বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের আনাচকানাচে কত অজানা বস্তু লুকিয়ে আছে, ক্ষুদ্র পৃথিবী থেকে তার নাগাল পাওয়া যায় না। তবু এই পৃথিবীতে বসেই পৃথিবীর বাইরের জগত নিয়ে গবেষণা করে চলেন বিজ্ঞানীরা।
অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতির সাহায্যে পৃথিবীর কাছাকাছি মহাকাশ এবং সেখানকার গ্রহ, উপগ্রহ, নক্ষত্রের ঠিকানা পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। কিন্তু দূরের জগত এখনও অস্পষ্ট। সেখান থেকেই ভয়ঙ্কর এক বিপদের আশঙ্কা করা হচ্ছে।
আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা মহাকাশে একটি ‘পরমাণু বোমা’র হদিস পেয়েছে। যা আগামী দিনে পৃথিবীর কাছে চলে আসতে পারে। এমনকি, পৃথিবীর সঙ্গে তার সংঘর্ষও অসম্ভব নয়।
মহাকাশের এই ‘পরমাণু বোমা’ আসলে একটি গ্রহাণু। বিজ্ঞানীরা যার নাম দিয়েছেন ‘বেণু’। বহু দূর থেকে পৃথিবীর দিকেই এগিয়ে আসছে এই গ্রহাণু।
‘বেণু’র নামকরণ করা হয়েছে এক কাল্পনিক পাখির নাম অনুযায়ী। মিশরের পুরাণে সেই পাখির উল্লেখ আছে। সূর্য, সৃষ্টি এবং পুনর্জন্মের সঙ্গে ‘বেণু’ পাখির যোগ রয়েছে। সেই কারণে এই নামটিকে বেছে নেওয়া হয়েছে।
নাসার বিজ্ঞানীদের ধারণা, মহাকাশের এই গ্রহাণুতেই লুকিয়ে পৃথিবী ধ্বংসের বীজ। যদি ‘বেণু’র সঙ্গে পৃথিবীর সংঘর্ষ হয়, তবে কোনও উপায়ের রক্ষা পাওয়া সম্ভব নয়। ধ্বংস তখন অনিবার্য।
নিউ ইয়র্কের ৩৮১ মিটার উঁচু এম্পায়ার স্টেট বিল্ডিংয়ের চেয়েও লম্বা গ্রহাণু ‘বেণু’। চওড়ায় এটি ৫১০ মিটার। এই বিশাল পাথরের খণ্ডের সঙ্গে পৃথিবীর ধাক্কা লাগলে কী হতে পারে, তার একটি ধারণা দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
পৃথিবীর সঙ্গে এই গ্রহাণুর ধাক্কা লাগলে তা থেকে ১২ হাজার মেগাটন শক্তি নিঃসৃত হবে। পৃথিবীতে এখনও পর্যন্ত মানুষের দ্বারা তৈরি সবচেয়ে শক্তিশালী পরমাণু বোমার চেয়েও যা ২৪ গুণ বেশি শক্তিশালী বিস্ফোরণ ঘটাতে সক্ষম।
বিজ্ঞানীদের গণনা অনুযায়ী, যদি ‘বেণু’র সঙ্গে পৃথিবীর সংঘর্ষ হয়, তা হবে ২২ শতকের শেষ দিকে বা ২৩ শতকের শুরুতে। একটি সম্ভাব্য তারিখও গণনা করে বার করা গিয়েছে। ২১৮২ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর বিকেলে সংঘর্ষ হতে পারে।
তবে ‘বেণু’ পৃথিবীতে ধাক্কা খাবে কি না, তা এখনও নিশ্চিত নয়। বরং আশঙ্কা অতি ক্ষীণ। ২৩০০ সালের মধ্যে পৃথিবীর সঙ্গে এই গ্রহাণুর ধাক্কা খাওয়ার সম্ভাবনা ১৭৫০ বারের মধ্যে এক বার মাত্র।
সংঘর্ষের আশঙ্কা আপাতত ক্ষীণ বলেই জানিয়েছে নাসা। তবে গ্রহাণুটি পৃথিবীর কাছাকাছি আসবে। তাতেও ক্ষতি হতে পারে নীল গ্রহের। পৃথিবী থেকে ‘বেণু’র সম্ভাব্য দূরত্ব হতে পারে প্রায় ৭৫ লক্ষ কিলোমিটার। মহাকাশের হিসাবে এই দূরত্ব কিন্তু খুব বেশি নয়।
গ্রহাণু ‘বেণু’র হাত থেকে পৃথিবীকে বাঁচাতে কোমর বেঁধে নেমে পড়েছে নাসা। তারা ওই গ্রহাণু সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করার জন্য মহাকাশে একটি যান পাঠিয়েছিল। যার নাম ‘ওসিরিস-রেক্স’।
২০১৬ সালে মহাকাশে পাঠানো এই মহাকাশযানটির কাজ ‘বেণু’কে পর্যবেক্ষণ করা এবং তা থেকে তথ্য সংগ্রহ করা। সাত বছর ধরে পর্যবেক্ষণের পর অবশেষে পৃথিবীতে ফিরে এসেছে ‘ওসিরিস-রেক্স’।
গ্রহাণুটি থেকে নমুনা সংগ্রহ করে এনেছে নাসার যন্ত্র। অন্তত ২৮ গ্রাম নমুনা তুলে আনা হয়েছে। বিজ্ঞানীরা সেই নমুনা পরীক্ষা করে দেখবেন। তাতে গ্রহাণু ‘বেণু’র ক্ষমতা সম্পর্কে ধারণা আরও স্পষ্ট হবে।
নমুনা নিয়ে আমেরিকার উটা মরুভূমিতে নেমেছে ‘ওসিরিস-রেক্স’। নাসার এক কর্তা জানিয়েছেন, এই নমুনা পরীক্ষা করে গ্রহাণু সম্পর্কে আরও তথ্য জানা যাবে। পৃথিবীর পক্ষে ক্ষতিকর অন্য গ্রহাণু সম্পর্কেও ধারণা মিলবে।
নাসার বিজ্ঞানীরা আরও জানিয়েছেন ‘ওসিরিস-রেক্স’-এর ফিরে আসাকে বড় সাফল্য হিসাবে দেখছেন। তাঁদের দাবি, এর আগে এত বড় নমুনা মহাকাশ থেকে পৃথিবীতে এক বারই আনা হয়েছিল। চাঁদের মাটির নমুনা এনেছিল নাসার অ্যাপোলো মিশন।
২০২৩ সালের ১১ অক্টোবর একটি কনফারেন্সের মাধ্যমে গ্রহাণু ‘বেণু’র নমুনা পরীক্ষার ফলাফল, প্রাপ্ত তথ্য ঘোষণা করবে নাসা।