Pankaj Tripathi Interview

কৌশিকের সঙ্গে কাজ করবেন? শহরে এসে কী জানালেন ‘মির্জাপুর’-এর ‘কালীন ভাইয়া’?

‘মিমি’ হোক বা ‘মির্জাপুর’, পর্দায় গল্প যা-ই থাকুক, তাঁর অভিনয়ের জাদুতে সবাই মাত।

Advertisement
পৃথা বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৯:৩৭
Share:
০১ ১৪

ছবির প্রচারে শহরে এসেছেন কলকাতার ‘জামাই’, অভিনেতা পঙ্কজ ত্রিপাঠী। উপলক্ষ— অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরীর পরিচালনায় তাঁর নতুন ছবি ‘কড়ক সিংহ’-এর প্রচার। ‘মিমি’ হোক বা ‘মির্জাপুর’, পর্দায় গল্প যা-ই থাকুক, তাঁর অভিনয়ের জাদুতে সবাই মাত। শীতের শুরুতে শহরে এসেই গলায় গুরুতর সংক্রমণ। তা সত্ত্বেও নতুন ছবি, ঝিঙে পোস্ত এবং বাঙালিদের নিয়ে আড্ডার মেজাজে পাওয়া গেল তাঁকে। আসর জমল আনন্দবাজার অনলাইনের সঙ্গে।

০২ ১৪

বাস্তবের পঙ্কজ কি সত্যিই খুব ‘কড়ক’? অভিনেতা অকপট বললেন, “একদমই নয়। আমাদের গ্রামে এক দূর সম্পর্কের কাকা ছিলেন। সব সময় রেগে থাকতেন। সকলের উপর চোটপাট করতেন। কিন্তু সেই রাগের জন্য নিজেই বোধহয় সবচেয়ে বেশি বিব্রত থাকতেন। সেই সময় বুঝে গিয়েছিলাম, রাগ করা উচিত নয়। বেশি রাগ সবার আগে আপনার নিজেরই ক্ষতি করবে। যার উপর রাগ করছেন তাঁর উপর হয়তো কোনওই প্রভাব পড়ল না”।

Advertisement
০৩ ১৪

আপনি ঠান্ডা প্রকৃতির বলেই কি ইন্ডাস্ট্রিতে সবাই আপনার বন্ধু? এর উত্তরে অবশ্য একটু পঙ্কজ বললেন, “বলতে পারেন সেই কারণে আমার ইন্ডাস্ট্রিতে কোনও শত্রু নেই”। তবে এই যে, পঙ্কজ ত্রিপাঠীর চেয়ে ‘মির্জাপুর’-এর ‘কালীন ভাইয়া’ কিংবা ‘ক্রিমিন্যাল জাস্টিস’-এর মাধব মিশ্রের নাম বেশি লোকমুখে ঘোরে এখন। সেই নিয়ে অভিনেতার কী রকম অনুভূতি? আমুদে অভিনেতা তাতে বললেন, “আমার ভালই লাগে। পঙ্কজ ত্রিপাঠী তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়। যে চরিত্ররা মানুষের মনে জায়গা করে নিতে পারে, তারাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সিনেমা এই চরিত্রগুলো তৈরি করে। আমরা সেই চরিত্রগুলোয় অভিনয় করি বলে কিছুটা সুবিধা পেয়ে যাই”।

০৪ ১৪

অন্য ধারার এই চরিত্রগুলো ওটিটি-র সুবাদেই তৈরি হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে ব্যস্ত অভিনেতার কাছে ওটিটি কি আগের মতোই সমান গুরুত্ব পায়? এক মুহূর্তও না ভেবে তাঁর উত্তর, “একদম। ধরুন, আমি এক জন নেতা। আমি নির্বাচনে দাঁড়িয়েছি। গোটা কলকাতায় আমার মাত্র তিনটে পোলিং বুথ রয়েছে। যাঁরা শ্যামবাজারে থাকেন, তাঁরা কি সল্টলেক গিয়ে ভোট দেবেন? ওটিটি-র কল্যাণে এই পোলিং বুথের সংখ্যা বাড়ানো গিয়েছে। ছবি সিনেমাহলে মুক্তি পেলে অনেক সময় মানুষ খুব দূরের হলে যেতে পারেন না। বড় জোর ২-৪ কিলোমিটারের দূরত্ব পর্যন্ত যেতে রাজি থাকেন। তার চেয়ে দূরে হল হলে অনেক সময় ইচ্ছা থাকলেও যাওয়া হয়ে ওঠে না। কিন্তু ওটিটি-তে নিজের বাড়িতে নিজের সময় মতো ফোনে দেখে নিতে পারেন যে কোনও কনটেন্ট”।

