আগামী বছর লোকসভা নির্বাচন। তার আগে দলের জেলা স্তরের সংগঠনে রদবদল করল তৃণমূল। সোমবার তালিকা প্রকাশ করে ৩৫টি সাংগঠনিক জেলার কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। জেলায় জেলায় সংগঠনে অনেক মুখ পরিবর্তনও করেছে ঘাসফুল শিবির। তৃণমূল সূত্রে খবর, আগামী লোকসভা নির্বাচনকে পাখির চোখ করে জেলায় জেলায় সংগঠনকে ঢেলে সাজানো হয়েছে।
গত পুরসভা এবং পঞ্চায়েত নির্বাচনে উত্তরবঙ্গে তুলনামূলক ভাল ফল করে তৃণমূল। সেখানকার আটটি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে দু’টিতে নেতা পরিবর্তন করেছে ঘাসফুল শিবির। দার্জিলিং (পাহাড়) সাংগঠনিক জেলায় রাজ্যসভার প্রাক্তন সদস্য শান্তা ছেত্রীকে সভাপতি করা হয়েছে। চেয়ারম্যান করা হয়েছে এলবি রাইকে।
দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা তৃণমূলের নতুন সভাপতি হলেন সুভাষ ভাওয়াল। আগে সভাপতি ছিলেন মৃণাল সরকার। ওই জেলার নতুন চেয়ারম্যান করা হয়েছে কুমারগঞ্জের বিধায়ক তোরাফ হোসেন মণ্ডলকে। ওই পদে ছিলেন নিখিল বর্মণ। উত্তরবঙ্গের আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং (সমতল), উত্তর দিনাজপুর এবং মালদহ জেলার শীর্ষ নেতৃত্বে কোনও বদল করেনি তৃণমূল।
মুর্শিদাবাদের বহরমপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি পদে বদল করেছে তৃণমূল। সেখানে আগে সভাপতি ছিলেন আবু তাহের খান। অসুস্থতার কারণে তাঁকে সরিয়ে ওই পদে আনা হয়েছে অপূর্ব সরকার (ডেভিড)-কে। ওই জেলারই শাওনি সিংহ রায়কে দলের রাজ্য সম্পাদক করেছেন দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। জঙ্গিপুর সাংগঠনিক জেলায় সভাপতি পদে সাংসদ খলিলুর রহমানের উপরে আস্থা রেখেছে দল। তবে ওই জেলার চেয়ারম্যান পদে আনা হয়েছে প্রাক্তন মন্ত্রী তথা বিধায়ক জাকির হোসেনকে।
তৃণমূলের নতুন তালিকায় বীরভূম জেলায় কোনও সভাপতির নাম ঘোষণা করা হয়নি। ওই জেলায় দলের চেয়ারম্যান বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়কে। তৃণমূল সূত্রে খবর, এখন বীরভূম জেলায় দলের কোর কমিটি এবং জেলা কমিটির সমন্বয় করে সভাপতির কাজ সামলাবে। আগে সাত জনের কোর কমিটি গড়ে দিয়েছিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পরে তাতে আরও দু’জন যুক্ত হন।
পূর্ব বর্ধমানে দলের চেয়ারম্যান বদল করেছে তৃণমূল। অশোক বিশ্বাসের জায়গায় আনা হয়েছে মঙ্গলকোট বিধানসভার বিধায়ক অপূর্ব চৌধুরীকে। ওই জেলায় সভাপতি রাখা হয়েছে রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়কেই। পশ্চিম বর্ধমান জেলায় কোনও পরিবর্তন করেনি তৃণমূল।
বাঁকুড়ার সংগঠনে রদবদল করেছে তৃণমূল। ওই জেলার সভাপতি পদ থেকে দিব্যেন্দু সিংহ মহাপাত্রকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেই জায়গায় আনা হয়েছে তালড্যাংরার বিধায়ক অরূপ চক্রবর্তীকে। অন্য দিকে, বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলার জেলা সভাপতি পদে আনা হয়েছে বিক্রমজিৎ চট্টোপাধ্যায়কে। ওই পদে ছিলেন বড়জোড়ার বিধায়ক অলোক মুখোপাধ্যায়। জঙ্গলমহলের অন্যতম জেলা পুরুলিয়ায় কোনও পরিবর্তন করেনি তৃণমূল।
জঙ্গলমহলের আর এক জেলা ঝাড়গ্রাম জেলায় শীর্ষ পদে কোনও বদল আনেনি তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল। সভাপতি রাখা হয়েছে বিধায়ক দুলাল মুর্মুকে। চেয়ারপার্সন পদে দল আস্থা রেখেছে বিরবাহা সোরেন টুডুর উপরেই।
রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর জেলা পূর্ব মেদিনীপুরে শীর্ষ পদে বদল এনেছে তৃণমূল। তমলুক সাংগঠনিক জেলায় সভাপতির পদ থেকে সরানো হয়েছে রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্রকে। তাঁকে দলের রাজ্য সম্পাদক করা হয়েছে। তাঁর জায়গায় আনা হয়েছে অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়কে। সেখানে চেয়ারম্যান পদ থেকে অপসারিত করা হয়েছে নন্দীগ্রাম জমি আন্দোলনের নেতা পীযূষ ভুঁইয়াকে। নতুন চেয়ারম্যান হয়েছেন চিত্ত মাইতি।
