Australian koalas shot dead

ভিটেহারা, অভুক্ত, গায়ে আগুনে পোড়ার ক্ষত, ‘মুক্তি’ দিতে ৭০০ কোয়ালাকে গুলি করে খুন করল অস্ট্রেলিয়া!

এপ্রিলের গোড়া থেকেই শুরু হয়েছে কোয়ালা নিধন যজ্ঞ। সেই খবর প্রকাশ্যে আসার পরই ক্ষোভে ফুঁসছেন পরিবেশকর্মী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষও। পরিবেশ রক্ষার কথা বলে অমানবিক ও অবাস্তব পদ্ধতিতে ‘বিপন্নপ্রায়’ প্রাণীকুলকে অবলীলায় মেরে ফেলছে সরকার, এমনটাই দাবি পরিবেশকর্মীদের।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৫ ১০:২২
Share:
০১ ১৭
Australian koalas shot dead

দাবানলে পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়ার বুজ় বিম জাতীয় উদ্যানের ২ হাজার হেক্টরেরও বেশি অরণ্য। ভয়াবহ আগুনের বলি হয়েছে অসংখ্য বন্যপ্রাণ। প্রাণ হারিয়েছে অসংখ্য কোয়ালা। পোড়া ঘা নিয়ে ঘর হারিয়েছে আরও কত শত। শান্ত, আদুরে, নিরীহ প্রাণীটিকে ‘বিপন্নপ্রায়’ তালিকাভুক্ত করেছে দেশের পরিবেশ মন্ত্রক।

০২ ১৭
Australian koalas shot dead

ইউক্যালিপটাস গ্লোবিউলাস বা সাধারণের ভাষায় ‘ব্লু গাম ট্রি’। লম্বা, চিরসবুজ গাছটি শুধু অস্ট্রেলিয়াতেই পাওয়া যায়। ছায়াঘন গাছটি কোয়ালাদের পছন্দের বাসস্থান। আগুনে পুড়ে নষ্ট হয়ে গিয়েছে কোয়ালাদের সেই বিচরণভূমি। এই প্রাণী যেহেতু দাবানল থেকে বাঁচতে আদৌ তেমন দক্ষ নয়, তাই আগুনের লেলিহান শিখা থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারেনি।

Advertisement
০৩ ১৭
Australian koalas shot dead

শত শত কোয়ালা ছন্নছাড়া, গৃহহীন হয়ে ঘুরছে পোড়া ভিটেয়। গায়ে-পিঠে পোড়ার ক্ষত। খাবার নেই, ফুরিয়েছে জলও। সেই সমস্ত কোয়ালাদের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্য অস্ট্রেলিয়া সরকারের পক্ষ থেকে গুলি করে মেরে ফেলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, দক্ষিণ-পশ্চিম ভিক্টোরিয়ার এই বনভূমিতে প্রায় ৭০০ কোয়ালাকে কপ্টার থেকে গুলি করে মেরে ফেলা হয়েছে।

০৪ ১৭

এপ্রিলের গোড়া থেকেই শুরু হয়েছে এই কোয়ালা নিধনযজ্ঞ। সেই খবর প্রকাশ্যে আসার পরই ক্ষোভে ফুঁসছেন পরিবেশকর্মী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ। পরিবেশ রক্ষার কথা বলে পুরোপুরি অমানবিক ও অবাস্তব পদ্ধতিতে ‘বিপন্নপ্রায়’ প্রাণীকুলকে অবলীলায় মেরে ফেলছে সরকার, দাবি পরিবেশকর্মীদের। অভিযোগ তুলছে সে দেশের প্রাণী অধিকার গোষ্ঠীগুলি।

