রাতারাতি ভাগ্য বদলে গিয়েছিল হেমাঙ্গ জোশীর। তিনি জানতেও পারেননি যে, প্রধানমন্ত্রীর একদা ছেড়ে যাওয়া আসনে লোকসভা ভোটে প্রার্থী হতে চলেছেন তিনি। গুজরাতের সর্বকনিষ্ঠ এই প্রার্থীই লড়ছেন বরোদা আসনে।
দোলের দিন একটি গানের অনুষ্ঠান শুনছিলেন হেমাঙ্গ। আচমকাই একের পর এক ফোন আসতে থাকে। সকলেই অভিনন্দন জানাতে থাকেন। তখনই হেমাঙ্গ জানতে পারেন, বরোদায় তাঁকে প্রার্থী করেছে বিজেপি।
গুজরাতে ২৬টি লোকসভা আসন রয়েছে। বিজেপির ২৬ জন প্রার্থীর মধ্যে ৩৩ বছরের হেমাঙ্গই সর্বকনিষ্ঠ।
২০১৪ সালে প্রথম বার লোকসভা নির্বাচনে লড়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। বারণসীর পাশাপাশি গুজরাতের এই বরোদা থেকে প্রার্থী হয়ে জিতেছিলেন তিনি। পরে বরোদা আসন ছেড়ে দেন। সেই প্রসঙ্গ তুলেই হেমাঙ্গ জানিয়েছেন, বড় জুতোয় পা গলিয়েছেন তিনি।
গুজরাতের সব আসনে তৃতীয় দফায়, ৭ মে ভোট। হেমাঙ্গ জানিয়েছেন, এখন তাঁর লক্ষ্য প্রধানমন্ত্রীর ছেড়ে যাওয়া আসনে ১০ লক্ষ ভোটে জেতা। এই লক্ষ্য স্থির করে দিয়েছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সিআর পাতিল।
তবে হেমাঙ্গ জানিয়েছেন, বরোদার টিকিট পাওয়া তাঁর কাছে স্বপ্নের মতো। তাঁর কথায়, ‘‘স্বপ্নেও ভাবিনি। টিকিট পেয়েছি শুনে বিস্মিত হই।’’
টিকিট পাওয়ার কথাও ছিল না হেমাঙ্গের। যদি না বিদায়ী সাংসদ রঞ্জন ভট্ট ভোটে প্রার্থী হওয়া থেকে পিছিয়ে যেতেন। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বরোদা আসন থেকে জয়ী হওয়ার পর ছেড়ে দেন মোদী। উপনির্বাচনে জেতেন রঞ্জন।
২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে আবার জয়ী হন রঞ্জন। বিজেপির টিকিটে তৃতীয় বার লড়াইয়ের জন্য তৈরি হচ্ছিলেন মহিলা প্রার্থী। তার মাঝে আচমকাই জানিয়ে দেন, এ বার লোকসভা ভোটে লড়বেন না তিনি।
দলীয় সূত্রে খবর, বরোদায় বিজেপির অন্তর্দ্বন্দ্বের কারণেই পিছিয়ে এসেছেন রঞ্জন। এক দিন পরেই ওই আসনে বিজেপির প্রাক্তন ছাত্রনেতা হেমাঙ্গের নাম ঘোষণা করে বিজেপি।
হেমাঙ্গ বলেন, ‘‘বরোদা আসনে সরকারি ভাবে নাম ঘোষণার আগে আমায় কেউ এ বিষয়ে কিছু জানাননি। আমি এবং আমার স্ত্রী চাকরি করি। একসঙ্গে কোথাও বেড়ানোর সুযোগ পাই না। দোলের দিন সুরাসাগর লেকে একটা গানের অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম। তখনই খবরটা পাই।’’
তরুণ বিজেপি প্রার্থী জানিয়েছেন, দল তাঁকে সব রকমের সাহায্য করেছে। তাঁর অন্যতম ভরসা এখন তরুণ ভোটব্যাঙ্ক। এ প্রসঙ্গে বিজেপির নির্বাচনী ইস্তাহারের কথাও তুলে ধরেছেন তিনি, যেখানে মোদী যুবসমাজকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন।
হেমাঙ্গ বলেন, ‘‘গুজরাতের শিক্ষাকেন্দ্র হল বরোদা। আমাদের এমএস বিশ্ববিদ্যালয়, কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, ক্রীড়া বিশ্ববিদ্যালয়, গতিশক্তি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে, যেখানে দু’লক্ষের বেশি ছাত্রছাত্রী পড়াশোনা করেন। ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ ভোটার এখানে তরুণ। তাঁরাই আমার লক্ষ্য।’’
রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সঙ্ঘ (আরএসএস)-এর ছাত্র শাখা অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের সদস্য ছিলেন হেমাঙ্গ। মহারাজা সায়জিরাও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলেন তিনি।
আইআইএম আমদাবাদ থেকে ‘লিডারশিপ ইন এডুকেশন’ নিয়ে একটি কোর্স করেছেন হেমাঙ্গ। এখন পিএইচডি করছেন। তাঁর স্ত্রী একটি মেডিক্যাল কলেজের অধ্যাপক।
১৯৯৮ সাল থেকে গুজরাতের বরোদা আসনে হারেনি বিজেপি। ১৯৯১ সাল থেকে এই কেন্দ্রের সাংসদ হয়েছেন দুই মহিলা প্রার্থী। এ বার হেমাঙ্গের বিরুদ্ধে কংগ্রেসের প্রার্থী যশপালসিংহ পাধিয়ার। তিনি প্রাক্তন বিধায়ক।
হেমাঙ্গ আত্মবিশ্বাসী যে, বরোদা আসনে তিনি জয়ী হবেনই। লক্ষ্য শুধু জয়ের ব্যবধান বৃদ্ধি। সেই বিষয়েও এক প্রকার নিশ্চিত হেমাঙ্গ। কেন, তা-ও জানিয়েছেন নিজেই। তাঁর কথায়, ‘‘এটা নরেন্দ্র মোদীর জন্য নির্বাচন। বরোদার লোকজন হেমাঙ্গ জোশীকে নয়, নরেন্দ্র মোদীকে ভোট দেবেন, তৃতীয় বার তাঁকে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করার জন্য।