বদল হয়েছে কাঁথি সাংগঠনিক জেলাতেও। জেলা সভাপতি ছিলেন তরুণ মাইতি। তাঁকে সরিয়ে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। নতুন সভাপতি হয়েছেন পীযূষকান্তি পাণ্ডা। আগের চেয়ারম্যানের মৃত্যু হওয়ায় তরুণকে সেই দায়িত্ব দিয়েছে তৃণমূল।
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ঘাটাল সাংগঠনিক জেলায় তৃণমূলের চেয়ারম্যান পদে পরিবর্তন হয়েছে। সেখানে অমল পাণ্ডাকে সরিয়ে প্রাক্তন বিধায়ক শঙ্কর দোলইকে দায়িত্ব দিয়েছে তৃণমূল। সভাপতি হিসাবে রাখা হয়েছে আশিস হুদাইতকে। অন্য দিকে, কোনও পরিবর্তন ছাড়াই মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি হিসাবে সুজয় হাজরা এবং চেয়ারম্যান হিসেবে খড়গপুর গ্রামীণের বিধায়ক দীনেন রায়ের উপরেই আস্থা রেখেছে দল।
হাওড়ার দু’টি সাংগঠনিক জেলাতেই সভাপতি এবং চেয়ারম্যান পদে কোনও বদল করেনি তৃণমূল। ওই জেলার গ্রামীণ এলাকার সভাপতি রাখা হয়েছে অরুণাভ সেন। কল্যাণেন্দু ঘোষকে সভাপতি হিসাবে রাখা হয়েছে শহর এলাকায়।
হুগলির আরামবাগ সাংগঠনিক জেলায় তৃণমূলের চেয়ারপার্সন পদে বদল করেছে তৃণমূল। নতুন চেয়ারপার্সন করা হয়েছে স্বপন নন্দীকে। এর আগে ওই দায়িত্বে ছিলেন জয়দেব জানা। সেখানে সভাপতি পদে কোনও বদল করা হয়নি। অন্য দিকে, শ্রীরামপুর সাংগঠনিক জেলায় চেয়ারপার্সন অসীমা পাত্র এবং সভাপতি অরিন্দম গুঁইনকেই রেখেছে তৃণমূল।
নদিয়া জেলার কৃষ্ণনগর সাংগঠনিক জেলায় সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সাংসদ মহুয়া মৈত্রকে। সেখানকার চেয়ারম্যান করা হয়েছে রুকবানুর রহমানকে। আর এক সাংগঠনিক জেলা রানাঘাটের সভাপতি করা হয়েছে দেবাশিস গঙ্গোপাধ্যায়কে।
কলকাতা উত্তর এবং দক্ষিণের সাংগঠনিক পদে বদল করেনি তৃণমূল। উত্তর কলকাতার সভাপতি রাখা হয়েছে সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে। দেবাশিস কুমার রয়েছেন দক্ষিণের সভাপতি পদেই। গত বারের মতো এ বারও তৃণমূলের দক্ষিণ কলকাতার চেয়ারম্যান রয়েছেন মণীশ গুপ্ত।
উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁ সাংগঠনিক জেলায় কোনও পরিবর্তন হয়নি। বারাসত সাংগঠনিক জেলার চেয়ারপার্সন পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে তপতী দত্তকে। তাঁর জায়গায় দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে রত্না বিশ্বাসকে। বারাসত এলাকায় জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের প্রভাব রয়েছে।
বসিরহাট সাংগঠনিক জেলায় দুই পদেই ওলটপালট করেছে তৃণমূল। সেখানে চেয়ারপার্সন থেকে হাজি নুরুল ইসলামকে সভাপতি করা হয়েছে। ওই জেলার সভাপতি ছিলেন সরোজ বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁকে করা হয়েছে চেয়ারপার্সন। অন্য দিকে, দমদম ও ব্যারাকপুরে কোনও পরিবর্তন হয়নি। সেখানে দলের সভাপতি রাখা হয়েছে তাপস রায়কে।
অভিষেক যে জেলার সাংসদ, সেই দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার শীর্ষ পদে কোনও পরিবর্তন করেনি তৃণমূল। সুন্দরবন সাংগঠনিক জেলার সভাপতি রাখা হয়েছে জয়দেব হালদারকে। শুভাশিস চক্রবর্তীকে রাখা হয়েছে যাদবপুর সাংগঠনিক জেলার সভাপতির দায়িত্বে।
তৃণমূলের নতুন জেলা কমিটির তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন শাওনি সিংহ রায় এবং প্রাক্তন মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র। তাঁদেরকে দলের রাজ্য সম্পাদক পদে এনেছে তৃণমূল। এ ছাড়া কানাই মণ্ডল এবং মৃদুল গোস্বামীকেও সম্পাদক করা হয়েছে। কানাই মুর্শিদাবাদ জেলার চেয়ারম্যান ছিলেন। আলিপুরদুয়ারের চেয়ারম্যান ছিলেন মৃদুল।