নব্বইয়ের দশকে বলিপাড়ায় আত্মপ্রকাশ করেছিলেন অভিনেত্রী। বলি অভিনেত্রী মাধুরী দীক্ষিতের সঙ্গে মুখের মিল রয়েছে তাঁর। বলিউডের জনপ্রিয় ছবিনির্মাতা রামগোপাল বর্মার একাধিক ছবিতে অভিনয়ও করেছেন তিনি। কিন্তু হিন্দি ফিল্মজগৎ থেকে হঠাৎ কেন উধাও হয়ে গেলেন অন্তরা মালি?
১৯৭৫ সালের ১ জুলাই মহারাষ্ট্রের মুম্বইয়ে জন্ম অন্তরার। তাঁর বাবা জগদীশ মালি বলিউডের খ্যাতনামী চিত্রগ্রাহকশিল্পী। রেখা, অনুপম খের, মনীষা কৈরালা, ইরফান খান, শাবানা আজমির মতো তারকাদের ছবি তুলেছেন জগদীশ।
মুম্বইয়ে বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকতেন অন্তরা। সেখানেই স্কুল-কলেজের পড়াশোনা শেষ করেন তিনি। ১৯৯৮ সালে ‘ঢুন্ডতে রহে যাওগে!’ নামের একটি হিন্দি ছবির মাধ্যমে অভিনয়জগতে পা রাখেন অন্তরা।
কেরিয়ারের প্রথম ছবিতেই অমর উপাধ্যায়, নাসিরুদ্দিন শাহ, সতীশ শাহ, অমরীশ পুরী, প্রেম চোপড়া, জাভেদ জাফ্রি, শম্মি কপূরের মতো অভিনেতাদের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পান অন্তরা। কিন্তু সেই ছবি বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়ে।
হিন্দি ছবির মাধ্যমে কেরিয়ার শুরু করলেও ১৯৯৯ সালে রামগোপাল বর্মা পরিচালিত ‘প্রেম কথা’ নামের একটি তেলুগু ছবিতে অভিনয় করেন অন্তরা। এক বছর পর একটি মালয়ালম ছবিতে অভিনয় করতে দেখা যায় তাঁকে।
কখনও রামগোপালের পরিচালিত হিন্দি ছবিতে, কখনও বা তাঁর প্রযোজিত ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ পেতেন অন্তরা। ‘মস্ত’, ‘খিলাড়ি ৪২০’, ‘কোম্পানি’, ‘নাচ’, রোড’ এবং ‘ডরনা মানা হ্যায়’-এর মতো একাধিক হিন্দি ছবিতে অভিনয় করেন তিনি।
একাধিক হিন্দি ছবিতে অভিনয় করলেও কেরিয়ারে সাফল্যের স্বাদ সে ভাবে উপভোগ করতে পারেননি অন্তরা। বলিপাড়ার একাংশের দাবি, হুবহু বলি অভিনেত্রী মাধুরী দীক্ষিতের মতো দেখতে ছিলেন অন্তরা।
২০০৩ সালে ‘ম্যায় মাধুরী দীক্ষিত বননা চাহতা হু’ নামে একটি হিন্দি ছবিতে অভিনয় করতে দেখা যায় অন্তরাকে। এই ছবিতে অভিনয়ের পর চর্চা শুরু হয় অভিনেত্রীকে ঘিরে।
অভিষেক বচ্চন, বিবেক ওবেরয়, তুষার কপূর, আফতাব শিবদাসানি, রীতেশ দেশমুখের মতো অভিনেতাদের সঙ্গে অভিনয় করার সুযোগ পান অন্তরা। কিন্তু ২০০৫ সালের পর বলিপাড়া থেকে হঠাৎ উধাও হয়ে যান তিনি।
২০০৫ সালে ‘মিস্টার ইয়া মিস্’ নামের ছবিতে অভিনয় করেন অন্তরা। এই ছবির পরিচালনা এবং চিত্রনাট্য বুননের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। প্রযোজকের আসনে দেখা গিয়েছিল রামগোপাল বর্মাকে।
