২০০৪ সাল থেকে হায়দরাবাদ লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ আসাদউদ্দিন ওয়েইসি। তার আগে ওই আসনে জিতেছিলেন ওয়েইসির বাবা সুলতান সালাহ্উদ্দিন ওয়েইসি। ওয়েইসি পরিবারের ‘গড়’ বলে পরিচিত সেই হায়দরাবাদ কেন্দ্রে এ বার বিজেপির প্রার্থী কোম্পেলা মাধবীলতা। কে তিনি?
হায়দরাবাদ লোকসভা কেন্দ্রের মোট জনসংখ্যার ৭০ শতাংশ মুসলমান। সেখানে সহজেই ২০ বছর ধরে জয়ী হয়ে এসেছেন অল ইন্ডিয়া মজলিশ-এ-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন (এমআইএম) প্রধান ওয়েইসি।
১৯৮৪ সাল থেকে হায়দরাবাদ লোকসভা কেন্দ্র এমআইএমের দখলে। ২০১৯ সালে বিজেপি প্রার্থী ভগবন্ত রাওকে ২ লক্ষ ৮২ হাজার ভোটে হারিয়েছিলেন ওয়েইসি। সেই আসনে ওয়েইসির সঙ্গে লড়াই সহজ নয়।
লড়াইয়ের দায়িত্ব ৪৯ বছরের মাধবীলতার উপরেই দিয়েছে বিজেপি। দলের একাংশ বলছে, হিন্দু ভোট পকেটে পুরতেই এই পদক্ষেপ শীর্ষ নেতৃত্বের। হিন্দুত্ব নিয়ে একাধিক প্রচার করেছেন মাধবীলতা। পেশায় ধ্রুপদী নৃত্যশিল্পী। পাশাপাশি, উদ্যোগপতিও। ওসমানিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর করেছেন তিনি।
কঠিন লড়াই আঁচ করেই মাধবীলতার সমর্থনে এগিয়ে এসেছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী। সমাজমাধ্যমে তাঁর হয়ে পোস্ট করেছেন। সম্প্রতি টিভি চ্যানেলে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন মাধবীলতা। সেখানে দাবি করেন, ওয়েইসিকে দেড় লক্ষ ভোটে হারাবেন। তা নিয়ে মাধবীলতার প্রশংসা করেছেন মোদী।
মোদী এক্সে লিখেছেন, ‘‘মাধবীলতাজি, আপনার ‘আপ কি আদালত’ পর্ব ছিল ব্যতিক্রমী। আপনি জোরদার কিছু বিষয় তুলে ধরেছেন। যুক্তি দিয়ে বলছেন। আপনাকে আমার শুভেচ্ছা রইল। আমি সকলকে এই অনুষ্ঠানের পুনঃসম্প্রচার দেখার অনুরোধ করব। অনেক তথ্য জানতে পারবেন আপনারা।’’
প্রধানমন্ত্রীর এই পোস্ট দেখে হতবাক মাধবীলতা। নিজেই জানিয়েছেন, বিষয়টি প্রথমে বিশ্বাসই করতে পারেননি তিনি।
একটি সংবাদমাধ্যমকে মাধবীলতা বলেন, ‘‘যখন প্রধানমন্ত্রীর টুইট দেখলাম, তখন প্রথমে দু’মিনিট বিশ্বাসই করতে পারিনি। ব্যস্ততার মাঝে সময় বার করে আমার প্রশংসা করেছেন মোদীজি। আমি ভাবতেই পারছি না! কেন এই দেশ তাঁর মতো মহান নেতার নেতৃত্বে উন্নতি করবে না?’’
মাধবীলতা আরও জানিয়েছেন, তাঁর সাক্ষাৎকার সম্প্রচারের পর বহু মানুষ প্রশংসা করেছেন। তাঁর নিজের কেন্দ্রের হিন্দু ভোটারদের পাশাপাশি মুসলিম ভোটারেরাও প্রশংসা করেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘আমার লোকসভা কেন্দ্রে দু’রকম ভাবনাচিন্তা নেই। হায়দরাবাদের মানুষ নিশ্চয়ই আমাকে আশীর্বাদ করবেন।’’
সাক্ষাৎকারে কী বলেছেন মাধবীলতা? তিনি মোদীকে এ যুগের ‘মহাযোগী’ বলেন। তিনি এ-ও জানিয়েছেন যে, তিনি ভাগ্যবান। এ বার মোদীর সঙ্গে দেখা করতে পারবেন।
হায়দরাবাদ লোকসভা কেন্দ্রে এই প্রথম কোনও মহিলাকে প্রার্থী করল বিজেপি। ‘তিন তালাক’-এর বিরুদ্ধে বিজেপির যে আন্দোলন ছিল, তার মুখ ছিলেন মাধবীলতা। ২০১৯ সালে হায়দরাবাদে ‘তিন তালাক’-এর বিরুদ্ধে একাধিক জনসভা করেছিলেন।
মাধবীলতার স্বামী বিশ্বনাথ ‘বিরিঞ্চি হাসপাতাল’ চালু করেছিলেন। সেই হাসপাতালের চেয়ারপার্সন বিজেপি প্রার্থী। বহু বছর ধরে সমাজসেবার সঙ্গে যুক্ত। হিন্দু ধর্ম নিয়েও বিভিন্ন সভা-সমিতিতে ভাষণ দেন তিনি।
বিজেপির প্রথম প্রার্থী তালিকাতেই নাম ছিল মাধবীলতার। তিনি সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘‘আমায় না চিনে শুধু সমাজসেবার ভিত্তিতেই আমাকে টিকিট দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। বুঝেছেন, আমি ওয়েসিজির বিরুদ্ধে লড়তে পারব। এর থেকে স্বচ্ছ রাজনীতি আর কী হতে পারে?’’
সাক্ষাৎকারে ওয়েইসির বিরুদ্ধেও আঙুল তুলেছেন মাধবীলতা। দাবি করেছেন, অনৈতিক ভাবে ভোটে জিতেছেন তাঁর প্রতিপক্ষ।
মাধবীলতাকে বলা হয়েছিল, শেষ ৪০ বছর ধরে হায়দরাবাদে ভোটে জিতেছে ওয়েইসি পরিবার। তিনি জানিয়েছেন, ‘ভুয়ো ভোট’ থাকলে ৪০ কেন, ৪০০০ বছর ধরে জেতা সম্ভব।
বিজেপি নেত্রীর দাবি, গত লোকসভা নির্বাচনে ৬ লক্ষ ২০ হাজার ‘ভুয়ো ভোট’ ছিল ওয়েইসির। শুধু চারমিনার এলাকাতেই ১ লক্ষ ৬০ হাজার ‘ভুয়ো ভোট’ পেয়েছেন ওয়েইসি। তার পরেই মাধবীলতার হুঁশিয়ারি, এই লোকসভা নির্বাচনে ওয়েইসিকে দেড় লাখ ভোটে হারাবেন তিনি। ১৫ মে ভোট সেখানে। হায়দরাবাদে ৪০ বছরের ‘ওয়েইসি-রাজ’ কি শেষ করতে পারবেন মাধবীলতা? জানা যাবে ৪ জুন।