বিশ্বসংসারে কি একটাই সূর্য? একটাই পৃথিবী আর একটাই জীবজগৎ! দীর্ঘ দিন ধরে এর উত্তর খুঁজে চলেছে মানুষ। সম্প্রতি সেই রহস্য আরও উস্কে দিয়েছেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা।
আমেরিকান মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র নাসা ও ইউরোপীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থার পাঠানো দু’টি ভিন্ন উপগ্রহ এক ভিন্ জগতের সন্ধান দিয়েছে। সে জগতেও এক ‘সূর্য’ রয়েছে। তার নাম বিজ্ঞানীরা দিয়েছেন এইচডি১১০০৬৭। যাকে ঘিরে প্রদক্ষিণ করছে ছ’টি গ্রহ।
সৌরজগৎটির ‘সূর্য’কে গ্রহগুলির এক বার প্রদক্ষিণ করতে সময় লাগে ৯ থেকে ৫৪ দিন। তা থেকে অনুমান, গ্রহগুলি নক্ষত্রটির খুব কাছে রয়েছে। ফলে সেগুলি অনেক বেশি গরম।
আমরা যে ছায়াপথের অংশ, সেই মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি বা আকাশগঙ্গা ছায়াপথেই ওই সৌরজগতের সন্ধান মিলেছে। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, পৃথিবী থেকে ১০০ আলোকবর্ষ দূরে রয়েছে সৌরজগৎটি।
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, সৌরজগৎটিতে আপাতত যে ছ’টি গ্রহের সন্ধান মিলেছে, সেগুলি পৃথিবীর চেয়ে অন্তত দু-তিন গুণ বড়। এই গ্রহগুলোর ঘনত্ব আমাদের সৌরজগতের গ্যাসীয় গ্রহগুলির ঘনত্বের প্রায় সমান।
গ্রহগুলি গ্যাসীয় হলেও বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, সেগুলির কেন্দ্রভাগ পাথর, ধাতব পদার্থ বা বরফে গঠিত। যার উপরে রয়েছে হাইড্রোজেনের বিশাল আস্তরণ। তবে গ্রহগুলির বায়ুমণ্ডল কেমন, সে বিষয়ে জানতে হলে আরও গবেষণার প্রয়োজন বলেও জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা আরও জানান, গ্রহগুলি নিজের কক্ষপথে প্রদক্ষিণ করার সময় ভারসাম্য বজায় রাখে। সৌরজগৎটি সৃষ্টির কয়েকশো কোটি বছর পরেও বাইরের কোনও শক্তি সেই ভারসাম্যে বিঘ্ন ঘটাতে পারেনি। তার ফলে সৌরজগৎটি অনেক বেশি সুসংহত বলে দাবি বিজ্ঞানীদের।
বিজ্ঞানীদের বক্তব্য, এখনও পর্যন্ত যে ক’টি সৌরজগতের সন্ধান মিলেছে, সেগুলির মধ্যে এটিই সব চেয়ে সুসংহত। আর সাধারণত সুসংহত সৌরজগতেই প্রাণের উপস্থিতির সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।
সম্প্রতি ‘নেচার’ পত্রিকায় নতুন সৌরজগতের সন্ধান মেলার বিষয়টি প্রকাশ করেছেন বিজ্ঞানীরা। সেই গবেষক দলের সদস্য সুইৎজ়ারল্যান্ডের জেনেভা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আদ্রিয়েন লিলেও বলেন, ‘‘নতুন সৌরজগতের সন্ধান পাওয়াটা আমাদের কাছে একটা বড় সুযোগ।’’
কিছু দিন আগে এই রকম আরও একটি সৌরজগতের সন্ধান দিয়েছে নাসার অবসরপ্রাপ্ত স্পেস টেলিস্কোপ কেপলার। সে জগতেও এক ‘সূর্য’ রয়েছে, যাকে ঘিরে প্রদক্ষিণ করছে সাতটি গ্রহ।
কেপলারের নামে ভিন্গ্রহীদের এই জগতের নাম রাখা হয়েছে কেপলার-৩৮৫। এই গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে ‘দ্য জার্নাল অফ প্ল্যানেটারি সায়েন্স’ নামক বিজ্ঞান পত্রিকায়।
প্রাথমিক ভাবে, কেপলারের অভিযান শেষ হয়েছিল ২০১৩ সালে। কিন্তু তার পরেও কাজ চালিয়ে গিয়েছে সে। ২০১৮ সাল পর্যন্ত কাজ করেছে কেপলার। অভিযানের এই দ্বিতীয় অধ্যায়কে বলা হত ‘কে২’। কেপলারের মহাকাশ-অনুসন্ধান থেকে পাওয়া তথ্য এখনও বিশ্লেষণ করা চলছে।
নাসার বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, এখনও পর্যন্ত ৪৪০০ গ্রহের খোঁজ দিয়েছে কেপলার। এর মধ্যে ৭০০টি মাল্টি-প্ল্যানেট সিস্টেম (নক্ষত্রকে প্রদক্ষিণকারী একাধিক গ্রহের সংসার)। কিন্তু একই পরিবারে ছ’টি বা তার বেশি গ্রহ রয়েছে, এমন সংসার খুব কমই দেখতে পেয়েছে কেপলার।
বিজ্ঞানীরা জানান, কেপলার-৩৮৫-এর কেন্দ্রস্থলে রয়েছে সূর্যের মতো একটি তারা। তবে সূর্যের থেকে সেটি ১০ শতাংশ বড় আর পাঁচ শতাংশ বেশি গরম। নক্ষত্রটির কাছাকাছি থাকা গ্রহ দু’টি পৃথিবীর থেকে সামান্য বড়। পাথুরে জমি। পাতলা বায়ুস্তরও থাকতে পারে। বাকি গ্রহগুলি বেশ বড়। এক-একটির ব্যাসার্ধ পৃথিবীর ব্যাসার্ধের দ্বিগুণ। বিজ্ঞানীদের অনুমান, এই গ্রহগুলিতে মোটা বায়ুস্তর রয়েছে।
ক্যালিফোর্নিয়ার সিলিকন ভ্যালিতে নাসার ‘এমস রিসার্চ সেন্টার’-এর বিজ্ঞানী জ্যাক লিসাউয়ের বলেন, ‘‘কেপলারের সন্ধান দেওয়া গ্রহগুলি নিয়ে একটি সারণি তৈরি করছেন বিজ্ঞানীরা। তাদের চরিত্র, বৈশিষ্ট্য... এ সব উল্লেখ রাখা হচ্ছে তাতে। এ বারে ওই তালিকায় কেপলার-৩৮৫-র নাম যুক্ত হল।’’