প্রথম ছবিতেই বাজিমাত। আশির দশকে দর্শকমনে যেমন জায়গা করে নিয়েছিলেন ঠিক তেমনই তাঁর মহিলা অনুরাগীর সংখ্যাও ছিল প্রচুর। এক সময় আলোর রোশনাইয়ে থাকা অভিনেতা বর্তমানে বলিপাড়ার তারকা-সন্তানদের মধ্যে সবচেয়ে ফ্লপ হিসাবেই পরিচিত। কে সেই তারকা-সন্তান?
ষাটের দশকের জনপ্রিয় অভিনেতা ছিলেন রাজেন্দ্র কুমার। তাঁর পুত্র কুমার গৌরব প্রথম ছবিতেই খ্যাতির চূড়ায় পৌঁছেছিলেন। কিন্তু সেই সাফল্যের স্বাদ বেশি দিন উপভোগ করতে পারেননি তিনি।
১৯৫৬ সালের ১১ জুলাই উত্তরপ্রদেশের লখনউয়ে জন্ম কুমারের। জন্মের সময় তাঁর নাম ছিল মনোজ তুলি। পেশার খাতিরে নাম পরিবর্তন করেন তিনি।
ছোটবেলা থেকেই অভিনয় নিয়ে কেরিয়ার গড়তে চাইতেন কুমার। ১৯৮১ সালে ‘লভ স্টোরি’ ছবির মাধ্যমে বলিপাড়ায় আত্মপ্রকাশ করেন তিনি। কুমারের সঙ্গে এই ছবিতে জুটি বেঁধে অভিনয় করেন বিজয়েতা পণ্ডিত। বিজয়েতাও এই ছবির মাধ্যমে বলিপাড়ায় পা রাখেন।
কুমারের কেরিয়ার তৈরি করতে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন তাঁর বাবা রাজেন্দ্র। ‘লভ স্টোরি’ ছবির প্রযোজনার পাশাপাশি এই ছবিতে অভিনয় করতেও দেখা যায় রাজেন্দ্রকে।
মুক্তির পর বক্স অফিসে দুর্দান্ত ব্যবসা করে ‘লভ স্টোরি’। ছবির পাশাপাশি ছবির গানগুলিও ব্যাপক জনপ্রিয় হয়। কেরিয়ারের প্রথম ছবি হিট হওয়ার পর রাতারাতি সাফল্য ছুঁয়ে ফেলেন কুমার। মহিলা অনুরাগীদের সংখ্যাও নিমেষে বৃদ্ধি পেতে থাকে।
‘তেরি কসম’, ‘স্টার’, ‘জনম’, ‘নাম’, ‘দিল তুঝকো দিয়া’, ‘সিয়াসত’, ‘ফুল’-এর মতো একাধিক হিন্দি ছবিতে অভিনয় করেছেন কুমার। বলিপাড়ায় কানাঘুষো শোনা যায়, নিজের ভুলের জন্যই নাকি কেরিয়ার ডুবিয়েছেন অভিনেতা।
কুমার নাকি কম পরিচিত কোনও অভিনেত্রীর সঙ্গে জুটি বেঁধে ছবিতে অভিনয় করতে চাইতেন না। এই কারণে বহু ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাব হারিয়েছেন তিনি। নির্দিষ্ট সময় পর কাজ পাওয়াও বন্ধ হয়ে যায় তাঁর।
কুমারের বাবা রাজেন্দ্রের সঙ্গে বলি অভিনেতা রাজ কপূরের গভীর বন্ধুত্ব ছিল। রাজেন্দ্র এবং রাজ দু’জনেই তাঁদের বন্ধুত্ব আত্মীয়তায় পরিণত করতে চেয়েছিলেন। কুমারের সঙ্গে রাজের কন্যা রিমা কপূরের বিয়ে নিয়ে চিন্তাভাবনা করছিলেন দুই বন্ধু।
বলিপাড়ায় কানাঘুষো শোনা যায়, রিমার সঙ্গে নাকি বাগ্দানের দিনক্ষণও ঠিক হয়ে গিয়েছিল কুমারের। এমনকি দুই তারকা-সন্তান একে অপরকে ভালও বেসে ফেলেন। কানাঘুষো শোনা যায় যে তাঁদের সম্পর্কে চিড় ধরে বলিপাড়ার এক অভিনেত্রীর কারণে।
