বয়স মাত্র ৮ বছর। আর সেই নাবালক বয়সেই তিন তিনটে খুন! কথা হচ্ছে ‘বিশ্বের কনিষ্ঠতম’ সিরিয়াল কিলারের। নাম অমরজিৎ সাদা।
অমরজিতের জন্ম বিহারে। বিহারের মুসাহারি গ্রামে ১৯৯৮ সালে তার জন্ম। অমরজিতের বিষয়ে বিশেষ কোনও তথ্য পুলিশের জানা নেই। তবে পুলিশ জানে, ২০০৬-’০৭ সালের মধ্যে এই নাবালক তিন তিনটে খুন করেছিল।
অমরজিতের বাবা ছিলেন এক জন দিনমজুর। বাড়িতে নুন আনতে পান্তা ফুরোয় অবস্থা। তার মধ্যেই সংসার টানতেন অমরজিতের বাবা। সন্তানদের স্কুলে পড়াবেন, এমন অবস্থা তাঁর ছিল না। অমরজিতের পরিবারের কেউই কোনও দিন স্কুলের গণ্ডি পেরোননি।
ছোটবেলা থেকেই অমরজিতের একা একা সময় কাটত। বন্ধুবান্ধব বিশেষ কেউ ছিল না। স্থানীয় এলাকায় ঘোরাঘুরি করে এবং গাছের ফল পেড়ে দিন কাটত তার। শান্ত স্বভাবের অমরজিতকে দেখে বোঝার উপায় ছিল না যে, আট বছর বয়সেই সে ঠান্ডা মাথায় তিন জনকে খুন করতে পারে।
কী ভাবে হত্যালীলা চালিয়েছিল অমরজিৎ? ২০০৬ সালে অমরজিৎদের এক আত্মীয়া তাদের সঙ্গে দেখা করতে আসেন। ওই আত্মীয়া নতুন চাকরি পাওয়ায় কোলের সন্তানকে অমরজিতের পরিবারের কাছে রেখে কাজে যেতে চেয়েছিলেন।
সেই আত্মীয়া গ্রাম ছেড়ে শহরের উদ্দেশে রওনা দেওয়ার পর অমরজিতের মা ওই শিশুর যত্ন নেওয়া শুরু করেন।
এর মধ্যেই এক দিন নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে বাজার যান অমরজিতের মা। ছোট বোন এবং ওই আত্মীয়ার সন্তানের দায়িত্ব দিয়ে যান অমরজিৎকে।
সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, মা বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পরই নাকি ওই আত্মীয়ার সন্তানকে চড়-থাপ্পড় মারতে থাকে অমরজিৎ। ওই শিশুটি চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করলেও অমরজিৎ থামেনি।
সংবাদমাধ্যম ‘ক্রাইম ওয়্যার’-এর প্রতিবেদন অনুয়ায়ী, দীর্ঘ ক্ষণ চড়-থাপ্পড়ের পর শিশুটির গলা টিপে তাকে শ্বাসরোধ করে খুন করে অমরজিৎ।
শিশুটিকে খুনের পরও এক মুহূর্তের জন্য নাকি ঘাবড়ে যায়নি অমরজিৎ। শিশুটির দেহ বাড়ির বাইরে মাটির নীচে চাপা দিয়ে আবার ঘরে ফিরে আসে সে।
অমরজিতের মা বাড়ি ফিরে শিশুটির বিষয়ে জানতে চাইলে অপরাধের কথা অকপটে স্বীকার করে অমরজিৎ। তার বাবা তাকে মারধর করলেও পুলিশকে বিষয়টি জানাননি। ছেলের শাস্তি এড়াতে শিশুর মৃত্যু নিয়ে মিথ্যা গল্প ফাঁদে অমরজিতের বাবা-মা।
অমরজিতের দ্বিতীয় শিকার ছিল তার নিজের বোন। বাবা-মায়ের ঘুমের সুযোগ নিয়ে নিজের আট মাস বয়সি বোনের গলা টিপে খুন করেন অমরজিৎ। সে বারেও তাঁর বাবা-মা ছেলেকে বাঁচাতে মেয়ের মৃত্যু নিয়ে আত্মীয়স্বজনদের মিথ্যা বলেন।
তবে এর পরেও শান্ত হয়নি অমরজিতের খুনের ‘তেষ্টা’। তার তৃতীয় শিকার ছিল প্রতিবেশীর ছ’মাস বয়সি কন্যা খুশবু। ২০০৭ সালে খুশবুকে শ্বাসরোধ করে খুন করার পর ইট দিয়ে তার মাথা থেঁতলে দেয় অমরজিৎ।
খুশবুর মা চুনচুন দেবী মেয়ের মৃত্যুর জন্য অমরজিৎকে দায়ী করে পুলিশে অভিযোগ জানান। পুলিশ বিশ্বাসই করতে পারেনি যে, আট বছর বয়সি কোনও নাবালক খুনের মতো অপরাধ করতে পারে।
অমরজিৎ প্রাথমিক ভাবে পুলিশের কাছে খুশবুকে খুনের কথা স্বীকার করে। বোন এবং আত্মীয়ার সন্তানকে খুনের কথাও স্বীকার করে সে। এর পরেই তাকে হেফাজতে নেওয়া হয়।
পুলিশ সূত্রে খবর, জিজ্ঞাসাবাদের সময় অমরজিৎ কোনও কথা না বলে শুধুই খিলখিল করে হাসছিল। এর পর বিস্কুটের বিনিময়ে মুখ খুলতে রাজি হয় সে। কোনও রকম অনুশোচনা ছাড়াই নাকি গড়গড় করে খুনের কথা স্বীকার করে অমরজিৎ।
অমরজিৎকে আদালতে হাজির করানো হলে আদালতের তরফে তাকে মুঙ্গেরের একটি রিমান্ড হোমে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। ১৮ বছর বয়স না হওয়ার কারণে তাকে বিচারবিভাগীয় হেফাজতে রাখা যাবে না বলেও স্পষ্ট জানিয়ে দেয় আদালত।
ডাক্তারি পরীক্ষার পর দেখা যায়, অমরজিৎ মানসিক রোগে ভুগছিল। কাউকে আঘাত করে বা খুন করে অনাবিল আনন্দ পেত সে। এক মনোবিজ্ঞানীর মতে, ঠিক-ভুল নিয়ে কোনও বোধ ছিল না অমরজিতের।
বিভিন্ন প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৬ সালে অমরজিৎ ১৮ বছর বয়সে পা দিয়েছে। ২০২৩ সালে তাঁর বয়স প্রায় ২৫ বছরের কাছাকাছি। কিন্তু তিনি এখন কোথায় রয়েছেন, তা সকলেরই অজানা।