লন্ডনের মাটিতে প্রথম জগন্নাথ মন্দির গড়ার জন্য আড়াই কোটি পাউন্ড দান করার কথা ঘোষণা করেছেন বিশ্বনাথ পট্টনায়ক নামে ওড়িশার এক ধনকুবের। ভারতীয় মুদ্রায় যার অর্থমূল্য প্রায় আড়াইশো কোটি টাকা।
রবিবার অক্ষয় তৃতীয়া তিথিতে এই ঘোষণার পরেই রাতারাতি শিরোনামে উঠে এসেছেন আমজনতার কাছে আপাত অখ্যাত বিশ্বনাথ। কে এই ধনকুবের? তাঁর কাজকারবারই বা কী? বিপুল অর্থের মালিকই বা কী ভাবে হয়ে উঠলেন? এমন নানা প্রশ্ন ঘোরাফেরা করছে তাঁদের মনে।
সংবাদমাধ্যমের দাবি, বিদেশের মাটিতে জগন্নাথ মন্দির গড়ার কাজে এর আগে কখনও এই বিপুল পরিমাণ অর্থ দান করা হয়নি। স্বাভাবিক ভাবেই শিরোনাম কেড়ে নিয়েছেন বিশ্বনাথ।
সংবাদ সংস্থা পিটিআইয়ের কাছে ব্রিটেনের শ্রীজগন্নাথ সোসাইটি জানিয়েছে, রবিবার ব্রিটেনে প্রথম জগন্নাথ সম্মেলনে ওই অর্থদানের ঘোষণা করেন ধনকুবের। পরের বছর লন্ডনে ওই মন্দিরের প্রথম পর্বের কাজ শেষ হওয়ার কথা। এ কাজে ব্রিটেনের জগন্নাথ-ভক্তেরাও সম্মিলিত হয়ে কাজ করবেন বলে মনে করা হচ্ছে।
সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে দাবি, আড়াইশো কোটির মধ্যে ইতিমধ্যেই ৭০ কোটি টাকা আলাদা করে রাখা হয়েছে। তা দিয়ে লন্ডনে জগন্নাথ মন্দিরের জন্য প্রায় ১৫ একর জমি কেনা হবে।
ব্রিটেনে ওই সোসাইটির চেয়ারপার্সন সহদেব স্বৈন এবং বিশ্বনাথের সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর অরুণ করকে উদ্ধৃত করে পিটিআই জানিয়েছে, মন্দিরের জন্য লন্ডনে ইতিমধ্যেই জমি চিহ্নিত করা হয়েছে।
সংবাদ সংস্থা সূত্রে খবর, ইতিমধ্যেই মন্দিরের জন্য জমি কেনার শেষ পর্যায়ের কাজ চলছে। পাশাপাশি, স্থানীয় কাউন্সিলের কাছে এই পরিকল্পনা সংক্রান্ত আবেদনপত্রও জমা দেওয়া হয়েছে।
এই মন্দির গড়ার কাজ শেষ হলে একে ঘিরে যে ইউরোপে ভক্ত তথা পর্যটকদের আনাগোনা বাড়বে, আশা করেছেন সহদেব। তবে এত কিছুর মধ্যে ধনকুবের বিশ্বনাথের সম্পর্কে জানার জন্য কৌতূহলী অনেকেই। কে তিনি?
সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, স্নাতকস্তরে অর্থনীতি নিয়ে পড়াশোনা করা ওড়িশার এই উদ্যোগপতির এলএলবি এবং এমবিএ ডিগ্রি রয়েছে। এককালে বিভিন্ন সংস্থায় কাজও করেছেন তিনি।
ব্যাঙ্কার হিসাবে দীর্ঘ দিন ধরে কাজ করা বিশ্বনাথ সেখানেও সাফল্য পেয়েছেন বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যমগুলি। ২০০৯ সালে উদ্যোগপতি হিসাবে আত্মপ্রকাশ ঘটে তাঁরা। সে বছর চাকরি ছেড়ে নিজের সংস্থা গড়ার কাজে মন দেন।
বিদেশের মাটিতে বসে এক বার একটি সাক্ষাৎকারে বিশ্বনাথ বলেছিলেন, ‘‘(২০০৯ সালে) সে সময় নিজে কিছু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। ভারতের মাটিতে একাধিক সংস্থা গড়ে তুলি। পাশাপাশি, দু’টি সংস্থা অধিগ্রহণও করেছিলাম। তার মধ্যে একটির বিএসসি-তে নথিভুক্ত, অন্যটির অনুমোদন দিয়েছিল রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া ।’’
২০১৪ সাল পর্যন্ত ওই সংস্থাগুলিতেই মনোনিবেশ করেছিলেন বিশ্বনাথ। এই মুহূর্তে বিশ্বের বহু দেশে বিশ্বনাথের ব্যবসা ছড়িয়েছে।
স্বাস্থ্য পরিষেবা, ভোগ্যপণ্য, ফিনটেক, সৌরশক্তি থেকে শুরু করে স্বর্ণশোধনাগার বা দুবাইয়ে বুলিয়ন ট্রেডিংয়ের ব্যবসা— নানা ক্ষেত্রেই পা রেখেছেন তিনি। উদ্যোগপতি হিসাবে বিশ্বনাথের পোর্টফোলিয়োতে জুড়ে রয়েছে বিভিন্ন ক্ষেত্র।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের গোড়ায় বৈদ্যুতিন হাইড্রোজ়েন ট্রাক তৈরির জন্য ৫০০ কোটি টাকার বিনিয়োগের পরিকল্পনা করেন তিনি। নিজের রাজ্যে ওড়িশায় ওই গাড়ি তৈরির কারখানা গড়া হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, বিশ্বনাথের সম্পর্কে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে আমেরিকার একটি প্রথম সারির বাণিজ্য পত্রিকাও। ওই পত্রিকার প্রচ্ছদেও উঠে এসেছিলেন তিনি।
শিল্পপতি হিসাবে নাম কেনার পাশাপাশি দানধ্যানেও মন দিয়েছেন বিশ্বনাথ। ইউনেস্কোর হাত ধরে এ দেশেও নানা ক্ষেত্রে দান করেছেন বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম। ডিএনএ ইন্ডিয়া জানিয়েছে, দারিদ্র্যসীমার নীচে থাকা এ দেশের অন্তত ৫০০ মেয়ের পড়াশোনার খরচের দায়িত্ব নিয়েছেন বিশ্বনাথ।