Ram Mandir Inauguration

হাজার হাজার পুলিশ, ড্রোন, কমান্ডো, স্নাইপারে ছয়লাপ অযোধ্যায় ধৃত ‘জঙ্গি’! কতটা তৈরি যোগীরাজ্য?

সোমবার পরীক্ষার মুখে অযোধ্যার প্রশাসন। নিরাপত্তায় যাতে সামান্য ফাঁকও না থাকে সে জন্য দিনরাত এক করে চলছে পরিকল্পনা তৈরি করা এবং তা বাস্তবায়িত করার প্রক্রিয়া। সময় নেই ঘামটুকু মোছারও।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০২৪ ১৪:৫৩
Share:
০১ ২০

বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত পুলিশ এবং কমান্ডোবাহিনীর জওয়ানে ছয়লাপ গোটা শহর। প্রতিটি উঁচু বাড়ির মাথায় বিশেষ রাইফেল নিয়ে প্রহরারত স্নাইপার। আকাশে নিরন্তর উড়ছে অত্যাধুনিক নজরদারি ড্রোন। নিরাপত্তার মোটা চাদরে মুড়ে ফেলা হয়েছে অযোধ্যা নগরীকে।

০২ ২০

সোমবার রামমন্দিরের উদ্বোধন এবং রামলালার ‘প্রাণপ্রতিষ্ঠা’ উপলক্ষে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান আয়োজিত হবে অযোধ্যায়। ‘প্রাণপ্রতিষ্ঠা’ এবং উদ্বোধনের অন্যতম মূল যজমান দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ফলে অনুষ্ঠানের চাকচিক্য বৃদ্ধি পেয়েছে বহু গুণ। আর একই সঙ্গে কাজ বেড়েছে নিরাপত্তাবাহিনীরও।

Advertisement
০৩ ২০

স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী যে অনুষ্ঠানে উপস্থিত সেখানে নিরাপত্তার আস্তরণ যে অন্য মানের হয়, তা বলাই বাহুল্য। আর অযোধ্যায় তো কার্যত ভিভিআইপিদের বন্যা! আমন্ত্রণসূচি অনুযায়ী, সোমবার দিনের বেলা অযোধ্যা নগরীতে উপস্থিত থাকতে চলেছেন ৯০০ ভিআইপি এবং অন্তত ৬০ জন ভিভিআইপি।

০৪ ২০

এরই মধ্যে সন্ত্রাসীদের আনাগোনাও শুরু হয়ে গিয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে খবর। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে পুলিশ তিন জনকে গ্রেফতার করেছে যাঁদের সঙ্গে খলিস্তানপন্থী সন্ত্রাসবাদী নেতা গুরপবম সিংহ পান্নুমের সরাসরি যোগাযোগ রয়েছে বলে অনুমান।

০৫ ২০

মনে করা হচ্ছে, পান্নুমের নির্দেশেই ওই তিন জন ভুয়ো কাগজ দেখিয়ে নগদে কেনা একটি স্করপিয়ো গাড়ি কিনে অযোধ্যায় এসেছিলেন। উদ্দেশ্য ছিল, অযোধ্যার একটি বিস্তারিত ম্যাপ তৈরি করা।

০৬ ২০

বৃহস্পতিবার গভীর রাতে ইউপিএটিএস (উত্তরপ্রদেশের জঙ্গিদমন শাখা) অযোধ্যায় তিন জনকে গ্রেফতার করে। যাঁদের সঙ্গে খলিস্তানি যোগ পাওয়া গিয়েছে। গুরপবন সিংহ পান্নুমের সঙ্গে ধৃতদের যোগ রয়েছে বলে পুলিশের সন্দেহ। পুলিশের দাবি, ধৃতেরা পান্নুমের কথাতেই অযোধ্যার নকশা সংগ্রহ করতে এসেছিল।

০৭ ২০

উত্তরপ্রদেশ এটিএস গোপনে সেই খবর পেয়ে যায়। তার পর স্করপিয়ো গাড়িটির পিছু নেয় এটিএস। দেখা যায়, বেশ কিছু রাস্তা ঘোরার পর একটি হোটেলে ঢুকছে গাড়িটি। তখনই এটিএস তাঁদের ধরে ফেলে। গাড়িতে তিন জন ছিলেন। তাঁরা সকলেই রাজস্থানের বাসিন্দা বলে এটিএস সূত্রে খবর।

