বড় পর্দায় সাফল্যের পর ‘দ্য ফ্যামিলি ম্যান’ খ্যাত রাজ এবং ডিকে-র হাত ধরে ‘ফরজ়ি’ ওয়েব সিরিজ়ে অভিনয় করেছেন শাহিদ কপূর। বুধবার রাতে আগাম মুক্তি পেয়েছে ‘ফরজ়ি’। শাহিদের পাশপাশি এই ওয়েব সিরিজ়ে অভিনয় করেছেন কেকে মেনন এবং দক্ষিণী অভিনেতা বিজয় সেতুপতি।
শাহিদ এবং বিজয়— দুই অভিনেতার মনেই ‘ফরজ়ি’র জন্য একটি বিশেষ জায়গা রয়েছে। ‘ফরজ়ি’র মাধ্যমে ওয়েব সিরিজ়ে অভিনয়ে হাতেখড়ি করলেন শাহিদ। এমনকি, হিন্দি ভাষাতেও প্রথম কাজ করলেন বিজয়। তবে, ‘ফরজ়ি’তে শাহিদের অভিনয় দেখে তাঁর কেরিয়ার নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে বলিপাড়ায়।
‘জব উই মেট’, ‘কবীর সিংহ’-এর মতো সুপারহিট ছবিতে কাজ করলেও তাঁর কাছে ‘রকস্টার’, ‘রং দে বসন্তি’, ‘ব্যাং ব্যাং’ ছবির মতো বহু সিনেমায় অভিনয়ের প্রস্তাব এসেছিল, যা খারিজ করে দিয়েছিলেন শাহিদ। কিন্তু ওই ছবিগুলিতে অভিনয় করলে আজ শাহিদ তাঁর অভিনয় জীবনে অন্য মাইলফলক গড়ে তুলতে পারতেন।
২০১১ সালে ইমতিয়াজ় আলির পরিচালনায় প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছিল মিউজ়িক্যাল রোম্যান্টিক ড্রামা ঘরানার ছবি ‘রকস্টার’। এই ছবিতে মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন রণবীর কপূর এবং নার্গিস ফকরি।
রণবীরের কেরিয়ারে সবচেয়ে সফল ছবির তালিকায় ‘রকস্টার’-এর নাম আসে। তবে, এই ছবিতে ইমতিয়াজ়ের প্রথম পছন্দ ছিলেন শাহিদ। সংবাদ সংস্থা সূত্রে খবর, শাহিদের কাছে ‘জব উই মেট’ এবং ‘রকস্টার’ দু’টি ছবির স্ক্রিপ্ট নিয়ে গিয়েছিলেন ইমতিয়াজ়। কিন্তু ছবি দু’টির মধ্যে যে কোনও একটি ছবিতেই শাহিদ অভিনয় করতে পারবেন বলে জানিয়েছিলেন পরিচালক।
‘রকস্টার’-এর চেয়ে ‘জব উই মেট’ ছবির স্ক্রিপ্ট বেশি পছন্দ হয়েছিল শাহিদের। তাই ইমতিয়াজ় ‘রকস্টার’ ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাব দেন রণবীরকে। তবে, ইমতিয়াজ পরিচালিত এই দু’টি ছবিই হিট হয়েছিল।
২০০৬ সালে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘রং দে বসন্তি’ ছবিটি বহুলচর্চিত এবং বক্স অফিসে দারুণ সাড়া ফেলেছিল। ছবিটির পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন রাকেশ ওমপ্রকাশ মেহরা। আমির খান, সোহা আলি খান, শরমন জোশী, আর মাধবন, ওয়াহিদা রহমানের মতো তারকারা এই ছবিতে অভিনয় করেছিলেন।
‘রং দে বসন্তি’ ছবিতে একটি চরিত্রের জন্য শাহিদকে পছন্দ করেছিলেন রাকেশ। নেহা ধুপিয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে শাহিদ জানিয়েছেন যে, ‘সিদ্ধার্থ’ চরিত্রে অভিনয় করার জন্য শাহিদকে নির্বাচন করেছিলেন ছবি নির্মাতারা।
কিন্তু শাহিদের হাতে অন্য ছবির কাজ থাকায় তিনি ‘রং দে বসন্তি’তে অভিনয়ের প্রস্তাব খারিজ করে দেন। পরে ‘সিদ্ধার্থ’ চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছিল কর্ণ সিংঘানিয়াকে। শাহিদ সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘‘এই ছবিতে কাজ করতে পারিনি বলে আমার খুব আফসোস হয়। ছবির স্ক্রিপ্ট আমার ভীষণ ভাল লেগেছিল। স্ক্রিপ্ট শোনার পর আমি কেঁদেওছিলাম। দুর্ভাগ্যবশত আমি সময় বার করতে পারলাম না।’’
