মঙ্গলবার বিজেপির নবান্ন অভিযান ঘিরে সরগরম রাজ্য রাজনীতি। পুলিশি পদক্ষেপ নিয়ে ক্ষোভপ্রকাশ করেছেন বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব। তৃণমূল আবার পাল্টা খোঁচা দিয়েছে অভিযানের বহর নিয়ে। তাদের দাবি, সাধারণ মানুষের ওপর কোনও প্রভাবই পড়েনি।
বিজেপির নবান্ন অভিযানের কারণে কলকাতা, হাওড়ায় মোতায়েন ছিল বিশাল পুলিশ বাহিনী। এই প্রসঙ্গে বিজেপি সাংসদ দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘আমি তো অবাক হয়ে যাচ্ছি পশ্চিমবঙ্গে এত পুলিশ কোথা থেকে এল? কয়লার গাড়ি, গরুর গাড়ি যাচ্ছে, তখন পুলিশ দেখা যায় না। পাড়ায় অশান্তি, বোম পড়লে থানায় ফোন করলে বলে ফোর্স নেই। আজ বিজেপির কর্মসূচি রয়েছে। এত পুলিশ কি বিহার, ঝাড়খণ্ড থেকে এসেছে নাকি! আমরা মিটিং করলে নাকি ঝাড়খণ্ড থেকে লোক নিয়ে আসি। আজ তা ঠেকাতে তৃণমূলকে বিহার, ঝাড়খণ্ডের পুলিশ আনতে হচ্ছে নাকি? যদি এত পুলিশ থাকে তাহলে বাংলায় এত অপরাধ হচ্ছে কেন? গুজরাতের পুলিশ এখান থেকে মাদক পাচারকারীদের ধরে নিয়ে যায়, মিজোরামের জঙ্গি ধরা পড়ে এখানে, পুলিশ কী করে তখন? কেবল বিজেপিকে আটকানোর জন্য আছে?’’
দিলীপ ঘোষ এ-ও স্পষ্ট জানিয়েছেন, বিজেপি আন্দোলন থামাবে না। তাঁর কথায়, ‘‘রাস্তা খুঁড়ে ব্যারিকেড লাগিয়েছে পুলিশ। বিজেপি কার্যকর্তারা উগ্রপন্থী নাকি? আমরা গণতান্ত্রিক শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করতে যাচ্ছি, করব। যদি বাধা আসে রাস্তায় বসে ধর্না দেব, অবরোধ করব। আমরা মারপিট করতে আসিনি। ইচ্ছা করে পুলিশ দিয়ে তৃণমূল উত্তেজনা ছড়িয়ে বিজেপিকে বদনাম করতে চেষ্টা করছে। সেটা আমরা করতে দেব না।’’
তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ আবার বিজেপির অভিযানের সাফল্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। অভিযানে যথেষ্ট লোক হয়নি বলেও মন্তব্য করেছে। সোমবারও তিনি জানিয়েছিলেন, বিজেপি ‘নাটক’ করছে। লোকজনের সাড়া পাচ্ছে না বলে এ সব করেছে। পুলিশের বিরুদ্ধে বিজেপি কর্মীদের বাধা দেওয়ার অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন।
মঙ্গলবার নবান্ন অভিযান প্রসঙ্গে কুণাল বলেন, ‘‘এত হাঁকডাক করেও তো এত কম লোক। সব মিলিয়ে তো হবে মোটে ৯১৮ জন। তাই নিয়ে নাকি নবান্ন অভিযানে যাবে বিজেপি!’’
মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ পিটিএসের সামনে আটকে দেওয়া হয় বিজেপি বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী, সংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়কে। সেখানে পুলিশের সঙ্গে বিবাদে জড়ান শুভেন্দু। মঙ্গলবার তাঁকে আটকানোর সময় কলকাতা পুলিশের শীর্ষ আধিকারিকরা যেভাবে ‘লেডি পুলিশ’ ব্যবহার করেছেন, তাতে ক্ষুব্ধ হন বিরোধী দলনেতা। লালবাজারে পুলিশি হেফাজত থেকেই হুগলির সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়ের ফেসবুক প্রোফাইল থেকে লাইভ করেন তিনি। সেখানে শুভেন্দু কলকাতা পুলিশের মহিলা বাহিনীকে ‘গুন্ডি’ বলে আখ্যা দেন। অভিযোগ করেন, মহিলা পুলিশকর্মীরা তাঁর গায়ে হাত দিচ্ছেন। শুভেন্দুর কথায়, ‘‘এখানে সব লেডি পুলিশকর্মী। তাঁরা আমার গায়েও হাত দিচ্ছেন। এটা তাঁরা করতে পারেন না। আপনাদের বিরুদ্ধে আমি আদালতে যাব।’’
মিছিলে যোগ দেওয়ার আগেই আটক হন শুভেন্দু। সেই নিয়ে কটাক্ষ করে কুণাল বলেন, ‘‘অভিযানের শুরুতেই গাড়িতে উঠে গেলেন? যাঁর এত কথা, বিরোধী দলনেতা নাকি যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন। পুলিশ ঘিরেছে, বাধা দেবেন না? দিলীপ ঘোষ বলেছিলেন বাধা দিলে রাস্তায় বসতে হবে। শুভেন্দু তো নিজেই গিয়ে পুলিশের গাড়িতে উঠে বসলেন। একটা আস্ত আলুভাতে।’’
শুভেন্দুকে পুলিশ আটক করলে তিনি বলেন, ‘‘আমাকে কেন আটকানো হচ্ছে? এটাকে উত্তর কোরিয়া করে দিয়েছেন। করুন, গ্রেফতার করুন। আমি এখনই হাই কোর্টে যাব।’’
পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ মানেনি তৃণমূল সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদার। তিনি বলেন, ‘‘গুন্ডামিতে সেরা বাংলার বিজেপি! তারা কি পুরোপুরি তাদের মস্তিষ্ক হারিয়ে ফেলেছে? পুলিশকর্মীদের ঢিল ছুড়লেই কি শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ বোঝায়?’’
হাওড়ায় পুলিশি আটকের মুখে পড়ে রাস্তায় বসে পড়েন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। বলেন, ‘‘গুলি খেতে তৈরি।’’
সৌগত রায় বলেন, ‘‘বিজেপি জমাতে পারেনি। লোক যথেষ্ট ছিল না। বড় হিংসার ঘটনা চাইছিল বিজেপি। কিন্তু পুলিশ জলকামান দিয়েই পরিস্থিতি আয়ত্তে এনেছে। শুভেন্দু তো পুলিশের গাড়িতে গিয়ে বসে পড়ল। আর সুকান্ত রাস্তায় বসেই রইল।’’
খড়্গপুরে দলীয় কর্মীদের একটি সভায় বিজেপির নবান্ন অভিযান নিয়ে তীব্র কটাক্ষ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একটি সূত্রে দাবি, মমতা বলেন, ‘‘বিজেপির বেলুন ফুস হয়ে গিয়েছে। তৃণমূল স্তরে কোনও লোক নেই ওদের। ফ্লপ হয়ে গিয়েছে। ফিউজ হয়ে গিয়েছে।’’
পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভপ্রকাশ করে দুপুর ২টো ৪০ মিনিট নাগাদ নবান্ন অভিযান শেষ বলে ঘোষণা করেন বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তৃণমূল আবার বিজেপির এই কর্মসূচিকে পাত্তাই দিতে চায়নি। বরাহনগরের বিধায়ক তাপস রায় বলেন, ‘‘কোথায় বিজেপির নবান্ন অভিযান! আমি তো সকালে বাড়ি থেকে বেরিয়ে বেলঘড়িয়ায় নিজের ব্যক্তিগত কাজ সেরে নিজের বিধানসভা কেন্দ্র বরাহনগরে এসে কাজ করছি। কোথাও তো অভিযানের লেশমাত্র দেখলাম না।’’
সেচমন্ত্রী পার্থ ভৌমিকও একই সুরে জানিয়ে দিলেন, নবান্ন অভিযান বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। বলেন, ‘‘আমি না বাগজোলা খাল দেখছি। সকাল থেকে উত্তর ২৪ পরগনা থেকে খাল দেখার কাজ শুরু করেছি। বিকেল পর্যন্ত তাই চলছে। আমি বিজেপির অভিযান কিছুই দেখিনি।’’