. ৩০০০ বছরেরও পুরনো এক ‘অমূল্য সম্পদের’ খোঁজ পেলেন জার্মানির প্রত্নতত্ত্ববিদেরা। আর এত বছর পরও সে জিনিসের জৌলুস এক ফোঁটা কমেনি।
দক্ষিণ জার্মানির বাভারিয়ার একটি সমাধিস্থলে এই সম্পদের খোঁজ পেয়েছেন প্রত্নতত্ত্ববিদেরা। কিন্তু কী সেই সম্পদ?
জার্মানির প্রত্নতত্ত্ববিদের ওই দল জানিয়েছেন, বাভারিয়ার ওই সমাধিস্থল থেকে তাঁরা অষ্টভুজাকৃতি একটি তরোয়াল খুঁজে পেয়েছেন। যার বয়স আনুমানিক তিন হাজার বছরেরও বেশি!
‘বাভারিয়ান স্টেট অফিস ফর দ্য প্রিজারভেশন অফ মনুমেন্টস’-এর এক বিবৃতি অনুযায়ী, তরোয়ালটি এত ভাল ভাবে সংরক্ষিত ছিল যে, সেটি এখনও চকচক করছে।
জুন মাসের শুরুর দিকে বাভারিয়ার দোনাউ-রিয়েসের একটি সমাধিস্থল থেকে তরোয়ালটি উদ্ধার করা হয়।
প্রত্নতত্ত্ববিদদের বিশ্বাস, উপহার বা স্মৃতি হিসাবে ওই তরোয়ালটি সেখানে কবর দেওয়া হয়েছিল।
এ-ও মনে করা হচ্ছে, ব্রোঞ্জের তরোয়ালটি খ্রিস্টপূর্ব ১৪ শতকের শেষের দিকে তৈরি। অর্থাৎ, মধ্য ব্রোঞ্জ যুগে সেটি তৈরি করা হয়েছিল।
প্রত্নতত্ত্ববিদদের বিবরণ অনুযায়ী, সম্পূর্ণরূপে ব্রোঞ্জ থেকে তৈরি এই তরোয়ালটির হাতলও অষ্টভুজাকৃতি। এই আবিষ্কারকে বিরল বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা।
বিশেষজ্ঞেরা এ-ও মনে করছেন, ওই সমাধিস্থলের আশপাশে আরও অনেক বিরল এবং ঐতিহাসিক সম্পদ খুঁজে পাওয়া যেতে পারে। তাই ওই এলাকা ঘিরে ইতিমধ্যেই আরও পরীক্ষানিরীক্ষা চালানো হচ্ছে।
‘বাভারিয়ান স্টেট অফিস ফর দ্য প্রিজারভেশন অফ মনুমেন্টস’-এর প্রধান তথা অধ্যাপক ম্যাথিয়াস ফিলের কথায়, ‘‘তরোয়াল এবং সমাধিস্থলটি পরীক্ষা করে দেখতে হবে। প্রত্নতত্ত্ববিদেরা ওই এলাকাতে খননকার্য চালিয়ে আরও খোঁজ চালাতে চাইছেন।’’
ম্যাথিয়াস আরও বলেন, “এই ভাবে সংরক্ষণ করা জিনিস সহজে দেখতে পাওয়া যায় না। সেই অর্থেই এই আবিষ্কার বিরল।’’’
বিশেষজ্ঞেরা এ-ও মনে করছেন, এই তরোয়ালটি শুধুমাত্র স্মৃতির উদ্দেশে তৈরি করা হয়নি। এটি আদপে কারও অস্ত্র ছিল। তরোয়ালের ফলার ধার দেখেই প্রাথমিক ভাবে সেই অনুমান করছেন বিশেষজ্ঞেরা।
সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, যে সমাধিস্থল থেকে অস্ত্রটি উদ্ধার হয়েছে, সেখানে তিন জনের দেহাবশেষও রয়েছে। এর মধ্যে দু’টি দেহাবশেষ পুরুষের এবং একটি মহিলার।
এই তিন জনকে একে অপরের উপরে কবর দেওয়া হয়েছিল বলেও সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে। তাঁদের মধ্যে কোনও পারিবারিক সম্পর্ক ছিল কি না, তা এখনই স্পষ্ট নয়। তবে তাঁদের সমাধিতে প্রচুর পরিমাণে সামগ্রী রাখা হয়েছিল বলে বিশেষজ্ঞেরা জানিয়েছেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, দক্ষিণ জার্মানি, উত্তর জার্মানি এবং ডেনমার্কে এই ধরনের ব্রোঞ্জের তরোয়াল তৈরি করা হত।
প্রসঙ্গত, ব্রোঞ্জের এই ধরনের তরোয়াল প্রথম আবিষ্কৃত হয়েছিল ১৬০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ নাগাদ। মোটামুটি ৬০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত এই ধরনের অস্ত্র ব্যবহারের চল ছিল।
প্রত্নতত্ত্ববিদেরা এর আগেও ইউরোপে অনেক সমাধিস্থলে খননকাজ চালিয়ে ব্রোঞ্জ যুগের তলোয়ার আবিষ্কার করেছেন। যার মধ্যে ২০১৫ সালে হাতির দাঁত এবং সোনা দিয়ে কারুকার্য করা ব্রোঞ্জের একটি তলোয়ার গ্রিস থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।