Banned Movies

নিষিদ্ধ হয়েছে সত্যজিৎ, মৃণালের ছবিও! ‘দ্য কেরালা স্টোরি’র প্রদর্শনী বন্ধের নির্দেশ কোথায় আলাদা?

সুমন মুখোপাধ্যায় পরিচালিত ‘কাঙাল মালসাট’ ছবিটি নিয়ে বিতর্ক দানা বাঁধে। ছবিতে একটি চরিত্রে অভিনয় করেন তৎকালীন তৃণমূল সাংসদ কবীর সুমন। ছবিতে সিঙ্গুরের টাটাবিরোধী আন্দোলন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শপথগ্রহণ এবং বিভিন্ন সরকারি কমিটি সংক্রান্ত কিছু দৃশ্য নিয়ে আপত্তি ওঠে।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০৯ মে ২০২৩ ১৩:৫৮
Share:
০১ ২১
Adah Sharma

কখনও অশালীন ভাষার প্রয়োগ, কখনও আপত্তিকর দৃশ্য অথবা এমন কিছু বিষয় যা সামাজিক অশান্তির— বিভিন্ন কারণে মুক্তির আগে সেন্সর বোর্ড সিনেমার উপরে কাঁচি চালিয়েছে। তেমনই এমন কিছু সিনেমা রয়েছে, যেগুলির উপর সরকার থেকে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ সরকার ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ ছবিটির প্রদর্শন রাজ্যে নিষিদ্ধ করার প্রেক্ষিতে আলোচনায় উঠে আসছে তেমনই কিছু ছবির কথা।

ছবি: সংগৃহীত।

০২ ২১
Mamata Banerjee

৮ মে, সোমবার নবান্ন থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেন এ রাজ্যে ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ সিনেমার প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা হচ্ছে। নবান্ন সূত্রে খবর, এ বিষয়ে মুখ্যসচিবকে বিশেষ নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। শান্তি-সৌহার্দ্য বজায় রাখতে এই সিদ্ধান্ত বলে জানিয়েছে রাজ্য। বলা হয়েছে, এই সিনেমায় যে সব দৃশ্য দেখানো হয়েছে, তা রাজ্যের শান্তিশৃঙ্খলার পক্ষে বিপজ্জনক হতে পারে। তাই নিষিদ্ধ করা হল। কলকাতা, জেলা সর্বত্র।

ছবি: সংগৃহীত।

Advertisement
০৩ ২১

সিনেমা সমালোচকরা বলছেন, পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতে বহু সিনেমা নিয়ে বিতর্ক হয়েছে। কোনও বিশেষ সম্প্রদায়ের ভাবাবেগে আঘাতের জন্য অনেক ছবির প্রদর্শন বন্ধ করতে বিক্ষোভও সংঘটিত হয়েছে। চলচ্চিত্র বিশেষজ্ঞ সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘তবে পশ্চিমবঙ্গ সরকার স্বয়ং কোনও সিনেমার প্রদর্শনী ‘নিষিদ্ধ’ ঘোষণা করে দিচ্ছেন— সাম্প্রতিক অতীতে এমন হুকুমনামার কথা কারও মনে পড়ছে না।’’

ছবি: সংগৃহীত।

০৪ ২১

তৃণমূল সরকারের জমানায় বেশ কয়েক’টি ছবির প্রদর্শনীতে নিষেধাজ্ঞা এবং তা নিয়ে বিতর্ক হয়েছে। ২০১৯ সালে অনীক দত্ত পরিচালিত ‘ভবিষ্যতের ভূত’ ছবিটি নিয়ে ‘মৌখিক নিষেধাজ্ঞা’ ঘোষণার পর মামলা গড়ায় সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত। ছবিতে বর্তমান শাসকদলের নেতা এবং তাঁদের কাজকে ব্যঙ্গ করার অভিযোগ ওঠে। এ নিয়ে অভিনেত্রী সায়নী ঘোষ মমতা সরকারের সমালোচনায় মুখর হন। এখন অবশ্য তিনি শাসকদলেরই অন্যতম মুখ।

ছবি: সংগৃহীত।

০৫ ২১

সুপ্রিম কোর্ট ‘ভবিষ্যতের ভূত’ ছবিটিকে প্রেক্ষাগৃহ থেকে উঠিয়ে দেওয়া নিয়ে রাজ্য সরকারকে ২০ লক্ষ টাকা জরিমানা করে। মামলায় অভিযোগ করা হয়, রাজ্য প্রশাসনের নির্দেশে ওই ছবিটি বেশির ভাগ প্রেক্ষাগৃহ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কার্যত ছবির প্রদর্শনীতে বাধা কিংবা ছবিটির উপর কোনও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়নি।

ছবি: সংগৃহীত।

০৬ ২১

শেষমেশ রাজ্যকে সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দেয়, সিনেমার প্রযোজক এবং হল মালিকদের ২০ লক্ষ টাকা জরিমানা দিতে হবে। মতপ্রকাশ এবং বাক্স্বাধীনতা লঙ্ঘনের জন্য এই নির্দেশ বলে জানায় বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের ডিভিশন বেঞ্চ।

ছবি: সংগৃহীত।

০৭ ২১

১৯৫৯ সালে মুক্তি পেয়েছিল বাংলা ছবি ‘নীল আকাশের নীচে’। মৃণাল সেনের দ্বিতীয় ছবিতে অভিনয় করেছিলেন কালী বন্দ্যোপাধ্যায়, মঞ্জু দে, বিকাশ রায় প্রমুখ। ছবিটি নিষিদ্ধ করে ভারত সরকার। সে সময় চিন বিরোধী হাওয়ায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। বস্তুত, দেশে সরকার নির্দেশিত প্রথম নিষিদ্ধ ছবি এটিই বলে জানাচ্ছেন সিনেমা সমালোচকরা। যদিও মাস দুয়েক পরে ওই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়।

ছবি: সংগৃহীত।

০৮ ২১

নিষেধাজ্ঞার কথা উঠলে অনেকেরই মনে পড়বে সত্যজিৎ রায়ের টেলিফিল্ম ‘সদ্‌গতি’র কথা। দূরদর্শনের জন্য নির্মিত প্রথম রঙিন টেলিফিল্ম এটি। অভিনয় করেন ওম পুরী, স্মিতা পাতিল, মোহন আগাসে। কিন্তু সব রাজ্যে তা দেখানো যায়নি। একই ভাবে সত্যজিতের ‘জন অরণ্য’ ছবিটি নিয়ে বিতর্ক হয়। তবে তা নিয়ে রাজ্য সরকারের হুকুমনামা জারি হয়নি।

ছবি: সংগৃহীত।

০৯ ২১

দেবানন্দ অভিনীত ‘প্রেম পূজারী’ ছবির প্রদর্শনী নিয়ে গন্ডগোল হয়েছিল শহর কলকাতায়। লাইট হাউসে ছবিটির প্রদর্শনীতে বাধা দেন নকশালপন্থীরা।

ছবি: সংগৃহীত।

১০ ২১

অনেকের মনে পড়ছে ১৯৯২ সালের ‘সিটি অফ জয়’ সিনেমার কথা। শহর কলকাতাকে ‘বিকৃত ভাবে’ দেখানোর অভিযোগে কলকাতায় শুটিংই বন্ধ করে দেওয়া হয় দোমিনিক লাপিয়েরের কাহিনি অবলম্বনে তোলা ছবিটির।

ছবি: সংগৃহীত।

১১ ২১

সুমন মুখোপাধ্যায় পরিচালিত ‘কাঙাল মালসাট’ ছবিটি নিয়ে বিতর্ক দানা বাঁধে। ছবিতে একটি চরিত্রে অভিনয় করেন তৎকালীন তৃণমূল সাংসদ কবীর সুমন। ছবিটিতে সিঙ্গুরের টাটাবিরোধী আন্দোলন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শপথগ্রহণ এবং বিভিন্ন সরকারি কমিটি নিয়ে কিছু দৃশ্য নিয়ে আপত্তি তোলা হয়। ছবিটির বেশ কিছু দৃশ্যে কাঁচি চলার পর মুক্তি পায় প্রেক্ষাগৃহে। অভিযোগ ওঠে, সেন্সর কমিটিতে শাসকদল ঘনিষ্ঠ কয়েক জন ছবিটি নিয়ে আপত্তি তোলেন। ‘দ্য কেরলা স্টোরি’ নিষিদ্ধ ঘোষণার পর সুমন মুখোপাধ্যায় আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, ‘‘সমাজে শান্তি বজায় রাখার ছবির প্রদর্শনী বন্ধ বোধহয় আগে ঘটেনি। তবে ‘ফায়ার’ সিনেমার প্রদর্শনী নিয়ে গন্ডগোল হয়। তবে সরকারের তরফে কোনও নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছিল কি না, ঠিক মনে পড়ছে না।’’

ছবি: সংগৃহীত।

১২ ২১

এ ছাড়াও বিভিন্ন ছবির প্রদর্শনী নিয়ে বিতর্ক হয়েছে কলকাতা তথা বাংলায়। তেমনই এ দেশে অনেক ছবি নিষিদ্ধ হয়। আবার সেন্সর বোর্ডের তরফে পুরোপুরি নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে, অথচ বিদেশে গিয়ে সাড়া ফেলে দিয়েছে এবং ফিল্ম সমালোচকদেরও প্রশংসা কুড়িয়ে নিয়েছে, এমন ছবিও রয়েছে।

ছবি: সংগৃহীত।

১৩ ২১

শহর কলকাতাকে আধার করে আরও একটি সিনেমা নিয়ে জোর বিতর্ক হয়েছিল। ছবিতে নগ্নতা, অপশব্দ, ড্রাগের নেশা ইত্যাদি থাকার কারণেই প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায়নি কৌশিক মুখোপাধ্যায় ওরফে কিউ পরিচালিত ছবি ‘গান্ডু’। তবে ২০১০ সালে নিউ ইয়র্কে ‘সাউথ এশিয়ান ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল’, ‘বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসব’ এবং ‘স্লামডান্স ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল’ ছবিটি প্রর্দশিত হয়। পরে ইন্টারনেটে ফাঁস হয়ে যাওয়ার পর প্রচুর মানুষ ছবিটি দেখেছেন।

ছবি: সংগৃহীত।

১৪ ২১

একাধিক ঘনিষ্ঠ দৃশ্য এবং সন্ত্রাসবাদী দৃষ্টিকোণ রয়েছে— এমন কারণেই ভারতে নিষিদ্ধ হয় ‘আনফ্রিডম’। রাজ অমিত কুমার পরিচালিত এবং প্রযোজিত এই ছবিটি ভারতে আর মুক্তি পায়নি। তবে ২০১৪ সালে ‘কেরল আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র’ উৎসবে দেখানো হয় ভিক্টর বন্দ্যোপাধ্যায়, আদিল হুসেন অভিনীত ছবিটি।

ছবি: সংগৃহীত।

১৫ ২১

২০০৩ সালে তৈরি হয় ‘দ্য পিঙ্ক মিরর’। অশ্লীল দৃশ্য রয়েছে, এই কারণ দেখিয়ে ভারতে নিষিদ্ধ হয়ে যায় ছবিটি। বিশ্বের দরবারে প্রশংসা কুড়িয়েছে, কিন্তু ভারতে কখনও মুক্তি পায়নি শ্রীধর রঙ্গায়নের ছবিটি।

ছবি: সংগৃহীত।

১৬ ২১

২০০৩ সালে অনুরাগ কাশ্যপের ছবি 'পাঞ্চ' নিয়ে জোর বিতর্ক হয়েছিল। ১৯৯৭সালে জোশী-অভঙ্কর সিরিয়াল খুনের ওপর ভিত্তি করে নির্মিত এই সিনেমায় হিংসা, অশালীন শব্দপ্রয়োগ, মাদক ব্যবহার ইত্যাদির কারণে থ্রিলারধর্মী ছবিটি সেন্সর বোর্ডে আটকে যায়।

ছবি: সংগৃহীত।

১৭ ২১

২০০৪ সালে এস হুসেন জাইদির বই ‘ব্ল্যাক ফ্রাইডে-দ্য ট্রু স্টোরি অফ দ্য বম্বে বম্ব ব্লাস্টস’ থেকে নেওয়া গল্পের উপর ভিত্তি করে অনুরাগ কাশ্যপের ছবি ‘ব্ল্যাক ফ্রাইডে’-এর মুক্তি নিয়ে জোর বিতর্ক হয়। বম্বে হাই কোর্টে মামলা চলে। ১৯৯৩ সালে মুম্বই বিস্ফোরণ মামলার বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত এই ছবির মুক্তিতে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়।

ছবি: সংগৃহীত।

১৮ ২১

শেখর কপূর পরিচালিত ‘ব্যান্ডিট কুইন’ ছবিটির বিরুদ্ধে ‘আক্রমণাত্মক‘, ‘অশ্লীল’, ‘অশালীন’ প্রভৃতি অভিযোগ আনা হয়। ১৯৯৪ সালে ভারতে নিষিদ্ধ করা হয় ছবিটির প্রদর্শনী।

ছবি: সংগৃহীত।

১৯ ২১

দুই নারীর মধ্যে সমকামী সম্পর্কের গল্প নিয়ে ছবি করেছিলেন দীপা মেহতা। কিন্তু সেই ‘ফায়ার’ ছবির মুক্তি নিয়ে জলঘোলা হয় দেশে। অভিনেত্রী শাবানা আজমি, নন্দিতা দাস এবং পরিচালক দীপা মেহতা খুনের হুমকি পর্যন্ত পান। সেন্সর বোর্ডও ভারতে ছবিটি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। পরে অবশ্য দেখা যায় ছবিটি।

ছবি: সংগৃহীত।

২০ ২১

১৯৯৬ সালে নির্মিত ভিন্নধর্মী সিনেমা ‘কামসূত্র: আ টেল অব লভ’ দারুণ বিতর্কের সম্মুখীন হয়। সেন্সর বোর্ড ছবিটিকে ‘অনৈতিক’ এবং ‘ব্যাভিচারী’ বলে অভিহিত করে। মীরা নায়ারের এই ছবিতে চার প্রেমিক যুগলের জীবনকে চিত্রিত করা হয়। সমালোচকরা প্রশংসা করেছিলেন। কিন্তু সেন্সর বোর্ডের কাঁচিতে ছবির অনেক দৃশ্যই বাদ পড়ে।

ছবি: সংগৃহীত।

২১ ২১

‘দ্য কেরল স্টোরি’ ছবি রাজ্যে নিষিদ্ধ হওয়ার সিদ্ধান্তকে ঠিক বলে মনে করছেন অভিনেতা কৌশিক সেন। তিনি তুলে ধরেছেন সাম্প্রতিক রিষড়ার হিংসার ঘটনা। তিনি মনে করেন সমাজে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে উচিত কাজ করেছে রাজ্য সরকার। আবার সুমন মুখোপাধ্যায় মনে করেন কোনও ছবির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা উচিত নয়। এটা অগণতান্ত্রিক।

ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement