আশি থেকে নব্বইয়ের দশকে বলিউডের যে অভিনেতারা একের পর এক হিট ছবি দর্শককে অনবরত উপহার দিয়ে এসেছেন, তাঁদের আবার একসঙ্গে পর্দায় নিয়ে আসার আয়োজন করেছেন পরিচালক বিবেক চৌহান। সানি দেওল, সঞ্জয় দত্ত, মিঠুন চক্রবর্তী এবং জ্যাকি শ্রফ— এই ৪ নায়ককে একই ছবিতে অভিনয় করতে দেখা যাবে। চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ে ছবিটি মুক্তি পাওয়ার কথা। কিন্তু এই ছবিতে মিঠুন এবং সঞ্জয়কে একসঙ্গে কাজ করতে দেখে পুরনো বিতর্ক নিয়ে জলঘোলা শুরু হয়েছে।
কেরিয়ারে ১০০টিরও বেশি ছবিতে অভিনয় করেছেন সঞ্জয়। ১৯৮১ সালে ‘রকি’ ছবির মাধ্যমে সঞ্জয়ের অভিনয়ে হাতেখড়ি। প্রথম ছবিতে কাজ করেই বাজিমাত করেছিলেন তিনি।
একই সময় জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন মিঠুন চক্রবর্তীও। ১৯৮২ সালে ‘ডিস্কো ডান্সার’ ছবিতে অভিনয় করে মিঠুন সাফল্যের চূড়ায় ওঠেন। একই সময় বলিপাড়ার দুই নায়ক সাফল্যের সিঁড়িতে চড়তে শুরু করেছিলেন। কিন্তু তাঁদের মধ্যে প্রতিযোগিতার বদলে নিখাদ বন্ধুত্ব ছিল।
সঞ্জয় এবং মিঠুনের পছন্দ-অপছন্দের ক্ষেত্রে সাদৃশ্যও ছিল। দু’জনের কেউ-ই সম্পর্কের চেয়ে টাকাপয়সাকে বেশি গুরুত্ব দিতেন না। আজিজ সেজাওয়ালের পরিচালনায় ১৯৮৯ সালে মুক্তি পেয়েছিল ‘ইলাকা’ ছবিটি। এই ছবিতে মিঠুন এবং সঞ্জয় একসঙ্গে অভিনয় করেছিলেন।
শোনা যায়, এই সময়েই ছবির নায়িকা মন্দাকিনিকে মন দিয়ে বসেন মিঠুন। ১৯৮৬ সাল থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত মন্দাকিনির সঙ্গে একাধিক ছবিতে অভিনয় করেছিলেন মিঠুন। ৪ বছরের মধ্যে ১০ থেকে ১২টি ছবিতে কাজ করেছিলেন এই জুটি।
মিঠুন এবং মন্দাকিনির প্রেমকাহিনিতে তৃতীয় ব্যক্তি হয়ে দেখা দিয়েছিলেন ডন দাউদ ইব্রাহিম। মন্দাকিনির প্রেমে পড়েছিলেন তিনিও। মন্দাকিনি কোন অভিনেতার সঙ্গে অতিরিক্ত মেলামেশা করছেন, সে দিকেও নজর রাখতেন তিনি।
তখন দাউদের নজর গিয়ে পড়ে মিঠুনের দিকে। বেশির ভাগ ছবিতেই মন্দাকিনির নায়ক হিসাবে দেখা যেত মিঠুনকে। বলিপাড়ায় মিঠুনের সঙ্গে মন্দাকিনির সম্পর্ক নিয়ে কানাঘুষো শোনা যাচ্ছিল। দাউদের কানে দু’জনের সম্পর্কের কথা পৌঁছনোর পর খেপে ওঠেন তিনি।
এই সময় নাকি মিঠুনের কাছে এক জনকে পাঠিয়েছিলেন দাউদ। সেই বার্তাবাহক হুমকি দিয়েছিলেন, মিঠুনকে যেন কোনও ভাবেই মন্দাকিনির আশপাশে দেখা না যায়।
মিঠুন অবশ্য দাউদের হুমকিকে পাত্তা দেননি। মন্দাকিনির সঙ্গে অভিনেতার বন্ধুত্ব অটুট ছিল। অনবরত হুমকি দেওয়ার পর মিঠুনের বাড়িতে অজানা নম্বর থেকে ফোনও আসতে থাকে। এমনকি, দাউদের লোক মিঠুনের উপর নজর রাখতে শুরু করেন। ওই পরিস্থিতিতে মিঠুন ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন। তিনি বুঝতে পারছিলেন যে, তাঁর সঙ্গে যে কোনও মুহূর্তে যা খুশি হয়ে যেতে পারে।