কিন্তু ‘মিস্টার ইয়া মিস্’ ছবিটি বক্স অফিসে সাড়া ফেলতে ব্যর্থ হয়। তার পরেই বলিপাড়া থেকে যেন হঠাৎ হারিয়ে যান অন্তরা। কোনও ছবিতে অভিনয় করতে দেখা যায়নি তাঁকে।
বলিপা়ড়া সূত্রে খবর, অভিনয়জগৎ থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়ে ২০০৯ সালে চে কুরিয়েনের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধেন অন্তরা। অভিনয়ের সঙ্গে যুক্ত নন চে। সর্বভারতীয় এক পত্রিকার সম্পাদক হিসাবে জীবিকা নির্বাহ করেন তিনি।
বিয়ের এক বছর পর আবার বড় পর্দায় ফিরে যান অন্তরা। ২০১০ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘...অ্যান্ড ওয়ান্স এগেন’ ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ পান তিনি। অমল পালেকর পরিচালিত এই ছবিতে অভিনয় করেন রজত কপূর এবং বাঙালি অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত।
‘...অ্যান্ড ওয়ান্স এগেন’ ছবিতে এক সন্ন্যাসিনীর চরিত্রে অভিনয় করেন অন্তরা। চিত্রনাট্যের প্রয়োজনে অভিনয়ের জন্য মাথা মুড়িয়ে ফেলতে হয় অন্তরাকে। কিন্তু নতুন করে কেরিয়ার শুরুর ক্ষেত্রে এই ছবি অন্তরার অভিনয় জীবনে বিশেষ ছাপ ফেলতে পারেননি।
বড় পর্দা থেকে সম্পূর্ণ ভাবেই নিজেকে সরিয়ে নেন অন্তরা। বিয়ের তিন বছর পর ২০১২ সালে কন্যাসন্তানের জন্ম দেন অভিনেত্রী।
বলিপাড়ায় কানাঘুষো শোনা যায়, অন্তরা যখন অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন, তখন তাঁর বাবা জগদীশকে রাস্তায় অর্ধনগ্ন অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছিল। ‘বিগ বস্’ রিয়্যালিটি শোয়ের প্রতিযোগী তথা অভিনেত্রী মিঙ্ক ব্রারের দাবি, জগদীশ রাস্তায় এমন ভাবে বসেছিলেন যে, এক নজরে তাঁকে দেখে ভিক্ষুক মনে করেছিলেন মিঙ্ক।
মিঙ্কের দাবি, জগদীশকে নাকি একটি কম্বলও দান করেছিলেন তিনি। এই ঘটনাটি পরে বলি অভিনেতা সলমন খানকে জানালে অন্তরাকে তাঁর বাবার খোঁজ দেওয়া হয়। কানাঘুষো শোনা যায়, অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন বলে নাকি বাবার দেখাশোনার দায়িত্ব নিতে চাননি অন্তরা।
এক পুরনো সাক্ষাৎকারে অন্তরা জানিয়েছিলেন, জগদীশ অত্যধিক মাত্রায় মদ্যপান করতেন। কখনও ওষুধ খেতে ভুলে গেলে বাড়ি থেকে বাইরে বেরিয়ে যেতেন তাঁর বাবা। নজর কাড়ার জন্য তিনি রাস্তায় বসে থাকেননি বলেও জানান অন্তরা।
বর্তমানে বলিপাড়া থেকে শতহস্ত দূরে স্বামী, সন্তান-সহ সংসার নিয়ে ব্যস্ত রয়েছেন অন্তরা। সমাজমাধ্যমেও তেমন সক্রিয় নন তিনি।
বলিপাড়া সূত্রে খবর, দীর্ঘ ১২ বছর বলিপাড়ার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন অন্তরা। তবে সেই ১২ বছরে মাত্র ১২টি ছবিতেই নাকি তিনি অভিনয় করেছেন তিনি।