২০১৩ সালে বলিউডে প্রথম কাজ তামিল অভিনেতা ধনুশের। সোনম কপূর এবং অভয় দেওলের সঙ্গে ‘রাঞ্ঝনা’ ছবিতে কাজ করেছিলেন ধনুশ। কিন্তু ছবির পরিচালক আনন্দ এল রাইয়ের প্রথম পছন্দ ধনুশ ছিলেন না।
‘কুন্দন’-এর চরিত্রের জন্য শাহিদকে প্রথম পছন্দ করেছিলেন আনন্দ। কিন্তু অজানা কারণে শাহিদ ‘রাঞ্ঝনা’ ছবিতে কাজ করতে পারেননি। এই ছবি মুক্তির পর যেমন ব্লকবাস্টার হিট হয়েছিল, ঠিক তেমনই ‘কুন্দন’ চরিত্রটিও দর্শকের কাছে প্রচুর ভালবাসা পায়।
বলিপাড়ায় শাহিদ এবং করিনার জুটি সকলের পছন্দের ছিল। এমনকি, বড় পর্দায় তাঁদের রসায়নও মন জিতে নিয়েছিল দর্শকের। তবে খুব বেশি ফিল্মে একসঙ্গে কাজ করেনি এই জুটি। দর্শকের কাছে সুযোগ ছিল আরও এক বার শাহিদ এবং করিনাকে প্রেমিক-প্রেমিকার চরিত্রে দেখার।
২০১৩ সালে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছিল রোম্যান্টিক কমেডি ঘরানার ছবি ‘গোরি তেরে প্যার মে’। এই ছবিতে নায়িকা হিসাবে ছবির পরিচালক পুণীত মলহোত্র বেছে নিয়েছিলেন করিনা কপূর খানকে।
করিনার বিপরীতে অভিনয়ের জন্য পুণীতের প্রথম পছন্দ ছিলেন শাহিদ। কিন্তু শাহিদ এবং করিনার বিচ্ছেদ হয়ে যাওয়ার ফলে অভিনেতা পুণীতের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন। তার পর সেই চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছিল ‘জানে তু ইয়া জানে না’ ছবির নায়ক ইমরান খানকে।
২০১৩ সালে যশরাজ ফিল্মসের প্রযোজনায় মুক্তি পেয়েছিল ‘শুধ দেশি রোম্যান্স’ ছবিটি। এই ছবিতে সুশান্ত সিংহ রাজপুত, বাণী কপূর এবং পরিণীতি চোপড়া অভিনয় করেছিলেন। কিন্তু পরিচালক মণীশ শর্মার প্রথম পছন্দ সুশান্ত ছিল না।
‘রঘু’ চরিত্রের জন্য শাহিদকে প্রস্তাব দিয়েছিলেন মণীশ। কিন্তু কোনও অজানা কারণে যশরাজ ফিল্মসের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ ছেড়ে দিয়েছিলেন শাহিদ। তার পর সুশান্তকে এই চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ দেওয়া হয়।
সিদ্ধার্থ আনন্দ পরিচালিত ‘ব্যাং ব্যাং’ ছবিটি ২০১৪ সালে মুক্তি পায়। এই ছবিতে হৃতিক রোশন এবং ক্যাটরিনা কইফের জুটি মনে ধরেছিল দর্শকের। কিন্তু ‘রাজধীর’ ছবির জন্য হৃতিক নন, বরং শাহিদকে প্রথম পছন্দ করেছিলেন সিদ্ধার্থ।
শাহিদকে অভিনয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন সিদ্ধার্থ। সেই সময় বিশাল ভরদ্বাজের ‘হায়দার’ ছবির কাজ নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন শাহিদ। তাই সময়ের অভাবে ‘ব্যাং ব্যাং’ ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাব খারিজ করে দিয়েছিলেন তিনি।
শাহিদের কারণে ইমরান খানের কেরিয়ারের ঝুলিতে আরও একটি ছবির সংখ্যা বেড়েছিল। ২০১৩ সালে মিলন লুথারিয়ার পরিচালনায় প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছিল ‘ওয়ান্স আপন এ টাইম ইন মুম্বই দোবারা!’। এই ছবিতে অক্ষয় কুমার এবং সোনাক্ষী সিনহার সঙ্গে অভিনয় করেছিলেন ইমরান।
‘আসলাম’ চরিত্রের জন্য মিলনের প্রথম পছন্দ ছিলেন শাহিদ। কিন্তু প্রথম ছবি ‘ওয়ান্স আপন এ টাইম ইন মুম্বই’-এর ব্যাপারে জানার পর তিনি আর মিলনের প্রস্তাবে রাজি হননি। পরে এই চরিত্রে অভিনয়ের জন্য ইমরানকে বেছে নিয়েছিলেন মিলন।