মাইক্রোসফ্ট এবং অ্যাপল। বিশ্ববাজারে পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বী এই দুই তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা বিশ্বের সবচেয়ে মূল্যবান দুই সংস্থাও বটে।
কিন্তু প্রায় ২৭ বছর আগে স্টিভ জোবসের সেই অ্যাপলকেই ডুবে যাওয়ার হাত থেকে বাঁচিয়েছিল বিল গেটসের মাইক্রোসফ্ট।
কোটি কোটি ডলার দিয়ে নাকি অ্যাপলের মাথা থেকে ঋণের বোঝা নামিয়েছিল মাইক্রোসফ্ট। সে সময় মাইক্রোসফ্ট সাহায্যের হাত না বাড়িয়ে দিলে বছরের পর বছর ধরে অত্যাধুনিক মোবাইল, ল্যাপটপ তৈরি করা তো দূর অস্ত্, কোনও দিন মাথা তুলে দাঁড়াতেই পারত না অ্যাপল।
মাইক্রোসফ্ট এবং অ্যাপল— এই দুই সংস্থা আমেরিকার বাজারে আসে এক বছরের ব্যবধানে। ১৯৭৫ সালের ৪ এপ্রিল মাইক্রোসফ্ট প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। অন্য দিকে, অ্যাপল তৈরি হয়েছিল ১৯৭৬ সালের ১ এপ্রিল।
কম সময়ের ব্যবধানেই বাজারে সুনাম তৈরি করে ফেলেছিল দুই তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা। এর পর শুরু হয় তাদের এক নম্বর হওয়ার দৌড়। শীর্ষে পৌঁছনোর তাগিদে একে অপরকে নিয়ে কটাক্ষ এবং উপহাস করতেও ছাড়েনি দুই সংস্থা।
তবে এই ‘তু তু ম্যায় ম্যায়’-এর বেশির ভাগই চলত বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে। একে অপরের সঙ্গে আইনি বিরোধেও জড়িয়ে পড়েছিল দুই সংস্থা।
কিন্তু তা সত্ত্বেও অ্যাপলকে বাঁচিয়েছিল সেই মাইক্রোসফ্টই। ১৯৭৬ সালে আকারে ছোট, কম জটিল এবং সস্তা কম্পিউটার তৈরির লক্ষ্য নিয়ে বাজারে নামে অ্যাপল। মাত্র চার বছর অর্থাৎ, ১৯৮০ সালের মধ্যে এই সংস্থা বিশ্বের অন্যতম পরিচিত সংস্থা হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে।
অ্যাপলের নামডাক হওয়ার নেপথ্যে প্রধান মাথা ছিল জোবসের। তবে ১৯৮৫ সালে কোম্পানির বোর্ড এবং তৎকালীন সিইও জন স্কুলির সঙ্গে ক্ষমতার দীর্ঘ লড়াইয়ের পর জোবস অ্যাপল ছেড়ে বেরিয়ে আসেন।
এর পর ধস নামে অ্যাপলে। নতুন প্রযুক্তি তৈরিতে ব্যর্থ হয় তারা। একই সঙ্গে সেই সংস্থার তৈরি কম্পিউটার নিয়ে একের পর এক অভিযোগ উঠে আসে।
১৯৮৬ সালের শেষের মধ্যে বাজারে বর্তমান বাজার মূল্যে সাত হাজার কোটিরও বেশি টাকা খুইয়ে ফেলে অ্যাপল। দেউলিয়া হয়ে যাওয়ার দোরগোড়ায় পৌঁছে যায় সংস্থা।
তখনই অ্যাপলের উদ্ধারকর্তা হয়ে আসরে নামে মাইক্রোসফ্ট। রাতারাতি অ্যাপলের হাজার হাজার শেয়ার কিনে নেয় মাইক্রোসফ্ট। তিন বছর নিজের কাছে শেয়ারগুলি রেখে তা বিক্রি করে দেওয়ারও প্রতিশ্রুতি দেন গেটস। সেই মতো গেটস ২০০৩ সালে শেয়ারগুলি বিক্রি করে দিয়েছিলেন।
কিন্তু কেন অ্যাপলের প্রতি এত উদার হয়েছিলেন গেটস। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, অতীতে টাকার বিনিময়ে মাইক্রোসফটে্র বিরুদ্ধে একটি মামলা তুলে নিয়েছিল অ্যাপল। আর সেই কারণেই নাকি অ্যাপলের ত্রাতা হয়ে হাজির হয়েছিলেন গেটস।
আবার অনেক সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, নিজের আখের গোছাতেই নাকি অ্যাপলকে সাহায্য করেছিলেন গেটস। টাকা দিয়ে শেয়ার কেনার বদলে অ্যাপলের কম্পিউটারে গেটসের মাইক্রোসফট্ সংস্থার সার্চ ইঞ্জিন ‘ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার’ পাকাপাকি ভাবে রাখার চেষ্টা করেছিলেন গেটস্।
আবার কয়েক জনের মতে, অনেক দিন ধরেই ‘আমেরিকান ডিপার্টমেন্ট অফ জাস্টিস’ গেটসের বিরুদ্ধে প্রমাণ জোগাড় করছিল। তাদের দাবি ছিল, তথ্যপ্রযুক্তির বাজারে একাধিপত্য বিস্তার করতে এবং অন্য এক প্রতিদ্বন্দ্বী সংস্থা নেটস্কেপকে ভেঙে দিতে ‘ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার’ বিনামূল্যে শুরু করেছিল।
‘আমেরিকান ডিপার্টমেন্ট অফ জাস্টিস’ যে মাইক্রোসফ্টের বিরুদ্ধে প্রমাণ জোগা়ড় করছে, সেই খবরও নাকি গেটসের কাছে ছিল। মাইক্রোসফ্ট যে বাজারে একাধিপত্য বিস্তার করতে চাইছে না, তা প্রমাণ করার জন্যই নাকি অ্যাপলে টাকা ঢেলেছিলেন গেটস।
১৯৯৭ সালে অ্যাপলে ফেরেন জোবস। আবার তরতরিয়ে সাফল্যের সিঁড়ি চড়তে শুরু করে অ্যাপল। সংস্থার এক অনুষ্ঠানে এক বার অ্যাপলকে দেউলিয়া হওয়া থেকে বাঁচানোর জন্য গেটসকে ধন্যবাদও জানিয়েছিলেন জোবস।