০৫ ১৭

প্রাণী সুরক্ষা গোষ্ঠী ‘কোয়ালা অ্যালায়েন্স’ ফেসবুকে একটি বিবৃতিতে জানিয়েছে, যদি কোয়ালাদের থেকে গুলি করে গাছ উপড়ে ফেলা হয়, তা হলে অনেক ছোট ছোট কোয়ালা-শাবককে (জোয়ি) কষ্ট সহ্য করতে হবে। হয়তো ভবিষ্যতে তাদেরও মৃত্যুবরণ করা ছাড়া আর কোনও রাস্তা থাকবে না। এটা ঘৃণ্য। এটা নিষ্ঠুরতা।’’ অস্ট্রেলিয়ার এক নাগরিক সমাজমাধ্যমে লিখেছেন, ‘‘কত কোয়ালা মরে পড়ে রয়েছে। মা কোয়ালা, তাদের ছোট ছোট ছানা...। অস্ট্রেলিয়ার লজ্জা পাওয়া উচিত।’’

০৬ ১৭

আগুনে পুড়ে যাওয়ার যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দিতেই এই পদক্ষেপ করতে হয়েছে বলে দাবি করেছে সরকার। শুয়োর, হরিণ বা বন্য ঘোড়াকে গুলি করে হত্যা করার দৃষ্টান্ত ছিল এই দেশে। কোয়ালার ক্ষেত্রে আকাশপথে গুলি করে মেরে ফেলার ঘটনা এই প্রথম। এর আগেও ১০ হাজার উটকে গুলি করে হত্যা করেছিল দ্বীপরাষ্ট্রের প্রশাসন।

০৭ ১৭

কোয়ালার মতো দুর্বল এবং প্রায় বিপন্ন প্রাণীর ক্ষেত্রে এটির প্রয়োগ করার ঘটনা অত্যন্ত বিতর্কিত। এই কঠোর পদক্ষেপের কারণে দেশব্যাপী ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। সমাজমাধ্যমে ও দেশ-বিদেশের সংবাদমাধ্যমে সরকারের সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রবল সমালোচনা শুরু হয়েছে। ঘরে-বাইরে আপত্তি সত্ত্বেও কেন এটি করা হচ্ছে?

০৮ ১৭

‘ওয়াইল্ডলাইফ ভিক্টোরিয়ার’ প্রধান লিসা পালমা জানিয়েছেন, বুজ় বিম জাতীয় উদ্যানে আগুনের যে ভয়াবহ প্রভাব কোয়ালাদের উপর পড়েছে, তাতে সংস্থাটি ‘গভীর ভাবে দুঃখিত’। তিনি জানান, এই সমস্ত জাতীয় উদ্যানই বন্যপ্রাণীদের শেষ আশ্রয়স্থল। দাবানল এবং অন্যান্য চরম প্রাকৃতিক দুর্ঘটনার ক্রমবর্ধমান তীব্রতা অস্ট্রেলিয়ার স্থানীয় প্রজাতি, বিশেষ করে কোয়ালাকে তীব্র ঝুঁকির সম্মুখীন করেছে।

০৯ ১৭

দাবানলের ফলে এই উদ্যানগুলিতে থাকা প্রাণীগুলি প্রচণ্ড দুর্ভোগের শিকার হয়। পোড়া এবং গুরুতর আহত বন্যপ্রাণীদের জন্য সবচেয়ে সহানুভূতিশীল পদক্ষেপ হল ইচ্ছামৃত্যু। দাবানলের ফলে কোয়ালার মতো অনেক প্রাণীর অবস্থা আশঙ্কাজনক হয়ে পড়েছে। পশুচিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে বন দফতরের কর্তারা মানবিক ‘ইচ্ছামৃত্যু’র প্রচেষ্টা চালিয়েছেন বলে সরকারের তরফে দাবি করা হয়েছে।

১০ ১৭

সরকার জোর দিয়ে জানিয়েছে যে, তারা কেবল পশুচিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের পরামর্শেই কাজ করেছে।

১১ ১৭

প্রাণী অধিকার কর্মীরা সতর্ক করে দিচ্ছেন যে, এই হত্যাকাণ্ডের ফলে সুস্থ কোয়ালাদের মৃত্যু হতে পারে এবং অনেক কোয়ালা-শাবক (জোয়ি) অনাথ হয়ে পড়তে পারে। কোয়ালাগুলিকে হত্যা করার জন্য হেলিকপ্টারগুলি মাটি থেকে প্রায় ৩০ মিটার বা প্রায় ১০০ ফুট উপরে উড়েছিল।

১২ ১৭

বন্যপ্রাণ রক্ষাকারীরা জানিয়েছেন, এত উঁচু থেকে আহত ও সুস্থ কোয়ালাদের মধ্যে ফারাক বোঝা বেশ কঠিন। সে কারণে নির্বিচারে গুলি চালালে সুস্থ কোয়ালারাও মারা গিয়েছে বলে মনে করছে বন্যপ্রাণ বাঁচাও সংগঠনগুলি।

১৩ ১৭

‘ফ্রেন্ডস অফ দ্য আর্থ, মেলবোর্ন’ এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, সরকারের উচিত ছিল বিকল্প পদ্ধতির সন্ধান করা। আকাশ থেকে গুলি চালিয়ে হত্যা একদম শেষ উপায় হতে পারত। কোয়ালাদের এই ভাবে হত্যা এ দেশে প্রথম ঘটনা। এটি একটি খারাপ নজির স্থাপন করল। সংস্থাটি আরও জানিয়েছে যে, আগুন লাগার পর এলাকাটি অবরুদ্ধ থাকায়, অনাথ কোয়ালা শিশুদের উদ্ধার করে আনার জন্য কোনও উদ্ধারকারীকে ভেতরে যেতে দেওয়া হয়নি।

১৪ ১৭

ভিক্টোরিয়া সরকারের প্রধান জীববৈচিত্র কর্মকর্তা জেমস টড বলেন, ‘‘পদ্ধতিটি ব্যবহারের সিদ্ধান্তটি হালকা ভাবে নেওয়া হয়নি। আগুনের প্রত্যক্ষ প্রভাব, খরা পরিস্থিতি এবং আগুন লাগার পরে খাদ্যের অভাবের কারণে অনেক প্রাণীর স্বাস্থ্যের অবনতি এবং বেঁচে থাকার সম্ভাবনা কমে এসেছিল।”

১৫ ১৭

টডের দাবি, দুর্গম অঞ্চলে পায়ে হেঁটে নিরাপদে এলাকায় প্রবেশে বাধা ছিল। বেশ উঁচুতে প্রাণীগুলি অবস্থান করছিল এবং আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত গাছ থেকে ঝুঁকির কারণে অন্য পদ্ধতিগুলি উপযুক্ত বলে মনে করা হয়নি। বাধ্য হয়েই আকাশপথে হেলিকপ্টার থেকে গুলি করে প্রাণীগুলিকে দুর্ভোগের হাত থেকে মুক্তি দেওয়া হয় বলে জানান তিনি।

১৬ ১৭

এর আগেও বিধ্বংসী দাবানলে পুড়ে মারা গিয়েছিল হাজার হাজার নিরীহ কোয়ালা। বাসভূমি হারিয়েছিল কয়েক লক্ষ। আবাসস্থল ধ্বংস, কাঠ কাটার কারণে কুইন্সল্যান্ড, নিউ সাউথ ওয়েলস এবং অস্ট্রেলিয়ার রাজধানী এলাকায় কোয়ালাদের আনুষ্ঠানিক ভাবে বিপন্ন হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে সে দেশের পরিবেশ মন্ত্রক।

১৭ ১৭

পরিবেশকর্মীরা অবিলম্বে এই হত্যাকাণ্ড বন্ধের দাবি তুলেছেন। সরকারের সিদ্ধান্ত নিয়ে তদন্তের দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। জানা গিয়েছে, বন্যপ্রাণী পশুচিকিৎসক এবং পর্যবেক্ষকদের পরিস্থিতি মূল্যায়নের জন্য বার বার চাপ দিচ্ছে পরিবেশ সংগঠনগুলি। স্বচ্ছতা বজায় রাখার জন্য ভিক্টোরিয়ান সরকারের উপর জনসাধারণের চাপ বাড়ছে।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement