বর্তমানে যুগলদের একত্রবাস করা সাধারণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। চাকরি বা পড়াশোনার সূত্র বাড়ি থেকে দূরে পাড়ি দিয়ে হামেশাই যুগলদের একত্রবাস করতে দেখা যায়। কিন্তু একসঙ্গে তিন জন একত্রবাস করছেন এবং তাঁরা একে অপরের সঙ্গে বহুগামী সম্পর্কে রয়েছেন, এমনটা দৃষ্টান্ত বিরল।
মুম্বইয়ের বাসিন্দা আশিস মেহরোত্র, শ্বেতা সঙ্গতানি এবং তানিশা আরকের প্রেম এবং একত্রবাসের কাহিনি সমাজের বহু প্রচলিত ধ্যানধারণাকে ভেঙে দিয়েছে। যুব সমাজের এই তিন প্রতিনিধি শুধু যে একসঙ্গে একই বাড়িতে থাকেন তা-ই নয়, তিন জনের মধ্যে শারীরিক সম্পর্কও একে অপরের কাছে স্পষ্ট।
কী ভাবে শুরু হল এই প্রেমের কাহিনি?
অতিমারি আবহের কয়েক মাস আগে আশিসের সঙ্গে নেটমাধ্যমে আলাপ হয় তানিশার। শীঘ্রই আশিস এবং তানিশা একে অপরের সঙ্গে মেলামেশা শুরু করেন।
তানিশা প্রেম নিবেদন করলে আশিস জানান, তিনি বিবাহিত এবং তাঁর স্ত্রীর নাম শ্বেতা।
তানিশার কাছে নিজের বিবাহিত জীবন নিয়ে কোনও দিন কোনও লুকোছাপা করেননি আশিস। বরাবর বিয়ে নিয়ে খোলামেলাই ছিলেন তিনি। আশিস, তানিশাকে এ-ও জানিয়েছিলেন, তিনি তাঁর স্ত্রীকে খুবই ভালবাসেন এবং নিজের স্ত্রীকে ছেড়ে যাওয়ার কোনও ইচ্ছা তাঁর নেই। এই সব কথা শুনেও আশিসের সঙ্গেই প্রেম চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তানিশা।
প্রেম কিছু দিন গড়াতেই আশিসকে একসঙ্গে এক বাড়িতে থাকার প্রস্তাব দেন তানিশা। আশিস সাফ জানিয়ে দেন, শ্বেতা অনুমতি দিলে তবেই তাঁদের একসঙ্গে থাকা সম্ভব।
এর পরই আশিস তাঁর প্রেমিকার সঙ্গে শ্বেতার আলাপ করান। যদিও তানিশার বিষয়ে শ্বেতাকে আগে থেকেই জানিয়ে রেখেছিলেন তিনি।
আলাপের পর ঘনিষ্ঠতাও বাড়ে তানিশা এবং শ্বেতার মধ্যে। একসঙ্গে আড্ডা দেওয়া থেকে শুরু করে একান্তে সময় কাটানো, একে অপরের সঙ্গে সহজ হতে শুরু করেন শ্বেতা-তানিশা।
শ্বেতা-আশিস-তানিশা তিন জনেই ধীরে ধীরে বুঝতে পারেন, তাঁরা একে অপরের সঙ্গে থাকতে চান এবং এক বাড়িতেই থাকতে চান। আশিস এবং তানিশার শারীরিক সম্পর্ককেও সহজেই স্বীকৃতি দেন শ্বেতা।
এর পর থেকেই একসঙ্গে পথ চলা শুরু তিন জনের। একসঙ্গে খাওয়া-দাওয়া থেকে শুরু করে ঘুরতে যাওয়া, একে অপরকে ছাড়া এক মুহূর্ত কাটে না তিন প্রেমিক-প্রেমিকার। অতিমারি আবহেও তিন জন একসঙ্গেই ছিলেন।
তাঁদের একটি ইনস্টাগ্রাম পেজ রয়েছে। যৌনশিক্ষা এবং এর প্রয়োজনীয়তা নিয়ে মানুষকে সচেতন করার উদ্দেশ্যে এই ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টটি খোলা হয়েছে বলে দাবি তাঁদের। শারীরিক সম্পর্ক নিয়ে বিচিত্র অভিজ্ঞতা, বহুগামিতা এবং হতাশা কাটিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার পন্থা নিয়ে ইনস্টাগ্রামে আলোচনা করেন এই ত্রয়ী।
ওই ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট থেকে আদর-পুতুলও বিক্রি করা হয়।
এক বিদেশি পত্রিকায় দেওয়া সাক্ষাৎকারে আশিস জানান, “মজার বিষয় হল যে আমাদের সম্পর্ক নিয়ে বার বার কৈফিয়ত দিতে হয়। কেন আমরা ‘আদর্শ’ একগামী পরিবার তৈরি করিনি তা নিয়েও বহু প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়। সমাজের পিতৃতান্ত্রিক চরিত্রের জন্য বিয়ে এবং পরিবারের একটি গতানুগতিক ধারণা তৈরি হয়েছে। কিন্তু আমাদের ক্ষেত্রে তেমনটা হয়নি। আমরাও একটি স্বাভাবিক পরিবার। তবে আমরা কী ভাবে জীবন কাটাব তা আমরা নিজেরা ঠিক করে নিয়েছি।’’
আশিস আরও বলেন, ‘‘এমন কোনও সরকারি নথি নেই যাতে তাঁদের তিন জনের সম্পর্ক কী সেটা বোঝানো সম্ভব।’’ কোনও আপৎকালীন অবস্থায় বা চিকিৎসার ক্ষেত্রে তিনি এবং তাঁর স্ত্রী শ্বেতা তানিশার বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না বলেও আশিস জানিয়েছেন। আশিস এ-ও জানিয়েছেন, তাঁরা যে বাড়িতে ভাড়া থাকেন সেখানেও মালিকের সঙ্গে করা চুক্তিপত্রে তানিশার নাম কোথাও নেই।
অন্য দিকে শ্বেতার দাবি, তিনি আশিসকে ভালবেসে বিয়ে করেছিলেন। আশিসকে বিয়ে করা কোনও ভুল সিদ্ধান্ত ছিল না, তা তিনি আগে থেকেই জানতেন। তাঁর জীবন স্বাভাবিক ভাবেই কাটছিল। কিন্তু যখন তাঁর সঙ্গে তানিশার আলাপ হয়, তখন তাঁদের শারীরিক সম্পর্কে উন্নতি হয়। একে অপরের প্রতি অনুভূতিও বৃদ্ধি পায়।
পুরো বিষয়টি নিয়ে কী মত তানিশার? তানিশার দাবি, সংসার এবং বাড়ি সম্পর্কে তাঁর ধারণা তথাকথিত ধ্যানধারণা থেকে একেবারেই আলাদা। তিমি জানিয়েছেন, তাঁর কাছে সংসার সেটা নয়, যেখানে স্বামী বা স্ত্রী একে অপরের জন্য অপেক্ষা করে থাকে।
তানিশা বলেন, ‘‘আমি যেখানে আমার ভালবাসার মানুষদের সঙ্গে বা সব থেকে প্রিয় বন্ধুদের সঙ্গে থাকি, সেটাই আমার বাড়ি। আমি গর্ব এবং মর্যাদার সঙ্গে সেই বাড়িতে জীবন কাটাতে চাই। তার জন্য কোনও কাগজপত্রের প্রয়োজন নেই।’’