হিন্দি ফিল্মজগতে কাটিয়ে ফেলেছেন পাঁচ দশকেরও বেশি সময়। এই সময়কালে দুশোটির বেশি ছবিতে অভিনয় করেছেন বলিউডের ‘অ্যাংগ্রি ইয়ং ম্যান’ অমিতাভ বচ্চন। কিন্তু তাঁর কেরিয়ারজীবনে এমন এক অবস্থা আসে যখন অর্থাভাবের কারণে তাঁকে অন্য এক বলি অভিনেতার কাছে হাতজোড় করতে হয়।
১৯৬৯ সালে ‘ভুবন সোম’ ছবিতে প্রথম কাজ করেন অমিতাভ। মৃণাল সেন পরিচালিত এই ছবিতে কথকের ভূমিকায় দেখা গিয়েছিল তাঁকে। একই বছর বলিউডে অমিতাভের অভিনয়ে হাতেখড়ি হয় ‘সাত হিন্দুস্তানি’ ছবির মাধ্যমে।
সত্তর থেকে আশির দশকে কেরিয়ারে তাঁর সাফল্যের সিঁড়িতে চড়তে শুরু করেছিলেন অমিতাভ। কিন্তু তাঁর জীবনেও এক সময় অন্ধকার ঘনিয়ে আসে।
১৯৮৪ সাল থেকে টানা তিন বছর রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন অমিতাভ। ১৯৮৮ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘শাহেনশাহ’ ছবির মাধ্যমে আবার অভিনয়জগতে ফিরে আসেন তিনি। তার পর ‘গঙ্গা যমুনা সরস্বতী’, ‘তুফান’, ‘জাদুগর’ এবং ‘ম্যায় আজাদ হুঁ’-এর মতো অমিতাভের একাধিক ছবি বক্স অফিসে মুখ থুব়ড়ে পড়ে।
পাঁচ বছরের জন্য অভিনয় থেকে সাময়িক বিরতি নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন অমিতাভ। ১৯৯৬ সালে ‘অমিতাভ বচ্চন কর্পোরেশন লিমিটেড (এবিসিএল) নামে একটি বিনোদন সংস্থা খোলেন অমিতাভ। ‘দেখ ভাই দেখ’-এর মতো জনপ্রিয় টেলিভিশন শো প্রযোজনার দায়িত্বে ছিল এই সংস্থা। কিন্তু সংস্থার সাফল্যের রেখচিত্র সর্বদা ঊর্ধ্বমুখী ছিল না।
অমিতাভের সংস্থার প্রায় ৯০ কোটি টাকার লোকসান হয়।সংস্থার তরফে একটি সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় অর্থ বিনিয়োগ করলে বিপুল লোকসান হয়। সেই সময় অমিতাভের কেরিয়ারও ছন্দে ছিল না। তাই সংস্থাকে ভরাডুবির হাত থেকে রক্ষা করতে পারেননি অভিনেতা।
সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে অমিতাভের আর্থিক এবং মানসিক অবস্থা নিয়ে কথা বলেছেন বলিউডের বর্ষীয়ান অভিনেতা অঞ্জন শ্রীবাস্তব। বাংলা এবং হিন্দি নাটকের পাশাপাশি ‘কভি হাঁ কভি না’, ‘রাজু বন গয়া জেন্টলম্যান’-এর মতো হিন্দি ছবিতেও অভিনয় করেছেন অঞ্জন।
অভিনয় ছাড়াও ব্যাঙ্কে কর্মরত ছিলেন অঞ্জন। সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, অমিতাভের বিনোদন সংস্থার অ্যাকাউন্ট তাঁর ব্যাঙ্কের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সর্বস্বান্ত অমিতাভ তখন ঋণশোধ করার জন্য একের পর এক ছবিতে অভিনয় করে চলেছেন। এমনকি তারকাখচিত ছবিতে পার্শ্বচরিত্রে অভিনয়ের জন্যও রাজি ছিলেন তিনি।
