বলিউডে ছিলেন প্রায় চার দশক। এই চল্লিশ বছরে সত্তরটিরও বেশি হিন্দি ছবিতে অভিনয় করেছিলেন রাজকুমার। বলিউডের ‘প্রিন্স’ হয়তো আগে থেকেই জানতেন তাঁর ভবিতব্য। তাই পুলিশের চাকরি ছেড়ে অভিনয়ে নেমেছিলেন।
অভিনয়, সংলাপ পরিবেশন থেকে কণ্ঠস্বর— সব কিছুর জন্যই প্রশংসা কুড়োতেন রাজকুমার। রাজকুমার সত্যিই যেন হয়ে উঠেছিলেন বলিউডের ‘প্রিন্স’। কিন্তু তাঁকে ঘিরে সুখকর নয় অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তীর স্মৃতি।
১৯৮৯ সাল। প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছিল ‘গলিয়ো কা বাদশা’ ছবিটি। শের জং সিংহ পরিচালিত অ্যাকশন ঘরানার এই ছবিতে মুখ্যচরিত্রে অভিনয় করেছিলেন রাজ কুমার। অভিনেত্রীর ভূমিকায় দেখা গিয়েছিল হেমা মালিনী, স্মিতা পাটিল, পুণম ঢিলোঁর মতো তারকাদের।
‘গলিয়ো কা বাদশা’ ছবিতে অভিনয় করেছিলেন মিঠুনও। কিন্তু কোনও মুখ্যচরিত্রে নয়। তাঁকে বড় পর্দায় দেখা গিয়েছিল কম সময়ের জন্য। ১৯৮২ সালে ‘ডিস্কো ডান্সার’ ছবিতে অভিনয় করে রাতারাতি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন মিঠুন। তার পর তিনি বলিউডে বহু হিট ছবিতে কাজ করেছেন।
ইতিমধ্যেই বলিজগতে সাত বছর কাটিয়ে ফেলেছিলেন মিঠুন। বলিপাড়ায় ভালই পরিচিতি তৈরি হয়ে গিয়েছিল তাঁর। তিনি চাইছিলেন, প্রচুর কাজ করে কেরিয়ারে গতি আনতে।
ছোট চরিত্র হলেও ‘গলিয়ো কা বাদশা’ ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাব পেয়ে কাজ করতে রাজি হয়ে গিয়েছিলেন মিঠুন। শুটিংয়ের প্রথম দিন নির্ধারিত সময়ের আগে সেটে পৌঁছে গিয়েছিলেন তিনি। কস্টিউম পরে তৈরি হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। সেই সময় সেটে উপস্থিত ছিলেন রাজকুমারও।
শুটিং শুরু হওয়ার আগে ছবি নির্মাতাদের ডাকেন রাজকুমার। তিনি জিজ্ঞাসা করেন যে, ছোট চরিত্র হলেও কোনও বড় অভিনেতাকে সেই কাজ দেওয়া উচিত ছিল। মিঠুনের মতো এক জন উঠতি নায়ককে কেন সুযোগ দেওয়া হল— তাই ছিল রাজকুমারের প্রশ্ন।
রাজকুমার যখন মিঠুনের প্রসঙ্গে ছবি নির্মাতাদের প্রশ্ন করছিলেন, তখন কাছেই দাঁড়িয়েছিলেন মিঠুন। রাজকুমার তাঁর সম্পর্কে যা মন্তব্য করেছিলেন, সব কানে এসেছিল তাঁর। এই ঘটনায় মিঠুন আঘাত পান।
প্রথমে কিছু বলবেন না ভেবেও শেষ পর্যন্ত চুপ করে থাকতে পারেননি মিঠুন। সোজা রাজকুমারের কাছে যান তিনি। তাঁকে বলেন, ‘‘আপনি যাকে উঠতি নায়ক বলছেন, সেই মানুষটি আমিই।’’
মিঠুন নিজের পরিচয় দিতেই তাঁকে দেখে হাসিতে ফেটে পড়েন রাজকুমার। মিঠুনকে তিনি বলেন, ‘‘তুমি কোথায় এসেছ, জানো? অভিনয় করা মুখের কথা নয়। বাচ্চাদের খেলার জিনিস নয় এটা।’’
রাজকুমারের উত্তর শুনে মিঠুন পাল্টা জবাব দেন। তিনি বলেন, ‘‘আমি জানি, অভিনয় করা সহজ কাজ নয়। সাত বছর ধরে আমি এই পেশায় রয়েছি। এক দিন আমি খুব বড় অভিনেতা হব।’’
মিঠুনের এই কথা শুনে হেসে ফেলেন রাজকুমার। তিনি কটাক্ষ করে বলেন, ‘‘যদি কোনও ছবিতে কাজের প্রয়োজন হয়, আমার কাছে এসো। ছোট চরিত্র হোক বা বড়, আমি তোমাকে কাজ পাইয়ে দেব।’’
রাজকুমারের আচরণে কষ্ট পেয়েছিলেন মিঠুন। যদিও তাঁর উত্তরে তিনি কিছুই বলেননি। কিন্তু তিনি পরে নিজের কথা রেখেছিলেন। প্রমাণ করে দিয়েছিলেন যে তিনি সত্যিই বড় তারকা।
হিন্দি ফিল্মজগতে চার দশক টানা অভিনয় করেছেন রাজকুমার। ১৯৯৬ সালে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।