‘সারাভাই ভার্সেস সারাভাই’ ধারাবাহিকটির কথা মনে আছে? মায়া ও মনীষা— শাশুড়ি-পুত্রবধূর সম্পর্ক দর্শকদের মনে দাগ কেটেছিল। রত্না পাঠক শাহের মতো অভিনেত্রীর সঙ্গে একই পর্দায় কাজ করে সাবলীল অভিনয় দক্ষতার পরিচয় দিয়েছিলেন মনীষা ওরফে বাঙালি অভিনেত্রী রূপালি।
সেই মনীষা দীর্ঘ সময় ছোটপর্দা থেকে বিরতি নেওয়ার পর আবার কাজে ফিরে এসেছেন। বর্তমানে ‘অনুপমা’ ধারাবাহিকে মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করে সকলের মন কাড়ছেন এই অভিনেত্রী। কিন্তু ব্যক্তিগত জীবনে কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত করেছেন রূপালি।
সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে অভিনেত্রী তাঁর জীবনের ওঠাপড়া নিয়ে আলোচনা করেন। রূপালির বাবা বলিউড সিনেমাজগতের জনপ্রিয় পরিচলকের মধ্যে অন্যতম ছিলেন। ‘কোরা কাগজ’, ‘তপস্যা’, ‘তৃষ্ণা’-এর মতো একের পর এক হিট ছবি দর্শকদের উপহার দিয়েছিলেন পরিচালক অনিল গঙ্গোপাধ্যায়।
রাখী গুলজার, জয়া বচ্চন, রাজেশ খন্না, প্রেম চোপড়া, অমল পালেকর-সহ বহু নামকরা তারকার সঙ্গে কাজ করেছেন পরিচালক। রূপালি বলেছেন, ‘‘অভিনেতা হিসাবে সকলে রাজেশ খন্নার প্রশংসা করতেন, কিন্তু আমার কাছে বাবাই স্টার ছিলেন।’’
রোজ স্কুল থেকে ফেরার পথে রূপালি ফিল্ম সেটে চলে যেতেন। অনিল যখন কাজে ব্যস্ত থাকতেন, তিনি সেই ফাঁকে শ্যুটিং-এর কাজ দেখতেন। কী করে অভিনয় জগতে তিনি পদার্পণ করলেন, এই প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করায় অভিনেত্রী জানান, তাঁরা বাবা একটি ছবির শ্যুটিংয়ের কাজ শুরু করেছিলেন।
অনিল যে নায়িকাকে অভিনয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন, কোনও কারণে অনুপস্থিত ছিলেন তিনি। তখন সিনেমার সেটেই ছিলেন রূপালি। নিজের মেয়েই নায়িকার চরিত্রে অভিনয় করবেন বলে সিদ্ধান্ত নেন পরিচালক।
মাত্র ১২ বছর বয়সে ১৯৮৫ সালে মুক্তি পাওয়া ‘সাহেব’ ছবিতে রূপালির প্রথম পদার্পণ। কিন্তু অনিলের পরিচালনা করা দু’টি ছবি পর পর ফ্লপ করে।
তাঁদের সংসারে আর্থিক অনটন শুরু হওয়ায় সংসারের অভাব পূরণের জন্য বিভিন্ন কাজ করতে শুরু করেন রূপালি। কখনও তিনি হোটেলের কর্মী হিসাবে কাজ করেছেন, কখনও কেটারিং-এর কাজের সঙ্গে যুক্ত থেকেছেন অভিনেত্রী।
সাক্ষাৎকারে অভিনেত্রী এ-ও জানান, তাঁর বাবা যে হোটেলে অতিথি হিসাবে এসেছিলেন, পরিস্থিতির কারণে সেই হোটেলেই টেবিলে টেবিলে গিয়ে খাবার পরিবেশন করেছিলেন তিনি।
সেই সময় অর্থ উপার্জনের জন্য বিভিন্ন বিজ্ঞাপন মাধ্যমেও কাজ করেছিলেন রূপালি। কর্মসূত্রেই তাঁর জীবনসঙ্গীর সঙ্গে প্রথম আলাপ হয় রূপালির। তিনিই অভিনেত্রীকে পরামর্শ দেন ছোটপর্দায় অভিনয়ের জন্য চেষ্টা করতে। তাঁর পরামর্শ মেনেই এগিয়ে যান রূপালি।
২০০০ সালে ‘সুকন্যা’ ধারাবাহিকের মাধ্যমে ছোটপর্দায় তাঁর যাত্রা শুরু। তার পর কেরিয়ার জীবনে তাঁকে আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। রূপালি সব সময় তাঁর বাবাকেই জীবনের পথপ্রদর্শক হিসাবে মেনেছেন।
তাই ধারাবাহিকের কোনও গুরুত্বপূর্ণ দৃশ্যে অভিনয় করলেও তিনি অনিলের পরামর্শ নিতেন। অনিলই তাঁকে বলেছিলেন, কান্নার দৃশ্যে অভিনয় করতে হলে এমন দক্ষতার সঙ্গে অভিনয় করতে হবে যা দেখে দর্শকদের চোখেও জল আসে।
এর পর রূপালিকে ‘সঞ্জীবনী’, ‘বা, বহু ওউর বেবি’, ‘সারাভাই ভার্সেস সারাভাই’, ‘কহানি ঘর ঘর কি’-সহ বহু জনপ্রিয় ধারাবাহিকে অভিনয় করতে দেখা যায় রূপালি। কিন্তু অভিনেত্রী যখন তাঁর কেরিয়ারের শীর্ষে, তখনই ছোটপর্দা থেকে সাময়িক অবসর নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি।
এই ছ’বছরে তাঁর পরিবারের সঙ্গে, ছেলের সঙ্গে সময় কাটিয়েছেন রূপালি। সকলে তাঁর এই সিদ্ধান্তে অবাক হয়ে গিয়েছিলেন। বহু নেতিবাচক মন্তব্যও শুনতে হয়েছিল অভিনেত্রীকে।
কিন্তু তিনি কোনও কিছুর ভ্রুক্ষেপ না করে নিজের সিদ্ধান্তে অটল থেকেছেন। তবে, ২০১৬ সালে তাঁর বাবা মারা যাওয়ার পর মানসিক দিক দিয়ে ভেঙে পড়েন অভিনেত্রী। কাজে ফিরলে মন ভাল হবে ভেবে তাঁর স্বামীই পরামর্শ দেন আবার নতুন ভাবে ছোটপর্দায় কাজ শুরু করতে।
বর্তমানে ছোটপর্দায় যে অভিনেত্রীরা কাজ করছেন, উপার্জনের নিরিখে শীর্ষে রয়েছেন রূপালি। ‘অনুপমা’ দিয়ে শুরু হলেও অনুমান করা যায়, তাঁকে ছোটপর্দার অন্যান্য ধারাবাহিকেও দেখা যেতে পারে।