অঞ্জন জানান, অমিতাভ যখন দেনায় ডুবে গিয়েছিলেন সেই সময় অনেকেই তাঁর বিরুদ্ধে কুমন্তব্য করছিলেন। এমনকি বিনোদন সংস্থার কর্মীরাও অমিতাভের বিরুদ্ধে কুকথা বলতে পিছপা হননি। এমনটাই দাবি করেন অঞ্জন।
অমিতাভ যখন ‘তুফান’ ছবির শুটিংয়ে ব্যস্ত, সেই সময় ছবির সেটে অভিনেতার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন অঞ্জন। সেটে পৌঁছে তিনি অমিতাভের ব্যাপারে খোঁজ নেন।জানতে পারেন, অমিতাভের মানসিক অবস্থা ভাল নেই।
অমিতাভের সঙ্গে সেটে দেখা করতে যান অঞ্জন। অঞ্জনকে দেখামাত্রই নাকি হাতজোড় করে দাঁড়িয়ে পড়েন অমিতাভ। সাক্ষাৎকারে এমনটাই জানান অঞ্জন। হাতজোড় করে দাঁড়িয়ে করুণ চোখে অনুরোধ করতে শুরু করেন অমিতাভ।
অঞ্জন সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘‘অমিতাভ আমাকে দেখামাত্র হাতজোড় করে উঠে দাঁড়ান। তিনি বলেন, ‘‘কিছু মনে করবেন না। আমি ঠিক সময় মতো সব টাকা ফেরত দিয়ে দেব।’’ অমিতাভের আচরণ দেখে অবাক হয়ে যান অঞ্জন। তিনি যে অর্থ সংক্রান্ত কোনও কথা বলতে যাননি তা-ও অমিতাভকে জানান।
অমিতাভকে উত্তরে অঞ্জন বলেন, ‘‘আমি টাকাপয়সা নিয়ে কোনও কথা বলতে আসিনি। আপনি কেমন রয়েছেন তার খোঁজ নিতে এসেছিলাম।’’ অঞ্জনের কথা শুনে যেন অমিতাভ আবেগে ভেসে গিয়েছিলেন বলে জানান অঞ্জন।
অমিতাভ জানান যে টাকা নেওয়ার জন্য অনেকেই তাঁর বাড়ির সামনে ভিড় জমাচ্ছেন। তাঁকে কুকথা বলছেন। অমিতাভ বলেন, ‘‘আমার বাবার বন্ধুরা যাঁরা আমাকে ভালবাসতেন, তাঁরাও আমার নামে খারাপ কথা বলতে শুরু করেছেন।’’
অমিতাভ যে খারাপ পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন তা বুঝতে পেরেছিলেন অঞ্জন। তাই তিনি অমিতাভকে পরামর্শ দেন, ওই মুহূর্তে অমিতাভ যেন অন্য কোনও ব্যাঙ্কের সঙ্গে লেনদেন না করেন। অঞ্জন অমিতাভকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘‘আপনার উপর আমার ভরসা রয়েছে। আপনি ভাল মানুষ। আপনার সময় মতো আপনি টাকা ফেরত দিন। কোনও তাড়াহুড়ো নেই।’’
সেই সময়ে অমিতাভের জীবনে দেবদূতের মতো আসে ‘কৌন বনেগা ক্রোড়পতি’র শো। ২০০০ সালে এই অনুষ্ঠানে সঞ্চালনা করে প্রচুর অর্থ উপার্জন করেন তিনি। এ ছাড়া ‘মহব্বতেঁ’, ‘কভি খুশি কভি গম’-এর মতো ছবিতে অভিনয় করেও উপার্জন করেন তিনি।
শো এবং একাধিক হিন্দি হিট ছবিতে অভিনয় করে অমিতাভ যা পারিশ্রমিক পেয়েছিলেন তা দিয়ে নিজের কঠিন পরিস্থিতি পার করেছিলেন অভিনেতা।