পাঁচ দশকের বেশি সময় ধরে বলিউডে রাজত্ব করে চলেছেন অমিতাভ বচ্চন। এখনও পর্যন্ত দু’শোর কাছাকাছি ছবিতে অভিনয় করে দর্শকের মনে জায়গা করে নিয়েছেন তিনি। ১১ অক্টোবর অভিনেতার জন্মদিন উপলক্ষে ‘জলসা’র বাইরে অনুরাগীদের ভিড় দেখলেই তার ঝলক ধরা পড়ে। কিন্তু অমিতাভের এই জনপ্রিয়তা নিয়ে বার বার ক্ষোভপ্রকাশ করেছেন বলিপাড়ার আর এক অভিনেতা ওম পুরি।
মরাঠি ছবি ‘ঘাসিরাম কোতওয়াল’-এর মাধ্যমে বড় পর্দায় অভিনয় শুরু ওম পুরির। সংলাপ বলার সময় শব্দ নিয়ে খেলা করতেন অভিনেতা, বলিপাড়ার অনেকেই ওম সম্পর্কে এমনটাই মনে করতেন। অমিতাভকে চোখের সামনে তারকা হতে দেখেছেন ওম।
অমিতাভ এবং ওম সমকালীন অভিনেতা হলেও ‘বিগ বি’র মতো কাজের সুযোগ পেতেন না ওম। অন্তত তেমনটাই দাবি ওম পুরির। তাই অমিতাভের প্রতি একটা চাপা রাগ কাজ করত তাঁর। মাঝেমধ্যেই বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে অমিতাভের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করতেন তিনি। বাঁকা মন্তব্য করতেও পিছপা হতেন না তিনি।
অমিতাভের উচ্চতা নজরে পড়ার মতো। তা ছাড়া অমিতাভ সুদর্শনও ছিলেন। তাই বলিপাড়ার সমস্ত পরিচালক এবং প্রযোজক চাইতেন অমিতাভের সঙ্গে কাজ করতে।
ওমের বক্তব্য, তিনি সুন্দর দেখতে ছিলেন না। তাই তিনি বেশি কাজ পাননি। সব কাজ অমিতাভ ছিনিয়ে নিয়েছেন। কিন্তু অভিনয় গুণে তিনি অমিতাভের থেকে কোনও অংশে কম যান না বলে জানিয়েছিলেন ওম।
একই সময়ের অভিনেতা হলেও অমিতাভ এবং ওমকে সে ভাবে কখনও একসঙ্গে অভিনয় করতে দেখা যায়নি। ২০০৩ সালে ‘দেব’ ছবিতে অমিতাভের সঙ্গে কাজ করেছিলেন ওম।
দুই অভিনেতার মধ্যে হঠাৎ এমন দূরত্ব তৈরি হওয়ার কারণ কী? তার জন্য অবশ্য ওমকেই দায়ী করেন বলিপাড়ার একাংশ। তাঁদের দাবি, ওম পুরির দেওয়া একটি সাক্ষাৎকার অমিতাভের সঙ্গে তাঁর এক অদৃশ্য দূরত্ব তৈরি করে।
১৯৮৫ সালে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে অমিতাভের প্রতি সমস্ত ক্ষোভ উগরে ফেলেন ওম। ওম বলেন, ‘‘কুকুর কোনও জায়গায় বসার সময় আগে লেজ দিয়ে তা পরিষ্কার করে ফেলে। তার পর সেখানে বসে। ইন্ডাস্ট্রিতে এমন কয়েক জন রয়েছে যারা পরজীবীর মতো ঘুরে বেড়ায়। তারা শুধু নিয়েই যায়, কিন্তু ফেরত দেওয়ার বেলায় তাদের পকেট গড়ের মাঠ।’’
ওম জানান, একটি ছবিতে অভিনয় করতে অনেক পারিশ্রমিক চান অমিতাভ। ছবির যা বাজেট তার এক-চতুর্থাংশ অমিতাভকে পারিশ্রমিক দিতেই খরচ হয়ে যেত বলে ওমের দাবি।
অমিতাভ যদি তাঁর পারিশ্রমিকের ১ শতাংশও ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে যুক্ত কর্মীদের দান করতেন তা হলে সকলে অনেক ভাল ভাবে জীবন কাটাতে পারতেন বলে জানিয়েছেন ওম। ওম বলেন, ‘‘কিন্তু ওর নাম অমিতাভ। অমিতাভ এত বোকা নয়। ও কখনও এমন কাজ করবে না।’’
তাঁকে নিয়ে জনসমক্ষে এমন মন্তব্য করেছিলেন বলে ওম পুরির সঙ্গে দীর্ঘ দিন কাজ করেননি অমিতাভ। সাক্ষাৎকার দেওয়ার প্রায় দু’দশক পর দুই অভিনেতাকে একসঙ্গে অভিনয় করতে দেখা যায়। শুট চলাকালীন দু’জনের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
কিন্তু বেশি দিন টেকেনি অমিতাভ-ওমের বন্ধুত্ব। ২০১৭ সালে আবার অমিতাভের বিরুদ্ধে মন্তব্য করেছিলেন ওম। সেই সময় ওমের হাতে কাজ ছিল না। কিন্তু অমিতাভ একের পর এক ছবিতে অভিনয় করে যাচ্ছেন।
ওম জানিয়েছিলেন, অমিতাভের মতো তাঁর এত জনপ্রিয়তা নেই, অনুরাগী সংখ্যাও এত বেশি নয়। কিন্তু অভিনয়কে সম্বল বানিয়ে বহু দূর যাওয়ার ক্ষমতা রয়েছে ওমের।
২০১৭ সালের ৬ জানুয়ারি ৬৬ বছর বয়সে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন ওম পুরি। তাঁর মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করে অমিতাভ ব্লগে লেখেন, ‘‘ওম ওর হাসি নিয়ে আমাদের মধ্যে বেঁচে থাকবে। ও আমার ভাল বন্ধু, সহকর্মী ছিল। বহু গুণের অধিকারী ছিল ওম।’’
ওমের শেষকৃত্যেও অমিতাভ তাঁর পুত্র অভিষেককে নিয়ে গিয়েছিলেন। সেখানে গিয়ে সাংবাদিকদের অমিতাভ বলেন, ‘‘এখন বন্ধুর পুত্রের পাশে দাঁড়ানো ছাড়া আমাদের আর কিছু করার নেই। ওর পাশে দাঁড়িয়ে শক্তি জোগানোই আমাদের দায়িত্ব।’’