সাম্প্রতিক কালে হিন্দি টেলিভিশন জগতের কমেডি ড্রামা ঘরানার ‘ভাবিজি ঘর পর হ্যায়’ ধারাবাহিকটি প্রথম সারির মধ্যে রয়েছে। এই ধারাবাহিকের সঙ্গে যুক্ত সকল তারকার অভিনয়ে মুগ্ধ দর্শক। ‘অনুরাগ’ চরিত্রে কাজ করা ঈশ্বর ঠাকুরের অভিনয় দক্ষতাও দর্শকের মনে দাগ কেটেছে। কিন্তু এই বিখ্যাত টেলিতারকা বর্তমানে কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে দিনযাপন করছেন এবং টেলি ইন্ডাস্ট্রি থেকে রয়েছেন অনেক দূরে।
বহু দিন ধরে কিডনির সমস্যায় ভুগছেন ঈশ্বর। দুই পা ফুলে যেতে থাকে তাঁর। প্রস্রাবের বেগ নিয়ন্ত্রণ করতে সমস্যা দেখা দিয়েছে। চিকিৎসা শুরু হলেও এখন তিনি বিনা চিকিৎসায় দিন কাটাচ্ছেন। কারণ গভীর অর্থাভাবে ভুগছেন তিনি।
‘আজ তক’-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ঈশ্বর তাঁর শারীরিক এবং আর্থিক পরিস্থিতির বিষয়ে জানিয়েছেন। এমনকি, টেলি ইন্ডাস্ট্রির প্রতি ক্ষোভপ্রকাশ করেছেন তিনি। ঈশ্বরের মন্তব্য, ‘‘এখন আমার কাছে ডায়াপার কেনারও টাকা নেই। তার বদলে পুরনো কাগজ ব্যবহার করে কাজ চালাতে হয়।’’
খরচ কম হবে ভেবে আয়ুর্বেদ চিকিৎসার দ্বারস্থ হয়েছিলেন ঈশ্বর। কিন্তু এখন সেই ওষুধ কেনার সামর্থ্যও নেই তাঁর। অতিমারির পর তাঁর আর্থিক পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে শুরু করে। ঈশ্বর একা নন, তাঁর মা এবং ভাই দু’জনেই শারীরিক ভাবে অসুস্থ।
অতিমারির সময় থেকেই ঈশ্বরের মা অসুস্থ হয়ে বিছানায় শুয়ে রয়েছেন। বেশির ভাগ সময় অর্ধ অচেতন অবস্থায় থাকেন তিনি। ঈশ্বর সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘‘মা যখন তখন প্রস্রাবে বিছানার চাদর ভিজিয়ে ফেলেন। দু’বছর ধরে টানা ডায়াপার পরে থাকেন তিনি। কিন্তু এখন তাঁর জন্য ডায়াপার কিনব, তার টাকাপয়সাও নেই।’’
ঈশ্বর তাঁর ভাইয়ের কথাও তুললেন এই সাক্ষাৎকারে। ২০ বছর ধরে তাঁর ভাই স্কিৎজ়োফ্রেনিয়া রোগে আক্রান্ত। বহু বছর তাঁর চিকিৎসা চলছে বলে জানান তিনি। হঠাৎ করে উত্তেজিত হয়ে পড়লে তাঁকে থামানো মুশকিল হয়ে যায়। এমনকি সামনে কাউকে দেখলে মারধরও করে ফেলেন তাঁর ভাই।
শুরুর দিকে হাসপাতালে রেখে ঈশ্বর তাঁর ভাইয়ের চিকিৎসা করাচ্ছিলেন। কিন্তু অতিমারির সময় অভিনেতার হাতে কাজ না থাকায় অর্থাভাবের সম্মুখীন হন তিনি। হাসপাতালের খরচ চালাতে পারছিলেন না ঈশ্বর। তাই হাসপাতাল থেকে তাঁকে বার বার ছাড়িয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য জানানো হচ্ছিল।
সেই সময় ঈশ্বরের পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলেন সোনু সুদ। তিনি আর্থিক সাহায্য করেছিলেন অভিনেতাকে। সোনু একাই নন, ‘ভাবীজি ঘর পর হ্যায়’ ধারাবাহিকের তারকা শুভাঙ্গী আত্রে, সৌম্য টন্ডন, আসিফ শেইখ-সহ চিত্রনাট্যকার সনদ বর্মা এবং প্রযোজক বিনাইফর কোহলি তাঁকে অর্থ দিয়ে সাহায্য করেছিলেন। কিন্তু অতিমারির পর ধীরে ধীরে সকলে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ রাখা বন্ধ করে দেন।
আর্থিক জটিলতার কারণে ঈশ্বর তাঁর ভাইকে হাসপাতাল থেকে ছাড়িয়ে নাসিকের একটি আশ্রমে নিয়ে আসেন। আশ্রমে থাকা-খাওয়ার খরচ তুলনামূলক ভাবে অনেকটাই কম পড়ত। তবে বর্তমানে সেই পরিস্থিতিও নেই ঈশ্বরের। আশ্রমের খরচও টানতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন তিনি।
রোজগারের জন্য বহু জায়গায় অডিশন দিয়েছিলেন ঈশ্বর। কিন্তু প্রযোজকেরা যখন তাঁর শারীরিক সমস্যার কথা শুনেছেন তখন তাঁকে আর কাজে নিতে চাননি। তাঁরা সকলেই ঈশ্বরকে একই কথা বলেন— শুটিং চলাকালীন যদি ঈশ্বরের শারীরিক অবস্থার অবনতি হয় তা হলে তাঁদের সকলকে দায়ী করা হবে। সেই কারণে ঈশ্বরকে কেউ কাজ দিতে চাইছেন না। এই নিয়ে টেলি ইন্ডাস্ট্রির প্রতি ক্ষোভপ্রকাশ করেছেন তিনি।
টেলিভিশন জগতে ঈশ্বরের যত চেনাজানা বন্ধু ছিলেন সকলেই এক সময় সাহায্য করলেও এখন আর কেউ ঈশ্বরের খোঁজ পর্যন্ত নেন না বলে অভিযোগ অভিনেতার। অতিমারির কারণে হয়তো সকলে সাহায্য করা বন্ধ করে দিয়েছেন বলে জানান তিনি।
ঈশ্বর সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘‘আমি খুব কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। এ ভাবে বেঁচে থাকার চেয়ে মৃত্যুকেই আপন করে নিতে ইচ্ছে করে। আমি চলে গেলে আমার মা আর ভাইকে কে দেখবে? ওরা দু’জন একা এই পরিস্থিতিতে কী করবে? এ সব ভেবেই আমি মুখ বুজে রয়েছি। লড়াই করে যাচ্ছি।’’
শুধুমাত্র ‘ভাবীজী ঘর পর হ্যায়’ ধারাবাহিকে কাজ করেই ঈশ্বর জনপ্রিয়তা পাননি। তাঁর ঝুলিতে রয়েছে ‘জিজাজি ছত পর হ্যায়’, ‘এফআইআর’ এবং ‘মে আই কাম ইন ম্যাডাম’-এর মতো নামকরা ধারাবাহিকও।