২২ জানুয়ারি উদ্বোধন হয়েছে অযোধ্যার রামমন্দিরের। তার পর থেকে ব্যস্ততা লেগেই রয়েছে শহর জুড়ে। প্রতি দিনই পুণ্যার্থীদের ভিড় লেগে রয়েছে মন্দির চত্বরে। অযোধ্যার আশেপাশের এলাকা তো বটেই, দূরদূরান্ত থেকেও ভক্তদের সমাগম হচ্ছে অযোধ্যায়।
দর্শনার্থীদের মাথা গোঁজার ঠাঁই দিতে স্থানীয়দের অনেকেই নিজেদের ঘরে হোমস্টের ব্যবস্থা করেছেন। অনেকে রাতারাতি বাড়িকেই হোটেল বানিয়ে ফেলেছেন। তবুও সীমিত সংখ্যক হোটেলের কারণে অনেক পুণ্যার্থীই পছন্দমতো থাকার জায়গা পাচ্ছেন না।
আর তাই অযোধ্যার ভিড় সামলাতে শহর জুড়ে এখন শুধু হোটেল এবং গেস্ট হাউস খোলার ধুম। জমিয়ে চলছে জমি বেচাকেনা।
হিসাব বলছে, আগামী তিন-চার বছরে অযোধ্যার মাটিতে ৫০-১০০টি নতুন হোটেল তৈরি হয়ে যাবে। যার মধ্যে অন্তত চারটি খুলতে চলেছে ১২১ বছরের পুরনো এক হোটেল সংস্থা।
ইতিমধ্যেই ওই সংস্থা অযোধ্যায় জমি কেনার জন্য তোড়জোড় শুরু করেছে বলে সূত্রের খবর।
মঙ্গলবার অযোধ্যা যাচ্ছেন বলে আগেই জানিয়েছিলেন ওই সংস্থার এমডি এবং সিইও পুনিত ছাটওয়াল। অযোধ্যায় তাঁর সংস্থা চতুর্থ জমি কিনতে চলেছে বলেও জানিয়েছেন পুনিত।
পুনিতের কথায়, “তিন-চার বছরে অযোধ্যায় ৫০ থেকে ১০০টি হোটেল হবে। অযোধ্যাকে অন্যতম প্রধান ধর্মীয় স্থান হিসাবে গ্রহণ করেছে বিশ্ব। শহরের প্রয়োজনীয় উন্নয়নের কথাও আমরা মাথায় রাখছি।’’
বারাণসীতেও ওই সংস্থার হোটেল রয়েছে। সেখানেও নতুন ঘর তৈরি করার পরিকল্পনা শুরু করা হয়েছে বলে সংস্থা সূত্রে খবর।
এক নামী হোটেল গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান এমেরিটাস এবং প্রধান উপদেষ্টা জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত অযোধ্যায় মাঝারি থেকে বিলাসবহুল ১২টি হোটেল তৈরির কথা ভাবা হয়েছে।
ইতিমধ্যেই ভারতের একাধিক নামীদামি হোটেল সংস্থা অযোধ্যায় নিজেদের হোটেল তৈরির কথা ঘোষণা করেছে।
অযোধ্যায় ১০০ কোটি টাকা খরচ করে হোটেল তৈরির কথা ঘোষণা করেছে একটি ভ্রমণ সংস্থাও।
উল্লেখযোগ্য যে, অযোধ্যার রামমন্দির উদ্বোধনের আগে থেকেই সেই শহরে হোটেল খুলতে চাইছে ভারতের অনেক সংস্থা। জমি-বাড়িতে বিনিয়োগ করতে চাইছেন অনেকে রিয়্যাল এস্টেট ব্যবসায়ীও।
এমনকি, রামমন্দির তৈরির পর থেকে প্রবাসীরাও নাকি অযোধ্যায় টাকা ঢালতে চাইছেন। এমন পরিস্থিতিতে অযোধ্যার জমি, ফ্ল্যাট এবং বাড়ির দাম বাড়ছে হু হু করে। বিভিন্ন জমির আইনি জটিলতা কাটাতে আইনজীবীদের চেম্বারের বাইরে ভিড় জমাচ্ছেন অযোধ্যাবাসী।
অযোধ্যার মাটিতে ‘খেলতে’ নেমেছে রিয়্যাল এস্টেটের তাবড় খেলোয়াড়েরা। সারা দেশে এবং এমনকি বিদেশ থেকেও বেশ কিছু বিনিয়োগকারী জমি কেনার জন্য রীতিমতো উঠেপড়ে লেগেছেন।
দেশের অনেক বিত্তবান প্রবীণ নাগরিকও অযোধ্যায় বাকি জীবনটুকু কাটাবেন বলে বাড়ি এবং ফ্ল্যাট কিনেছেন। অনেকে এখনও কেনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
এই মুহূর্তে আকাশ ছুঁয়েছে অযোধ্যার জমির দাম। মাত্র চার থেকে পাঁচ বছর আগে যা দাম ছিল, তার থেকে জমির দাম বেড়েছে চার থেকে ১০ গুণ!
বিশেষজ্ঞদের মতে, অযোধ্যায় রামমন্দির তৈরিকে কেন্দ্র করে পুরো শহরকে আবার নতুন করে সাজানো হয়েছে।
ঝাঁ-চকচকে করা হয়েছে রাস্তা-ঘাট-মহল্লা। চওড়া চওড়া সড়কও তৈরি করা হয়েছে। জল এবং বিদ্যুতের সমস্যাও কমানোর চেষ্টা করা হয়েছে। আর সেই কারণেই অযোধ্যা শহরে জমির দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। জমি-বাড়ি বিক্রিও হচ্ছে দেদার।
বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, অযোধ্যায় রামমন্দিরের উদ্বোধন হওয়ার পর থেকে সেই শহরে একটি ব্যবসায়িক ক্ষেত্রও তৈরি হয়েছে। আর সেই সুযোগকে কাজে লাগাতেই তাবড় হোটেল ব্যবসায়ীরা অযোধ্যায় হোটেল তৈরির কাজে হাত লাগিয়েছেন।