অবশেষে মিঠুনের রক্ষাকর্তা হয়ে আসেন সঞ্জয়। দাউদের সঙ্গে সঞ্জয়ের সম্পর্ক ভাল ছিল। ডনের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখা নিয়ে লোকদেখানো ভাব ছিল সঞ্জয়ের।
সাহায্যের আশায় সঞ্জয়ের দ্বারস্থ হয়েছিলেন মিঠুন। মিঠুন অনুরোধ করেছিলেন যে, তাঁকে যেন কোনও রকম ভাবে দাউদের হাত থেকে বাঁচিয়ে নেওয়া হয়। অনুরোধ ফেলতে পারেননি সঞ্জয়।
দাউদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সঞ্জয় জানিয়েছিলেন যে, মন্দাকিনির সঙ্গে মিঠুনকে আর দেখা যাবে না। দাউদ যেন তাঁকে নিয়ে দুশ্চিন্তা না করেন। অন্য দিকে মিঠুনকেও সতর্ক করেন সঞ্জয়। মিঠুনকে নির্দেশ দেন যে, তিনি যেন মন্দাকিনির সঙ্গে আর কোনও ছবিতে অভিনয় না করেন।
মন্দাকিনির সঙ্গে একটি ছবিতে অভিনয় করতে দেখা গেলেই তা দাউদের নজরে পড়বে এবং মিঠুনকে বিপদের হাত থেকে কেউ বাঁচাতে পারবেন না বলেও দাবি করেন সঞ্জয়। সঞ্জয়ের কথা মতো মিঠুন আর মন্দাকিনির সঙ্গে কোনও ছবিতে অভিনয় করেননি।
কিন্তু দুর্দিনে নাকি সঞ্জয়ের পাশে দাঁড়াননি মিঠুন। ১৯৯৩ সালে মুম্বই বিস্ফোরণে যখন সঞ্জয়ের নাম জড়িয়ে পড়ে তখন অভিনেতার পাশে দাঁড়াতে দেখা যায়নি মিঠুনকে।
যশ চোপড়া, মহেশ ভট্ট থেকে শুরু করে শাহরুখ খান, সলমন খান এমনকি সইফ আলি খান পর্যন্ত সঞ্জয়কে জেল থেকে ছাড়ানোর জন্য লড়াই করেন। অভিনেতার পোস্টার হাতে নিয়েও সঞ্জয়কে সমর্থন করতে দেখা যায় বলিপাড়ার তারকাদের।
সঞ্জয়ের বাবা সুনীল দত্ত যে রাজনৈতিক দলের সমর্থক ছিলেন, তার বিরুদ্ধ দলের সদস্য ছিলেন শত্রুঘ্ন সিনহা। তবু তিনিও সঞ্জয়কে সমর্থন করেছিলেন।
হাতেগোনা যে ক’জন নিশ্চুপ ছিলেন তাঁদের অন্যতম ছিলেন মিঠুন। তিনি সঞ্জয়ের পক্ষে একটি কথাও বলেননি। তবে বিপক্ষেও কিছু বলেননি। জেল থেকে ছাড়া পেয়ে মিঠুনের সম্বন্ধে খোঁজ করেছিলেন সঞ্জয়। মিঠুনের এমন ব্যবহারে হতাশ হয়েছিলেন।
এক পুরনো সাক্ষাৎকারে সঞ্জয় বলেছিলেন যে, ‘‘মিঠুন ইন্ডাস্ট্রির ওই অভিনেতাদের মধ্যে পড়ে, যারা কারও বিপদ দেখলে তাঁকে সবার আগে সাহায্য করে। কিন্তু আমার ক্ষেত্রে ও নিজেকে এ ভাবে গুটিয়ে রেখেছিল শুনে আমি আশ্চর্য হয়েছি।’’
সঞ্জয়ের আরও মন্তব্য, ‘‘এর পর থেকে আমিও পেশাদার অভিনেতার মতো ব্যবহার করব। বন্ধুত্বের খাতিরে যে কোনও ছবিতে আর অভিনয় করব না।’’
এর পর আর সঞ্জয় এবং মিঠুনকে কোনও ছবিতে একসঙ্গে অভিনয় করতে দেখা যায়নি। বিবেক চৌহানের পরিচালনায় আবার তাঁরা একসঙ্গে কাজ করলেও তাঁদের মধ্যে এই ঝামেলার রেশ কতটা রয়েছে তা নিয়ে বলিপাড়ায় জল্পনার অন্ত নেই।