কপিল শর্মা এবং সুনীল গ্রোভার। বলিপাড়া এবং হিন্দি ধারাবাহিক জগতে কৌতুকাভিনেতা হিসাবে এই দু’জন একে অপরকে টক্কর দেন। একই ক্ষেত্রে কাজ করার কারণে তাঁরা একে অপরের প্রতিযোগী হলেও কপিল এবং সুনীলের মধ্যে বন্ধুত্ব ছিল অটুট। কিন্তু বর্তমানে তাঁরা যেন পৃথিবীর দুই প্রান্তের বাসিন্দা। একসঙ্গে কাজ করা তো দূরের কথা, দু’জন দু’জনের সঙ্গে কথাই বলেন না।
কপিল এবং সুনীলের বন্ধুত্বের ভাঙন নিয়ে জানাজানি হতে বাকি নেই। এককালের ‘মানিকজোড়’-এর এখন যেন দুয়োরানি-সুয়োরানির মতো সম্পর্ক। তবে, কপিল এবং সুনীলের বন্ধুত্বে ছেদের জন্য দায়ী নাকি তৃতীয় ব্যক্তি। তাঁর আচরণের জন্যই নাকি কপিল কথা বলা বন্ধ করে দেন সুনীলের সঙ্গে।
২০১৭ সালে মুক্তি পেয়েছিল কপিল শর্মা প্রযোজিত ‘ফিরঙ্গি’ ছবিটি। এই ছবিতে অভিনয় করেছিলেন তিনি। কিন্তু ছবিটির শুটিং চলাকালীন এক ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে। শুটিংইউনিটের সদস্যদের মধ্যে এক জন মারা যান। এই খবর পেয়ে ভেঙে পড়েন কপিল।
সেই সময় নিজের শোয়ের পারফর্মারদের নিয়ে মেলবোর্নে একটি অনুষ্ঠান করতে যাচ্ছিলেন কপিল। সেখানে উপস্থিত ছিলেন ভারতী সিংহ, চন্দন প্রভাকর এবং সুনীল গ্রোভার।
যাত্রা শুরুর সময় সকলের থেকে নিজেকে সরিয়ে সরিয়ে রাখছিলেন কপিল। ছোট ছোট বিষয়ে নাকি রেগে যাচ্ছিলেন তিনি। বিমানে সকলে হাসিঠাট্টা করলেও কপিল কোনও কিছুতেই অংশগ্রহণ করেননি।
মেলবোর্নের হোটেলে পৌঁছনোর পর চন্দনের সঙ্গে কপিলের কথা কাটাকাটি হয়। অশান্তি এমন পর্যায়ে পৌঁছে যায় যে, কপিল ব্যাগপত্র গুছিয়ে অন্য হোটেলে গিয়ে থাকা শুরু করেন।
শেষ পর্যন্ত মেলবোর্নের অনুষ্ঠান মিটিয়ে দেশে ফেরার বিমানে ওঠেন কপিল এবং অন্যান্যরা। বিমানে ওঠার পরেও সেই চেনা দৃশ্য। কপিল সকলের থেকে দূরে গিয়ে এক জায়গায় বসে রয়েছেন। আর বাকিদের বিনোদন জুগিয়ে যাচ্ছেন চন্দন।
বিমানে এত চেঁচামেচি হচ্ছে দেখে চন্দনের প্রতি রেগে যান কপিল। রাগের মাথায় চন্দনকে কটু কথা বলে ফেলেন তিনি। চন্দনও পাল্টা জবাব দিতে শুরু করেন কপিলকে।
কপিল এবং চন্দনের ঝগড়া থামাতে তৎপর হন সুনীল। বিমানে নিজের আসন থেকে উঠে দু’জনের ঝগড়া থামানোর চেষ্টা করছিলেন সুনীল। সুনীল ভেবেছিলেন যে, তাঁর কথা শুনে শান্ত হয়ে যাবেন কপিল। কিন্তু এর ফলে হিতে বিপরীত হয়।
ঝগড়া থামা তো দূর, উল্টে সুনীলের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয় কপিলের। মাথা গরম থাকার কারণে সুনীলকেও কটু কথা শোনান কপিল। কপিলের বলা কথায় আঘাত পান সুনীল। তার পর চুপ করে নিজের আসনে গিয়ে বসে পড়েন। সারা রাস্তা কেউ আর একে অপরের সঙ্গে কথা বলেননি।
ভারতে পৌঁছনোর পর ‘কপিল শর্মা শো’য়ের পরবর্তী পর্ব শুরু হয়ে গিয়েছিল। শুরুর দিকে সুনীল এই পর্বে কাজ করলেও পরে তাঁকে শোয়ে পারফর্ম করতে দেখা যায়নি। এই নিয়ে সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে সরব হন সুনীল।
সুনীল সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘‘আমি একটি অনুষ্ঠানে তিন দিন কাজ করেছিলাম। তার পর শুনতে পাই যে, আমাকে ওই শো থেকে বাদ দিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু শোয়ের নির্মাতারা আমাকে কিছু জানাননি। আমি অন্য এক জনের কাছ থেকে জানতে পারি।’’
শো থেকে বাদ পড়ার খবর জানতে পেরে ভেঙে পড়েন সুনীল। সাক্ষাৎকারে তিনি জানান যে, এক মাস মতো তিনি যেন গর্তের ভিতর লুকিয়ে পড়েছিলেন। নিজের উপর সমস্ত ভরসা হারিয়ে ফেলেছিলেন তিনি।
সুনীল সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলেন যে, আর কখনও তিনি আগের শোয়ে ফিরে যাবেন না। অবসাদ তাঁকে এমন ভাবে ঘিরে ফেলেছিল যে, নিজের অভিনয়গুণের উপরেই প্রশ্নচিহ্ন তুলতে শুরু করেছিলেন সুনীল।
কিন্তু সম্পূর্ণ সাক্ষাৎকারে একটি বারের জন্যও কপিলের নাম উল্লেখ করেননি সুনীল। তবুও তাঁর ইঙ্গিতেই বোঝা যায় যে, তিনি কোন শোয়ের কথা বলেছেন। সুনীল জানিয়েছেন, বহু দিন মনখারাপ করে বসে থাকার পর তাঁর ভিতর এক অদ্ভুত জেদ জেগে ওঠে।
সুনীল বলেন, ‘‘আমি ভেবেছিলাম যে, এর পর আমার আর কিছু হবে না। কিন্তু আমার ভিতর হঠাৎ জেদ জেগে ওঠে।’’ সুনীলের কথায়, ওই জেদই নাকি ভিতর থেকে আওয়াজ তুলে বলতে থাকে, ‘চলো, আর এক বার চেষ্টা করা যাক।’
তার পর ‘ভারত’, ‘গুডবাই’-এর মতো ছবিতে অভিনয় করতে দেখা যায় সুনীলকে। ‘তাণ্ডব’ এবং ‘সানফ্লাওয়ার’ ওয়েব সিরিজ়েও কাজ করেছেন তিনি।
চলতি মাসে ‘ইউনাইটেড কচ্ছে’ ওয়েব সিরিজ়টি মুক্তি পাচ্ছে। এই সিরিজ়ে মুখ্য ভূমিকায় অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে সুনীলকে। শাহরুখ খান অভিনীত ‘জওয়ান’ ছবিতেও নাকি দেখা যাবে সুনীলকে।