লিয়োনেল মেসির হাতেই হয়তো বিশ্বকাপ দেখতে চেয়েছিলেন সিংগভাগ ফুটবলপ্রেমী। শেষ বারের মতো বিশ্বকাপের মঞ্চে নেমে স্বপ্ন পূরণ করতে পেরেছেন এলএম১০। বিশ্বকাপের ফাইনালে তাঁর ছায়ায় যেন ঢাকা পড়ে গিয়েছে আরও এক দুরন্ত প্রদর্শন।
কথা হচ্ছে কিলিয়ান এমবাপেকে নিয়ে। ২৪ বছরের এই ফরাসি তরুণ রবিবার ফাইনালে হ্যাটট্রিক করেছেন। আগুনের গোলার মতো তাঁর ৩টি গোল জড়িয়ে গিয়েছে আর্জেন্টিনার জালে।
১২০ মিনিটের খেলার শেষে টাইব্রেকারেও একটি গোল করেন এমবাপে। তাঁর পা থেকে আসা বল কোনও ভাবেই আটকাতে পারেননি বিশ্বকাপের সেরা গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্তিনেস।
কিন্তু হ্যাটট্রিক করেও ফাইনালের ট্র্যাজিক নায়ক হয়ে থেকে যেতে হয়েছে এমবাপেকে। তাঁর দল হেরে গিয়েছে। দিনের শেষে এমবাপে ফ্রান্সের পরাজিত সৈনিক।
এমবাপের লড়াইকে কুর্নিশ করেছেন আপামর ফুটবলপ্রেমী। বল পায়ে কাতারের মাঠে যেন জাদু দেখিয়েছেন তিনি। অনেক চেষ্টা করেও দেশকে আর একটি বিশ্বকাপ এনে দিতে পারলেন না।
জিততে না পারার গ্লানি রবিবার ম্যাচের শেষে এমবাপের চোখেমুখে স্পষ্ট ফুটে উঠেছিল। সর্বোচ্চ গোলদাতা হিসাবে সোনার বুট নেওয়ার সময়ও সামান্য হাসতে দেখা যায়নি তাঁকে।
বিশ্বকাপে সেরার সম্মান পেয়েছেন মোট ৪ তারকা ফুটবলার। তাঁদের মধ্যে এমবাপে ছাড়া বাকি ৩ জনই আর্জেন্টিনার। পুরস্কার বিতরণের সময় দেখা যায় বিমর্ষ মুখে সোনার বুট হাতে মঞ্চ থেকে সরে যাচ্ছেন এমবাপে। বিজয়ী দলকে এক ফ্রেমে বন্দি হওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছেন নিজেই।
এমবাপে কিন্তু প্রথম নন, বিশ্বকাপে এর আগেও হ্যাটট্রিকের নজির রয়েছে। হ্যাটট্রিক করার পরেও হেরে যেতে হয়েছে, তেমন নজিরও বিরল নয়।
পরিসংখ্যান ঘাঁটলে দেখা যাচ্ছে, বিশ্বকাপে হ্যাটট্রিক এখনও পর্যন্ত হয়েছে ৫২ বার। তার মধ্যে রবিবারের ম্যাচের আগে ৩ বার হ্যাটট্রিক করার পরেও সেই ফুটবলারকে ম্যাচ হারতে হয়েছে।
হ্যাটট্রিকে ট্র্যাজেডির প্রথম নজির দেখা যায় ১৯৩৮ সালের বিশ্বকাপে। ব্রাজিলের বিরুদ্ধে খেলতে নেমে পোল্যান্ডের এরনেস্ট উইলিমোস্কি ৩ গোল দিয়েছিলেন। কিন্তু সে ম্যাচে শেষ হাসি হাসে ব্রাজিল। ৬-৫ গোলে ব্রাজিল ম্যাচটি জিতে গিয়েছিল।
এর পর ১৯৫৪ সালের বিশ্বকাপে ফের হ্যাটট্রিক করে পরাজয়ের নজির স্থাপিত হয়। অস্ট্রিয়ার বিরুদ্ধে খেলতে নেমে সুইৎজ়ারল্যান্ডের জোসেফ হুগি হ্যাটট্রিক করেন। অস্ট্রিয়া ৭-৫ গোলে ম্যাচটি জিতেছিল।
পরের নজির ১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপে। বেলজিয়ামের বিরুদ্ধে খেলতে নেমে সোভিয়েত ইউনিয়নের ইগোর বেলানভ ৩ গোল দেন। কিন্তু ম্যাচটি ৩-৪ গোলে হেরে যায় সোভিয়েত ইউনিয়ন।
বিশ্বকাপে এই ট্র্যাজিক নায়কের তালিকায় চতুর্থ হলেন এমবাপে। একই সঙ্গে বিশ্বকাপের ফাইনালে হ্যাটট্রিক করার বিরল নজিরও গড়েছেন তিনি। তাঁর আগে এই রেকর্ড ছুঁয়েছিলেন কেবল এক জন ফুটবলার। তিনি ইংল্যান্ডের জিয়োফ হার্স্ট।
বিশ্বকাপে হ্যাটট্রিক করেও জিততে পারেননি আরও এক তারকা ফুটবলার। তিনি ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো। ২০১৮ সালের বিশ্বকাপে স্পেনের বিরুদ্ধে তিনি হ্যাটট্রিক করেছিলেন। কিন্তু সেই ম্যাচ ড্র হয়। ফলাফল দাঁড়ায় ৩-৩।
রবিবারের ফাইনালে আর্জেন্টিনার জয় দেখার পর ফুটবল সমর্থকেরা এমবাপেকে ট্র্যাজিক নায়ক হিসাবে মেনে নিয়েছেন। অনেকে বলছেন, এমবাপে আরও একাধিক বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ পাবেন। ইতিমধ্যে দেশের জার্সি গায়ে তাঁর একটি বিশ্বকাপ জেতা হয়ে গিয়েছে। ফলে এখনই নিরাশ হওয়ার কিছু নেই।