বলিপাড়ার অন্দরমহল সূত্রে খবর, ‘লভ স্টোরি’ ছবির শুটিংয়ের পর সহ-অভিনেত্রী বিজয়েতার সঙ্গে সম্পর্ক গাঢ় হতে শুরু করে কুমারের। এমনকি তাঁদের সম্পর্ক নিয়ে নানা রকম আলোচনা হতে থাকে। বলিপাড়ার একাংশের অনুমান, বিজয়েতার সঙ্গে সম্পর্কে জড়ানোর কারণেই কুমার এবং রিমার সম্পর্ক ভেঙে যায়।
শুধুমাত্র বিজয়েতা নন, বলিপাড়ার অন্য এক অভিনেত্রীর সঙ্গেও নাম জড়িয়ে পড়ে কুমারের। সুনীল দত্ত এবং নার্গিসের কন্যা নম্রতা দত্তের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন কুমার। দু’বছর সম্পর্কে থাকার পর নম্রতার সঙ্গে সাত পাকে বাঁধা পড়েন অভিনেতা।
১৯৮৪ সালে কুমারকে বিয়ে করেন নম্রতা। বিয়ের পর দুই কন্যাসন্তানের জন্ম দেন নম্রতা। এর পর রাজেন্দ্র তাঁর পুত্রের কেরিয়ার নতুন ভাবে শুরু করার চেষ্টা করেন।
১৯৯৩ সালে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ‘ফুল’। এই ছবিতে মাধুরী দীক্ষিতের সঙ্গে জুটি বাঁধেন কুমার। রাজেন্দ্র এবং কুমারের শ্বশুর সুনীল দু’জনেই এই ছবিতে অভিনয় করেন। ‘ফুল’ ছবিতে অভিনয়ের পর বড় পর্দা থেকে সাময়িক বিরতি নেন কুমার।
এর পর ছোট পর্দায় অভিনয় শুরু করেন কুমার। সাময়িক বিরতির পর আবার বড় পর্দায় ফিরে যান তিনি। ২০০০ সালে ‘গ্যাং’ নামে একটি ছবি মুক্তি পায় কুমারের। যদিও এই ছবির কাজ বহু দিন আগেই শেষ হয়ে গিয়েছিল। পরিচালক মাজহার খানের অসুস্থতার কারণে ছবিমুক্তির দিন অনেকটাই পিছিয়ে যায়।
২০০২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘কাঁটে’ ছবিতে মুখ্যচরিত্রে অভিনয় করেন কুমার। অমিতাভ বচ্চন, সুনীল শেট্টি, সঞ্জয় দত্ত এবং লাকি আলির মতো বলি তারকাদের সঙ্গে অভিনয়ের সুযোগ পান কুমার। এই ছবির পর আর কোনও হিন্দি ছবিতে অভিনয় করতে দেখা যায়নি তাঁকে।
২০০৪ সালে ‘গায়ানা ১৮৩৮’ নামের একটি ইংরেজি ছবিতে অভিনয় করেন কুমার। দু’বছর পর ২০০৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত নির্বাক ছবি ‘মাই ড্যাডি স্ট্রংগেস্ট’-এ অভিনয় করেন তিনি। এর পর আর বড় পর্দায় কাজ করতে দেখা যায়নি তাঁকে।
কানাঘুষো শোনা যায়, নব্বইয়ের দশকে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘দ্য জঙ্গল বুক’ ছবিতে মোগলির চরিত্রের জন্য হিন্দি ভাষায় নেপথ্যকণ্ঠ দিয়েছিলেন কুমার।
অভিনয় ছেড়ে বর্তমানে নিজস্ব নির্মাণ সংস্থা নিয়ে কাজকর্মে ব্যস্ত রয়েছেন কুমার। তারকা-সন্তান কুমারের কেরিয়ারের ঝুলিতে ফ্লপ ছবির সংখ্যাই বেশি। বলিপাড়ায় সবচেয়ে বেশি ‘ফ্লপ’ তারকা-সন্তান হিসাবে পরিচিত ৬৭ বছর বয়সি কুমার।