মাথায় লাল পাগড়ি, গলায় প্যাঁচানো মোটা শিকলের মতো সোনার হার। হাতে সোনার ছ’টি চওড়া ব্রেসলেট, ১০ আঙুলে সোনার ভারী আংটি। এমনকি তিনি যে মোবাইলটি ব্যবহার করেন সেটিও সোনায় মোড়া।
সারা শরীর জুড়েই সোনা। পরে থাকেন পাঁচ কেজির বেশি সোনা। সারা শহর চষে বেড়ান সোনার মোড়া মোটরবাইক চড়ে। তাঁকে পথেঘাটে দেখে খানিকটা হাঁ করেই তাকিয়ে দেখেন পথচলতি মানুষ।
তিনি বিহারের ‘গোল্ড ম্যান’ নামে পরিচিত। আসল নাম প্রেম সিংহ। বিহারের পটনা শহরের বাসিন্দা তিনি।
জামাকাপড়, বাড়ি-গাড়ি বা জুতোর শখ নেই। প্রেমের মন টানে সোনার দিকে। তাই তাঁকে ‘গোল্ড ম্যান অফ বিহার’ বলেই চেনেন সবাই।
তাঁর গলায় থাকে ১৭টি সোনার হার, তার মধ্যে একটির লকেটে লেখা ‘গোল্ড ম্যান অফ বিহার’।
নিজেকে ‘বিহারের গোল্ড ম্যান’ বলতে শ্লাঘা অনুভব করেন প্রেম। সোনা পরা তাঁর কাছে প্রথমে আবেগের বিষয় ছিল। তার পর তিনি ধীরে ধীরে এটিকে একটি অভ্যাসে পরিণত করেছেন। তিনি আরও দাবি করেন যে, সোনা পরা মানুষের শরীরের জন্য সব সময়ই ভাল।
প্রেম জানান, তাঁর সোনার গয়না পরার ভাবনা দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলি থেকে এসেছে। তাঁর কথায়, “ওই রাজ্যগুলিতে যদি মানুষ সোনা পরে ঘুরতে পারেন, তা হলে আমি কেন পারব না?” আর সেখান থেকেই নিজের একটা আলাদা পরিচয় গড়ে তোলার পথ বেছে নেন প্রেম।
প্রেম আদতে ভোজপুর জেলার কল্যাণপুর পঞ্চায়েতের বাসুদেবপুর গ্রামের বাসিন্দা। তিনি পেশায় একজন ঠিকাদার। কাজের সূত্রে রাজধানী শহরে বাস করেন তিনি।
তাঁর উপার্জনের বেশির ভাগ টাকাই খরচ হয় হলুদ ধাতুর প্রতি প্রবল আসক্তিতে। প্রেম জানিয়েছেন, নিজের উপার্জিত টাকা দিয়ে যত দিন পারবেন সোনা কিনে যাবেন।
সোনার মালিক হওয়ার ক্ষেত্রে বিশ্বরেকর্ডের অধিকারী হতে চান ‘গোল্ড ম্যান অফ বিহার’।
প্রায়ই তাঁকে বিহারের রাস্তায় সোনার বুলেটে চেপে রাস্তায় ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়। নিজেকে আপাদমস্তক সোনায় মুড়িয়ে রাখা প্রেমের রয়্যাল এনফিল্ড মোটরবাইকটির বেশ কিছু অংশ সোনার পাত দিয়ে মোড়ানো।
তাঁর বাহনটিতেও ১০০ থেকে ১৫০ গ্রাম সোনা রয়েছে যার আনুমানিক মূল্য ১২-১৪ লক্ষ টাকা। এই বিশেষ মোটরবাইকটি তিনি বেঙ্গালুরু থেকে তৈরি করিয়েছেন বলে সংবাদমাধ্যমে জানান প্রেম।
পাঁচ কোটিরও বেশি মূল্যের সোনা দেহের নানা অংশে থাকে তাঁর। তা সত্ত্বেও প্রকাশ্যে ঘোরাফেরা করতে বিন্দুমাত্র ভয় পান না প্রেম। ডাকাতি বা প্রাণসংশয়ের কোনও আশঙ্কা করেন না তিনি।
এত সোনা সব সময় গায়ে থাকে, লুট হয়ে যাওয়ার ভয় নেই? জানতে চাওয়া হয়েছিল প্রেমের কাছে। উত্তরে তিনি জানান, বিহারের সুশাসনের প্রতি তাঁর ভরসা আছে।
তাই গা-ভর্তি গয়না পরে বেরিয়েও তাঁর এতটুকুও ভয় হয় না। হনু্মানের একনিষ্ঠ ভক্তের প্রবল বিশ্বাস, কোনও বিপদ ঘটলে তাঁকে রক্ষা করবেন আরাধ্য দেবতাই।
২০ বছর বয়স থেকেই সোনার গয়নার শখ প্রেমের। সেই সময় থেকেই একটু একটু করে সোনা কেনা শুরু করেন। স্ত্রী, কিশোরী কন্যা এবং সাড়ে পাঁচ কেজি সোনা নিয়ে বহাল তবিয়তে আছেন ৪৬ বছর বয়সি বিহারের এই ব্যবসায়ী।