০৫ ১৪

ওটিটি-তে আজকাল এক ধরনের কনটেন্টও খুব বেড়ে গিয়েছে। পঙ্কজের কাছে জানতে চাওয়া হল, তাই নিয়ে কী অভিনয় করতে একঘেয়ে লাগে না? এমন প্রশ্নের একেবারেই জটিল উত্তরের দিক না গিয়ে তিনি বললেন, “একটা গরু দুধ দিচ্ছে বলে, তাকে দুইয়েই যাব, আমি তেমন মানুষ নই। ‘ক্রিমিন্যাল জাস্টিস’-এর তিনটে সিজ়ন হয়ে গিয়েছে। চতুর্থটা তৈরি হচ্ছে। যে দিন মনে হবে চিত্রনাট্য একঘেয়ে লাগছে, সে দিনই ছেড়ে দেব। সব গল্পেরই কোনও না কোনও স্যাচুরেশন পয়েন্ট থাকে। তবে এটা সত্যিই যে, ওটিটি-তে দর্শক আসা যেমন সহজ, যাওয়াও ততটাই সহজ। সিনেমাহলে টিকিট কেটে যদি না দেখেন, তা-ও বক্স অফিসে ব্যবসা হবে। কিন্তু এখানে ঠিক কোন মুহূর্ত থেকে দর্শক দেখা ছেড়ে দিচ্ছেন, তা-ও বোঝা যায়”।

০৬ ১৪

‘কড়ক সিংহ’ ছবির জন্য এ বারে তাঁর কলকাতায় আসা। তাই ছবির চিত্রনাট্য পেয়ে কি মনে হয়েছিল দর্শককে ধরে রাখা যাবে? উত্তর ভেসে আসে, “এই ছবির ন্যারেটিভ বেশ জটিল। এমন ধরনের চরিত্র আমি আগে করিনি। টোনিদা’র (পরিচালক) ছবি থ্রিলার হলেও তার ভিতরে বৃহত্তর সামাজিক একটা ছবি ভেসে ওঠে। সেটা আমার খুব ভাল লেগেছিল।”

০৭ ১৪

এখন তো বলা হয়, পঙ্কজ ত্রিপাঠী কোনও ছবিতে থাকলে দর্শককে ধরে রাখা সহজ হয়ে যায়, এ বিষয়ে তাঁর কী মত? পঙ্কজ বলেন, “এক দিনে এই জায়গায় পৌঁছইনি। মোট ২০ বছর লাগল। আমি নিজেও কখনও ভাবিনি এই জায়গায় পৌঁছতে পারব। তবে এর পিছনে প্রচুর পরিশ্রম রয়েছে। আমি সৎ ভাবে কাজ করি। এ সব তারই ফসল”।

০৮ ১৪

অনেক জায়গায় পঙ্কজের ছবি দেখে দর্শক উঠে দাঁড়িয়ে হাততালি দেন। হালফিলের সিনেমা জগতে তা হলে নিজেকে ‘স্টার’ মনে হয় কি না, প্রশ্ন করায় মুখ কুঁচকে অভিনেতা বললেন, “একেবারেই নয়। এমন অনুভূতি কখনও হয় না আমার। আমি কাল রাতেই ছবির স্ক্রিনিংয়ের পর জুহু থেকে স্কুটি চালিয়ে বাড়ি গিয়েছি। এক বার একটা দুর্ঘটনা হয়েছিল। তার পর থেকে আমার স্ত্রী আমার সঙ্গে স্কুটিতে উঠতে ভয় পায়। কিন্তু মুম্বইয়ের রাস্তা এত সরু। আমি নিয়মিত স্কুটিতে যাতায়াত করি। গতকাল পাক্কা পাঁচ বছর পর স্ত্রী আমার স্কুটিতে বসতে রাজি হল। খুব ভয়ে ভয়ে ছিল যদিও (হাসি)। অটো না পেলে আমি কিন্তু এখনও দিব্যি স্কুটি চালিয়ে জেটি অবধি যাই। বাকিটা জলপথে। এখনও মনে হয় না, আমি ‘স্টার’ হয়ে গিয়েছি”।

