চাঁদে নাসার দ্বিতীয় অভিযানের প্রস্তুতি চলছে। সেই সঙ্গে মঙ্গলের পথেও নজর রেখেছে আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা। এই দুই ক্ষেত্রেই অভিযানে শামিল হতে পারেন এক ভারতীয় বংশোদ্ভূত। তাঁর নাম অনিল মেনন।
বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে ১০ মহাকাশচারীকে আগামী অভিযানের জন্য বেছে নিয়েছে নাসা। ২০২১ সালে এই ১০ ভাবী মহাকাশচারীর নাম ঘোষণা করা হয়। তালিকায় অন্যতম ছিলেন ৪৭ বছরের অনিল।
চাঁদে, মঙ্গলে বা আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে মহাকাশচারী হয়ে যাওয়ার জন্য ১২ হাজারেরও বেশি আবেদন জমা পড়েছিল নাসার কাছে। তাঁদের মধ্যে থেকে অনিল-সহ ১০ জনকে বেছে নেওয়া হয়। তালিকায় চার জন ছিলেন মহিলা। তাঁদের দু’বছর ধরে মহাকাশে যাওয়ার প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
নাসার সঙ্গে অনিলের যোগাযোগ অবশ্য নতুন নয়। এক সময় নাসার বিভিন্ন মহাকাশ অভিযানে মহাকাশচারীদের স্বাস্থ্যপরীক্ষা এবং জরুরি অস্ত্রোপচারের দায়িত্বও ছিল অনিলের কাঁধে। সেই সূত্রে মহাকাশ সংক্রান্ত কাজের সঙ্গে অনেক দিন ধরেই জড়িত অনিল।
শুধু নাসা নয়, আমেরিকার সেনাবাহিনীতেও পরিচিত নাম অনিল। আন্তর্জাতিক মহলে বহুমুখী প্রতিভার জন্য তাঁর খ্যাতি রয়েছে। তিনি একাধারে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার এবং পাইলট। প্রতি ক্ষেত্রেই সাফল্যের শিখরে পৌঁছেছেন প্রতিভার জোরে।
১৯৭৬ সালে আমেরিকার মিনেসোটা প্রদেশের মিনেপলিস শহরে অনিলের জন্ম। তাঁর বাবা ভারতীয়, মা ইউক্রেনীয়। দু’জনেই নিজ নিজ দেশ ছেড়ে আমেরিকায় যান সত্তরের দশকের গোড়ার দিকে। ভারতীয় বংশোদ্ভূত হিসাবে আমেরিকায় অনিলের উত্থানের কাহিনি চমকপ্রদ।
১৯৯৯ সালে ম্যাসাচুসেটসের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নিউরোবায়োলজিতে ব্যাচেলর ডিগ্রি লাভ করেন। হার্ভার্ডেই তিনি হানিংটন রোগ নিয়ে বেশ কিছু দিন গবেষণা করেন। পরে পোলিয়ো নিয়ে গবেষণার জন্য ভারতে আসেন। রোটারি অ্যামবাসাডোরিয়াল স্কলার হিসাবে ভারতে ওই সময় টানা এক বছর কাটিয়ে যান অনিল।
এর পর লেখাপড়ার মোড় কিছুটা অন্য দিকে ঘুরিয়ে দেন অনিল। স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা করেন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে। ২০০৪ সালে ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে আবার ডাক্তারির দিকে ঝোঁকেন।
পরবর্তী ৫ বছর ডাক্তারি পড়েন অনিল। ২০০৯ সালে স্ট্যানফোর্ড মেডিক্যাল স্কুল থেকে তিনি মেডিসিন পাশ করেন। পুরোদস্তুর চিকিৎসক হিসাবে তাঁর পরিচিতি গড়ে ওঠে।
এর পর আমেরিকার বায়ুসেনায় যোগ দেন অনিল। তিনি আমেরিকার বিমানবাহিনীর লেফটেন্যান্ট কর্নেল। সেনার বিমান চালানোর পাশাপাশি অসুস্থ সৈনিকের চিকিৎসার দায়িত্বও ছিল তাঁর কাঁধে।
২০১০ সালে হাইতির ভূমিকম্প, ২০১৫ সালে নেপালের ভূমিকম্প এবং ২০১১ সালে রেনো এয়ার শো দুর্ঘটনায় আন্তর্জাতিক রেড ক্রসের তরফে চিকিৎসক হিসাবে যান অনিল। দিনরাত এক করে দুর্ঘটনাকবলিতদের চিকিৎসা করেন।
ইলন মাস্কের সংস্থা ‘স্পেস এক্স’-এর প্রথম ফ্লাইট সার্জেন নির্বাচিত হন অনিল। মহাকাশে মানুষ পাঠানোর জন্য ‘স্পেস এক্স’ পরীক্ষামূলক ভাবে যে ডেমো-২ মিশন চালিয়েছিল, তার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন তিনি।
অনিলের স্ত্রী অ্যানা মেননও মহাকাশ সংক্রান্ত গবেষণা এবং কর্মসূচির সঙ্গে যুক্ত। তিনি ‘স্পেস এক্স’-এর প্রধান স্পেস অপারেশন ইঞ্জিনিয়ার। অনিল এবং অ্যানার দুই সন্তান রয়েছে।
২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে নেটফ্লিক্সে ‘কাউন্টডাউন: ইনস্পিরেশন৪ মিশন টু স্পেস’ নামের একটি তথ্যচিত্র প্রকাশিত হয়। অনিল এবং তাঁর স্ত্রী সেখানে হাজির ছিলেন।
‘আর্টেমিস’ অভিযানে ২০২৫ সালের মধ্যে চাঁদে আবার মানুষ পাঠানোর পরিকল্পনা করেছে নাসা। তাই ভারতীয় বংশোদ্ভূত অনিলের সামনে রয়েছে চাঁদে যাওয়ার হাতছানি। তবে চন্দ্র অভিযানে মহাকাশচারী হিসাবে কে বা কারা থাকবেন তা এখনও ঘোষণা করা হয়নি।