে, অভিনয়ে নামার প্রথম ধাপ হল মডেলিং। তাই মডেলিং পেশায় নামার পাশাপাশি সৌন্দর্য প্রতিযোগিতাতেও অংশগ্রহণ করতে শুরু করেছিলেন তিনি। বিভিন্ন নামী পত্রিকার প্রচ্ছদের জন্য ফোটোশুট করছিলেন পুনম।
এক পত্রিকার প্রচ্ছদেই পুনমের ছবি প্রথম দেখেছিলেন বলিপাড়ার অন্যতম প্রযোজক এবং পরিচালক যশ চোপড়া। পরবর্তী ছবির অভিনেত্রী হিসাবে পুনমকেই পছন্দ করেন যশ। ‘ত্রিশূল’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য পুনমকে প্রস্তাব দেন তিনি।
১৯৭৮ সালে মুক্তি পায় ‘ত্রিশূল’ ছবিটি। এই ছবিতে সঞ্জীব কুমার, শশী কপূর, অমিতাভ বচ্চন, রাখী, হেমা মালিনী, ওয়াহিদা রহমান এবং প্রেম চোপড়ার মতো তারকাদের সঙ্গে কাজ করেন পুনম। কেরিয়ারের প্রথমে তারকাসমন্বিত ছবিতে অভিনয় করে বলিপাড়ায় পরিচিতি পেয়ে যান পুনম।
যশের হাত ধরে বলিউডে পা রেখেছিলেন পুনম। তাই যশকে নিজের ‘গুরু’ হিসাবে শ্রদ্ধা করতেন তিনি। যশও চাইতেন যে, তিনি যেন পুনমের কেরিয়ার তৈরি করে দেন। এত কম বয়সে ইন্ডাস্ট্রিতে এসে যেন অন্য দিকে মন না যায়, পুনমকে সেই নির্দেশই দিয়েছিলেন যশ। কিন্তু ‘গুরু’র নির্দেশ অমান্য করেন পুনম।
‘ত্রিশূল’ ছবির শুটিংয়ের সেটে যশের সহকারী হিসাবে উপস্থিত থাকতেন রমেশ তালওয়ার। শুটিংয়ের সময় পুনম কোনও ভুল করে ফেললে রমেশ সবসময় তাঁকে বন্ধুর মতো বোঝাতেন। পুনমের সঙ্গে বোঝাপড়াও ভাল ছিল রমেশের।
রমেশ নাকি বার বার যশের কাছে গিয়ে পুনমের ব্যাপারে প্রশংসা করতেন। রমেশ এবং পুনম দু’জনকেই সেটের বাইরে বিভিন্ন জায়গায় একসঙ্গে দেখা যেত। তাঁদের সম্পর্ক নিয়ে বলিপাড়ায় খবর চালাচালি হলেও দু’জনেই তা মিথ্যা বলে হাওয়ায় উড়িয়ে দিতেন।
বলিপাড়ায় কানাঘুষো শোনা যায় যে, রমেশ নাকি পুনমকে সকলের আড়ালে বিয়েও করে নিয়েছিলেন। দু’জনে একসঙ্গে থাকবেন বলে মুম্বইয়ের জুহুতে পুনমের নামে একটি ফ্ল্যাটও কিনেছিলেন রমেশ।
রমেশ এবং পুনমের প্রেমকাহিনি আড়ালে আড়ালে বোনা চলছিল। কিন্তু তাঁদের পাকা ধানে মই দিলেন বলিপাড়ার এক জনপ্রিয় অভিনেতা। ১৯৮০ সালে রমেশের সঙ্গে পুনমের সম্পর্কের কথা জনসমক্ষে বলে ফেলেন ঋষি কপূর।
১৯৮০ সালে ‘ইয়ে ওয়াদা রহা’ ছবির জন্য ফোটোশুট করছিলেন ঋষি এবং পুনম। ভাল ছবি তুলবেন বলে আলোকচিত্রীরা ঋষিকে অনুরোধ করেন পুনমকে জড়িয়ে ধরতে। আলোকচিত্রীদের এমন দাবি শুনে চিৎকার করে ওঠেন ঋষি।
ঋষি আলোকচিত্রীদের উদ্দেশে চিৎকার করে বলেন, ‘‘পাগল হয়েছ নাকি তোমরা? ওর কাছাকাছি যাব আমি! ও তো রমেশ তালওয়ারের নিজস্ব সম্পত্তি।’’ অভিনেতার মুখে এমন কথা শুনে সকলে চমকে যান। তড়িৎ গতিতে এই ঘটনা বলিপাড়ায় ছড়িয়ে পড়ে।
রমেশ এবং পুনমের পরকীয়ার কথা বলিপাড়ায় আর কারও জানতে বাকি থাকে না। যশও এর ব্যতিক্রম নন। কেরিয়ারের দিকে মন না দিয়ে পুনম যে তাঁরই সহকারীর সঙ্গে লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেম করছিলেন তা শুনে পুনমের প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে যান যশ।
পুনমকে নিজের কন্যার মতো দেখতেন যশ। তাঁর নির্দেশ অমান্য করেছেন বলে নিজের প্রতিজ্ঞা থেকেও সরে দাঁড়ান যশ। পুনমের সঙ্গে আর কোনও ছবিতে কাজ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি।
যশ যে পুনমের প্রতি রেগে গিয়েছিলেন, তা সবার নজরে ধরা পড়ে। কিন্তু যশের প্রতিক্রিয়ার অন্য অর্থ বার করেন বলিপাড়ার সমালোচকেরা। এমনকি, যশের সঙ্গে পুনমের বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ক রয়েছে বলেও খবর রটে যায়।
যশের সঙ্গে সম্পর্কে থাকার মিথ্যা খবর রটে যাওয়ার পর পুনম নিজে থেকেই রমেশের সঙ্গে সম্পর্কে ইতি টানেন। রমেশও আর যশের সঙ্গে কোনও ছবিতে সহকারী হিসাবে কাজ করেননি।