০৯ ১৪

অভিনেতার স্ত্রী বাঙালি। অনিরুদ্ধর ছবিতে কাজ করার পর তা হলে কলকাতার সঙ্গে যোগ আরও গভীর হল? উত্তরে অকপট অভিনেতা বলেন, “যোগ তো চিরকালই গভীর ছিল। আমার শ্বশুরবাড়ি এখানে। এখন আত্মীয়তা আরও বেড়েছে। অনুরাগ বসু এবং কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে আমার নিয়মিত কথা হয়। আমার খুব প্রিয় পরিচালক কৌশিক। আশা করি, খুব তাড়াতাড়ি আমরা একসঙ্গে কাজ করব। কলকাতার সব কিছুই আমার ভাল লাগে। আজ যেমন গলায় অসুবিধা হচ্ছে, তাই আলুসেদ্ধ ভাত খাব। অন্য সময় আমি আলু পোস্ত, ঝিঙে পোস্ত খেতে খুব ভালবাসি। আসলে পোস্ত খেলে ঘুম খুব ভাল হয়”।

১০ ১৪

তাঁর নতুন ছবিতে জয়া আহসানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ দৃশ্যটি বেশ নজর কেড়েছে। এই নিয়ে প্রশ্ন করায় তিনি বললেন, “এই প্রথম আমি এই ধরনের দৃশ্যে অভিনয় করলাম। তবে কোনও রকম প্রস্তুতি নিইনি। পেশাদার অভিনেতা হিসাবে আমি শুধুই নিজের সহ-অভিনেতার স্বাচ্ছন্দ্যের কথা মাথায় রেখেছি। কোনও রকম অসুবিধা হয়নি। দৃশ্যটি খুবই নান্দনিক ভাবে শুট করা হয়েছে। সেখানে কথোপকথনও খুব সুন্দর”।

১১ ১৪

তবে একসঙ্গে কাজ করার আগে জয়ার কোনও ছবি দেখেছিলেন কি না জানতে চাওয়ায় বলেন, “না, আগে দেখিনি। কিন্তু টোনিদা জয়ার কথা বলার পর আমি ওর কিছু বাংলাদেশি ছবি দেখি। ভীষণ পরিণত অভিনেত্রী। একসঙ্গে কাজ করে খুব ভাল লাগল।”

১২ ১৪

‘ম্যাঁয় অটল হুঁ’ ছবিতে অটলবিহারী বাজপেয়ীর ভূমিকায় অভিনয় করেছেন। পঙ্কজ নিজেও দীর্ঘ দিন অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের (এভিবিপি) সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সেই দিনগুলো কাজে লেগে গেল? পঙ্কজের গলায় আশা, “এই যোগগুলো সবই ভাগ্যে লেখা থাকে। আমি এই ছবিটা করার আগে অটলজিকে নিয়ে এতই গবেষণা করেছি যে, মনে হয় একটা গোটা বই লিখে ফেলতে পারব এখন। উনি বরাবরই আমার আদর্শ ছিলেন। আমি দু’বার দিল্লি গিয়েছিলাম ওঁর বক্তৃতা শুনতে। কখনও ওঁর সঙ্গে কথা বলার সুযোগ হয়নি। ৩০০ মিটার দূর থেকেই দেখতে হয়েছে। কিন্তু ওঁর কবিতার আমি খুব ভক্ত।”

১৩ ১৪

কবিতা বোধহয় অভিনেতার বিশেষ পছন্দের। তিনি অবসর সময় কী করেন? এই কথায় বললেন, “খাই আর ঘুমাই। আসলে আমি মনেপ্রাণে বাঙালি। আমি চাই রোজ খাওয়ার পর এক ঘণ্টা ভাতঘুম দিতে (হাসি)।”

১৪ ১৪

শেষ প্রশ্নে জানতে চাওয়া হয় তাঁর আবার কলকাতা কবে আসা হবে? নির্লিপ্ত ভাবে বলেন, “আগামী মাসেই চলে আসব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement