বর্তমানে বিত্তশালীদের পছন্দের অন্যতম জায়গা দুবাই। পশ্চিম এশিয়ার এই ঝাঁ চকচকে শহরে অনেকেই পাকাপাকি ভাবে সংসার গুছিয়ে নিয়েছেন। এই তালিকায় পিছিয়ে নেই বাংলাদেশিরাও। গত দেড় বছরে দুবাইয়ে সম্পত্তি ক্রয়ের নিরিখে নজির গড়েছেন ও পার বাংলার বাসিন্দারা।
বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম প্রথম আলো সূত্রে খবর, ২০২০ সালের জানুয়ারি মাস থেকে ২০২১ সালের জুন মাস পর্যন্ত বাড়ি ও ফ্ল্যাট কিনতে বিপুল পরিমাণে বিনিয়োগ করেছেন বাংলাদেশিরা। এই সময়ের মধ্যে যাঁরা জমি-বাড়ি কিনেছেন, সেই তালিকায় বাংলাদেশিরা শীর্ষে।
ওই প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, দেড় বছরের ব্যবধানে দুবাইয়ে ১২ কোটি ২৩ লক্ষ দিরহাম বিনিয়োগ করেছেন বাংলাদেশিরা। ভারতীয় মুদ্রায় যার অঙ্ক প্রায় ২৭২ কোটি টাকা।
তবে বাংলাদেশিরা দুবাইয়ে সবচেয়ে বেশি ফ্ল্যাট-বাড়ি কিনেছেন বলে যে দাবি করা হয়েছে, তার সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। ওই পরিমাণ অর্থ বেআইনি ভাবে দুবাইয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলেও দাবি।
দুবাইয়ে সম্পত্তি কেনার এই তালিকায় রয়েছেন ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক নেতা ও আমলারা। যে সময়ে দুবাইয়ে সম্পত্তি কেনার কথা প্রকাশ্যে এসেছে, সেই সময় কোভিড অতিমারি পর্ব চলছিল। ফলে ওই সময় নিজেদের দেশ থেকে টাকা নিয়ে গিয়ে বিদেশে বাংলাদেশিরা সম্পত্তি কিনেছেন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
বর্তমান সময়ে দুবাই মানেই বিলাসবহুল জায়গা। সব রকমের সুযোগসুবিধা রয়েছে। ফলে বিত্তশালীদের পছন্দের জায়গা দুবাই। গত কয়েক বছর ধরেই সেখানে বিভিন্ন দেশের বিত্তশালীরা সম্পত্তি কিনছেন।
২০২২ সালে দুবাইয়ে রেকর্ডহারে জমি ও বাড়ি কেনাবেচা হয়েছে বলে দাবি। গত বছর দুবাইয়ে মোট ৯০ হাজার ৮৮১টি জমি ও বাড়ি কেনাবেচা হয়েছে। সংযুক্ত আরব আমিরশাহীর সংবাদমাধ্যমে এই তথ্য প্রকাশিত হয়েছে।
এর আগে, ২০০৯ সালে ৮১ হাজার ১৮২টি জমি-বাড়ি বেচাকেনা রয়েছে। এ-ও জানা গিয়েছে যে, শুধু মাত্র ডিসেম্বর মাসেই সে দেশে ৮ হাজার আবাসনের লেনদেন হয়েছে।
চাহিদা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দুবাইয়ে আবাসনের দামও বাড়ছে লাফিয়ে। গত বছর ডিসেম্বর পর্যন্ত গড়ে সম্পদের দাম বেড়েছে ৯.৫ শতাংশ। এর মধ্যে ভিলার দাম বেড়েছে ১২.৮ শতাংশ। আবাসনের দাম বেড়েছে ৯ শতাংশ।
তবে ২০১৪ সালে দুবাইয়ে সম্পদের দাম যে হারে বেড়েছিল, তাকে ছাপিয়ে যেতে পারেনি। ভিলা ও আবাসনের দাম বর্তমানে সর্বোচ্চ দামের চেয়ে ২১.৫ শতাংশ ও ৪.২ শতাংশ কম। ২০২২ সালে দুবাইয়ে আবাসন ও ভিলার ভাড়ার দাম বেড়েছে যথাক্রমে ২৭.১ ও ২৪.৯ শতাংশ হারে।
দুবাই শহরের কাছেই রয়েছে পাম জুমেইরাহ। সেখানে ফ্ল্যাটের দাম প্রতি বর্গফুট ২ হাজার ৩২৪ দিরহাম। যা ভারতীয় মুদ্রায় ৫১ হাজার টাকা। ভিলার দাম বেড়েছে প্রতি বর্গফুট ৩ হাজার ৯২১ দিরহাম। ভারতীয় মুদ্রায় যার অঙ্ক ৭৩ হাজার টাকা। ওই এলাকায় ভাড়াও বেশি।
চাহিদা বাড়তে থাকায় দুবাইয়ে ভিলার ভাড়া ২০১৯ সালের তুলনায় ৪৫.৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। গড়ে ভিলার ভাড়া বছরে ২ লক্ষ ৮২ হাজার ১৫০ দিরহাম, ভারতীয় মুদ্রায় যা ৬২ লক্ষ টাকারও বেশি।
দুবাই শহরে আবাসন ব্যবসায়ীদের ব্যাঙ্কে শত শত কোটি ডলার ঋণ রয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে অবৈধ অর্থ দুবাইয়ে ঢুকছে বলে সন্দেহ। আর সে কারণেই সংযুক্ত আরব আমিরশাহী আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ধূসর তালিকায় রয়েছে।
বিভিন্ন দেশ থেকে বেআইনি অর্থ নিয়ে গিয়ে দুবাইয়ে সম্পত্তি কেনা হচ্ছে কি না, এ নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। যাঁরা বাড়ি কেনেন, তাঁদের নাম প্রকাশ করে না দুবাইয়ের ভূমি বিভাগ। ফলে এতে সন্দেহ আরও বেড়েছে।
‘প্রথম আলো’-র দাবি, দুবাইয়ে সম্পত্তি ক্রয়ের তালিকায় বাংলাদেশিরা শীর্ষে রয়েছে। তা হলে কি অবৈধ উপায়ে টাকা সেখানে নিয়ে গিয়ে সম্পত্তি কিনেছেন ও পার বাংলার বাসিন্দারা? এ নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।