পৃথিবীর গণ্ডি ছাড়িয়ে মানববসতের তোড়জোড় শুরু হয়েছে চাঁদ ও মঙ্গলে। বিজ্ঞানীদের দাবি, এক-দেড় দশকের মধ্যেই শুরু হয়ে যাবে চাঁদ ও মঙ্গলে উপনিবেশ গড়ার কাজ। মঙ্গলে উপনিবেশ স্থাপনের জন্য পৃথিবীর একাধিক দেশের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নিরলস গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে। চিন এবং আমেরিকা খুব দ্রুত পৃথিবীর পড়শি গ্রহে মানুষের বাসযোগ্য পরিবেশ তৈরি করা যায় কি না, তা নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা চালাচ্ছে।
দু’দশকেরও বেশি সময় ধরে মঙ্গলকে ক্রমাগত নজরে রেখে চলেছে আমেরিকা। আমেরিকার গবেষণা সংস্থা নাসা একাধিক মহাকাশযান পাঠিয়েছে মঙ্গলে। ২০২১ সাল থেকে মঙ্গলে রয়েছে চিনা মহাকাশযান তিয়ানওয়েনও।
২০৩০ সালের মধ্যেই মঙ্গল গ্রহে মানুষ পাঠানোর পরিকল্পনা করছে মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা। তবে মঙ্গলে বসতি স্থাপনের আগেই সাবধানবাণী শোনালেন জীববিজ্ঞানীরা। মঙ্গলের বুকে মানুষের স্থায়ী বসবাস নিয়ে এ বার সতর্কবার্তা দিলেন এক জীববিজ্ঞানী।
২০৩০ সালের মধ্যেই মঙ্গল গ্রহে মানুষ পাঠানোর পরিকল্পনা করছে মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা। তবে মঙ্গলে বসতি স্থাপনের আগেই সাবধানবাণী শোনালেন জীববিজ্ঞানীরা। মঙ্গলের বুকে মানুষের স্থায়ী বসবাস নিয়ে এ বার সতর্কবার্তা দিলেন এক জীববিজ্ঞানী।
আমেরিকার টেক্সাসের রাইস ইউনিভার্সিটির জীববিজ্ঞানী স্কট সলোমন সম্প্রতি এক গবেষণায় জানিয়েছেন, মঙ্গল গ্রহে মানববসতি গড়ে উঠলে বিবর্তন হবে মানুষের। মঙ্গলে মানুষ থাকতে শুরু করলে সবুজ বর্ণ ধারণ করতে পারে, কমতে পারে দৃষ্টিশক্তি। এমন আশঙ্কার কথাই শুনিয়েছেন তিনি।
সলোমনের দাবি, মঙ্গল গ্রহে মানুষ থাকতে শুরু করলে পরবর্তী প্রজন্মের শিশুদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য বিবর্তন ও অভিযোজন লক্ষ করা যাবে। যে কারণে পাল্টে যেতে পারে গায়ের রং। দেখা দিতে পারে অন্ধত্বও।
সলোমন তাঁর বই, ‘ফিউচার হিউম্যানস’-এ দাবি করেছেন যে মঙ্গল গ্রহের আবহাওয়া প্রতিকূল হওয়ায় লালগ্রহে মানুষের বেঁচে থাকা কঠিন হতে পারে। তিনি লিখেছেন যে মঙ্গল গ্রহে মানববসতি স্থাপন হওয়ার পর সেখানে যে সন্তান জন্মাবে তাদের পরবর্তী সময়ে নানা জটিল পরিব্যক্তি (মিউটেশন), বিবর্তন ও পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
কেন এই বিবর্তনের ও পরিবর্তন আসতে পারে মানবদেহে? তার উত্তর রয়েছে স্কটের বইতেই। মানুষের দেহে পরিব্যক্তি বা মিউটেশনের অর্থ হচ্ছে ডিএনএ গঠনের স্থায়ী পরিবর্তন। মঙ্গলের কম অভিকর্ষ ও মহাজাগতিক রশ্মির উচ্চ বিকিরণের কারণে নানা পরিব্যক্তি ঘটবে মানবশরীরে। এমনটাই আশঙ্কা করেছেন তিনি।
মঙ্গল গ্রহ পৃথিবীর চেয়ে আকারে ছোট এবং মানুষ যা অভ্যস্ত তার চেয়ে ৩০ শতাংশ কম মাধ্যাকর্ষণ আছে। এ ছাড়াও লালগ্রহটিতে অভাব রয়েছে চৌম্বক ক্ষেত্র এবং ওজ়োন স্তরেরও। ওজ়োন স্তরটি মহাকাশ বিকিরণ, অতিবেগনি আলো, সূর্য থেকে আধানযুক্ত কণা এবং মহাজাগতিক রশ্মির হাত থেকে মানবশরীরকে রক্ষা করে থাকে।
কম মাধ্যাকর্ষণ শক্তির ফলে ভঙ্গুর হাড়গুলি প্রসবের সময় জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে, মহিলাদের শ্রোণীদেশে (পেলভিস) ফাটল সৃষ্টি করতে পারে বলেও আশঙ্কা করেছেন তিনি। মঙ্গলে জন্মানো নবজাতকের পেশি ও দৃষ্টিশক্তি দুর্বল এবং হাড় ভঙ্গুর হতে পারে।
সলমনের দাবি, বিকিরণের হাত থেকে নিজেদের বাঁচাতে গায়ের রঙেরও বিবর্তন ঘটবে মানবদেহে। বিকিরণের সঙ্গে মোকাবিলা করতে এই পরিব্যক্তির ফলে নতুন ধরনের ত্বকের রং পেতে পারে মানবদেহ।
সলমনের আরও দাবি, ভিন্গ্রহে দূরের জিনিস দেখার প্রয়োজনীয়তা কমবে। সে কারণে দৃষ্টিশক্তি দুর্বল হতে শুরু করতে পারে, কারণ মানুষ ঘনসন্নিবদ্ধ হয়ে বাস করবে লালগ্রহে।
অস্ট্রেলিয়ান সেন্টার ফর স্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং রিসার্চের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল ২০৫০ সালের মধ্যেই মানুষ মঙ্গল গ্রহে জনবসতি গড়ে তুলতে পারবে। লালগ্রহ নিয়ে লাগাতার গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে আমেরিকার ধনকুবের ইলন মাস্কের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ‘স্পেস এক্স’ও।
বহু বছর ধরেই মঙ্গল গ্রহে বসতি তৈরির স্বপ্ন দেখছে তাঁর সংস্থা।
পৃথিবীর পড়শি গ্রহ মঙ্গলে মহাকাশযান পাঠানোর তোড়জোড় শুরু করেছে ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরোও।
মঙ্গলের মাটিতে পরীক্ষানিরীক্ষা চালানোর জন্য এই মহাকাশযানের সঙ্গে মোট চারটি পেলোড পাঠাবে ইসরো। সেগুলি মঙ্গলের আবহাওয়া, মাটি পর্যবেক্ষণ করবে এবং সেই সংক্রান্ত অজানা তথ্য সংগ্রহ করবে।