০৮ ২০

রাজস্থানের জাজোদের বাসিন্দা দু’জনের পরিচয়ও প্রকাশ্যে এসেছে। তাঁদের নাম, শঙ্করলাল দুসাদ এবং প্রদীপ পুনিয়া। তৃতীয় ব্যক্তির নাম অজিত কুমার। তিনি রাজস্থানেরই ঝুনঝুনপত্তুশ্রীর বাসিন্দা।

০৯ ২০

এটিএস সূত্রে খবর, শঙ্করলাল পুরনো আসামী। ২০০৭ থেকে ২০১৪-এর মধ্যে তাঁর বিরুদ্ধে রাজস্থানে সাতটি মামলা হয়। ২০১৬ সালে তাঁকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গত ১৫ মে, ২০২৩ পর্যন্ত বিকানের জেলে ছিলেন তিনি। বর্তমানে জামিনে মুক্ত। গ্যাংস্টার হিসাবে শঙ্করলালের নাম ছিল। তাঁর বিপক্ষ ছিল লরেন্স বিষ্ণোই গ্যাং।

১০ ২০

জেলে লখবিন্দর নামে এক কয়েদির সঙ্গে শঙ্করলালের পরিচয় হয়। লখবিন্দর তাঁকে জানান জামিনে মুক্ত হওয়ার পর, তাঁর ভাগ্নে পাম্মার সঙ্গে দেখা করতে। পাম্মার মাধ্যমে শঙ্করলালের যোগাযোগ হয় কানাডাস্থিত খলিস্তানি সমর্থক তথা গ্যাংস্টার সুখবিন্দর সিংহ ওরফে সুক্‌খার।

১১ ২০

এনআইএ-এর মোস্ট ওয়ান্টেড তালিকায় অন্যতম নাম ছিল সুক্‌খার। দু’মাস আগে কানাডায় এনকাউন্টারে তাঁর মৃত্যু হয়। সুক্‌খার পক্ষে শঙ্করলালের হয়ে লরেন্স বিষ্ণোই গ্যাংকে ‘খতম’ করা হয়নি। অতএব, শঙ্করলাল খুঁজতে শুরু করেন অন্য কাউকে। যাঁকে ধরে তিনি লরেন্সের বিরুদ্ধে ‘বদলা’ নিতে পারবেন। সেই সময় শঙ্করলালের যোগাযোগ হয় গুরপবম সিংহ পান্নুমের সঙ্গে।

১২ ২০

সুক্‌খার মৃত্যুর পর পান্নুমের আশ্রয়ে চলে যান শঙ্করলাল। লরেন্স বিষ্ণোইয়ের লোকজন শঙ্করলালের গ্যাংকে শেষ করেছিল। পান্মুম শঙ্করলালকে আশ্বাস দেন, লরেন্সকে দেখে নেবেন। তার বদলে পান্নুমের হয়ে কাজ করতে হবে তাঁকে। শঙ্করলালের তাতে আপত্তি করার কোনও কারণ ছিল না। রাজি হয়ে যান।

১৩ ২০

পান্নুম শঙ্করলালকে বলেন অযোধ্যা যেতে। এলাকায় ঘুরে ঘুরে সেখানকার বিস্তারিত ম্যাপ বানিয়ে আনার ভার পড়ে শঙ্করলালের কাঁধে। ভুয়ো কাগজ দেখিয়ে নগদে একটি স্করপিয়ো গাড়ি কেনেন শঙ্করলাল। তার পর আরও দুই ঘনিষ্ঠকে নিয়ে অযোধ্যা পাড়ি দেন। কিন্তু ‘কাজ’ শেষের আগেই ধরা পড়ে গেলেন পুলিশের হাতে।

১৪ ২০

এ দিকে রামমন্দিরকে নিরাপত্তা জোগাতে অযোধ্যায় তৈরি করা হয়েছে বহুস্তরীয় নিরাপত্তা বলয়। মন্দির ঘিরে ত্রিস্তরীয় নিরাপত্তার ব্যবস্থা থাকছে। তাতে বিশেষ বাহিনীর পাশাপাশি মোতায়েন থাকবে উত্তরপ্রদেশ সরকারের বিশেষ ‘স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ)’, সিআরপিএফ এবং ‘প্রাদেশিক আর্মড কনস্টেব্যুলারি (পিএসি)’।

১৫ ২০

৯০০ ভিআইপি এবং ৬০ ভিভিআইপি শামিল হবেন সোমবারের অনুষ্ঠানে। ভিভিআইপিদের তালিকায় থাকবেন, মুকেশ অম্বানী ও তাঁর পরিবার, গৌতম আদানি ও তাঁর পরিবার, অমিতাভ বচ্চন, বিরাট কোহলী, অনুষ্কা শর্মা, আলিয়া ভট্ট, অল্লু অর্জুন, রতন টাটা, বীরেন্দ্র সহবাগেরা। ধরে নেওয়া যেতে পারে, এঁরা সকলেই নিজস্ব বিমানে চড়েই আসবেন। কিন্তু এত বিমান থাকবে কোথায়?

১৬ ২০

সোমবার মোট ১০০টি চার্টার্ড বিমান আসার কথা অযোধ্যায়। কিন্তু অযোধ্যার বাল্মিকী বিমানবন্দরে ততটা জায়গা নেই। প্রধানমন্ত্রী মোদীর ‘ইন্ডিয়া ওয়ান’ বিমান সেই বিমানবন্দরে থাকবে। বাকি বিমানগুলিকে তাই আশপাশের পাঁচটি রাজ্যের ১২টি বিমানবন্দরে পার্ক করার কথা।

১৭ ২০

উত্তরপ্রদেশ, বিহার, রাজস্থান, উত্তরাখণ্ড, মধ্যপ্রদেশের মোট ১২টি বিমানবন্দরে থাকছে বিমানের পার্কিং ফেসিলিটি। অমিতাভ বচ্চন, দক্ষিণী তারকা পবন কল্যাণের বিমান কানপুরের চাকেরি বিমানবন্দরে থাকবে। অর্থাৎ, অযোধ্যার বিমানবন্দরে অমিতাভকে নামিয়ে তাঁর চার্টার্ড বিমান উড়ে চলে যাবে কানপুরের চাকেরিতে। আবার অনু্ষ্ঠান শেষে অযোধ্যা বিমানবন্দরে এসে অমিতাভকে নিয়ে মুম্বই ফিরে যাবে। প্রধানমন্ত্রী ছাড়া বাকিদের ক্ষেত্রেও এমনই ব্যবস্থা।

১৮ ২০

অযোধ্যার বাল্মিকী বিমানবন্দরে সর্বাধিক ৮টি বিমান পার্ক করা যায়। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর বিমান থাকলে অন্য বিমান সেখানে রাখা যাবে না নিরাপত্তার কারণে। তা ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর জন্য তিনটি পৃথক হেলিপ্যাডও প্রস্তুত রাখা হয়েছে। তাতেও অনেকটা জায়গা চলে যাচ্ছে।

১৯ ২০

ভিআইপিদের বিমান নামবে লখনউ বিমানবন্দরে। সেখানে ভিআইপিরা বিমান থেকে নেমে সোজা রওনা দেবেন ১৩৫ কিলোমিটার দূরের অযোধ্যায়। কমবেশি এক হাজার ভিআইপি সে ভাবেই অযোধ্যায় পৌঁছবেন। সে জন্য গোটা ১৩৫ কিলোমিটার পথকে গ্রিন করিডোর করে দেওয়া হবে। যাতে বিনা বাধায় অতিথিরা অযোধ্যায় পৌঁছতে পারেন।

২০ ২০

রাজ্য তথা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লোকজন আসছেন অযোধ্যা নগরীতে। তাঁদের প্রতিটি খুঁটিনাটি স্পষ্ট ভাবে বোঝাতে ১৪টি ভাষায় কথা বলতে প্রস্তুত ১৩৫ জন গাইড রাখা হচ্ছে। এ ছাড়াও স্বাস্থ্য দফতরের সহস্রাধিক কর্মী সর্বদা থাকবেন অযোধ্যার রাস্তায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement