তথাগত অবতার তুলসী। বিহারে সাধারণ পরিবারে জন্ম নেওয়া এই পদার্থবিদ পরিচিত ভারতের ‘বিস্ময় বালক’ হিসাবে।
তথাগত খ্যাতির শীর্ষে পৌঁছন খুব কম বয়সে। পরিচিতি পেয়েছিলেন, ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি (আইআইটি)-র কনিষ্ঠতম অধ্যাপক হিসাবেও। মাত্র ২২ বছরে আইআইটি বম্বের অধ্যাপক হন তথাগত।
১৯৮৭ সালের ৯ সেপ্টেম্বর বিহারের পটনায় তথাগতের জন্ম। মাত্র ৯ বছর বয়সে তিনি স্কুলের গণ্ডি পেরোন।
তথাগত পদার্থবিদ্যায় স্নাতক হন ১১ বছর বয়সে। বয়স ১২ পেরোতে না পেরোতেই পটনা সায়েন্স কলেজ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিও অর্জন করেন।
স্নাতকোত্তর ডিগ্রি শেষে তথাগত ব্যাঙ্গালোরের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্সে (আইআইএসসি) ভর্তি হন। ২০০৯ সালে তিনি আইআইএসসি থেকে পদার্থবিজ্ঞান নিয়ে গবেষণা শেষ করেন। তখন তাঁর বয়স ছিল ২১।
তথাগতের গবেষণার বিষয় ছিল ‘জেনারেলাইজেশন অফ দ্য কোয়ান্টাম সার্চ অ্যালগরিদম’।
এক বছর পেরোতে না পেরোতেই, অর্থাৎ ২০১০ সালের জুলাইয়ে বম্বে আইআইটি থেকে ডাক পান তথাগত। চুক্তির ভিত্তি সহকারী অধ্যাপক পদে যোগ দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয় তাঁকে।
বম্বে আইআইটিতে গবেষণারত পড়ুয়াদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয় তথাগতকে। এর পর ভালই চলছিল। কিন্তু চাকরিতে যোগ দেওয়ার ৯ বছর পর, অর্থাৎ ২০১৯ সালে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয় ‘বিস্ময় বালক’কে।
চাকরি চলে যাওয়ায় যথেষ্ট হতবাক হয়ে গিয়েছিলেন তথাগত। তাঁকে বরখাস্ত করার সঙ্গত কারণ দেখানো হয়নি বলেও তিনি দাবি করেছিলেন।
তথাগতের মতে, অসুস্থতার কারণে দীর্ঘ ছুটি নেওয়ার জন্যই বম্বে আইআইটি কর্তৃপক্ষ তাঁকে বরখাস্ত করেন।
সংবাদমাধ্যম বিবিসির সঙ্গে সাক্ষাৎকারে তথাগত জানিয়েছিলেন, ২০১১ সালে তাঁর জ্বর হয়েছিল। সেখান থেকে তাঁর শরীরে অ্যালার্জি হয়ে যায়। দু’বছর ধরে শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হলে তিনি ২০১৩ সালে চার বছরের ছুটি নিয়ে পটনা চলে যান।
অ্যালার্জির কারণে তথাগত আর মুম্বই ফেরেননি। অবশেষে, ২০১৯ সালের জুলাই মাসে তাঁকে বরখাস্ত করে বম্বে আইআইটি।
এক সময়ের ‘বিস্ময় বালক’ তথাগত বর্তমানে বেকার। বর্তমানে তিনি ৩৫ বছর বয়সি যুবক। আইআইটি থেকে চাকরি যাওয়ার পর তিনি আর চাকরি পাননি। মুম্বইও ফেরেননি। পটনায় পৈতৃক বাড়িতে ভাইয়ের সঙ্গে থাকেন তথাগত।
তথাগত জানিয়েছিলেন, চাকরি ফিরে পেতে তিনি আদালতের দ্বারস্থ হতে চান। এ জন্য তিনি আইন নিয়ে পড়াশোনা শুরু করছেন। তথাগতের আবেদন, তাঁকে যেন অন্য আইআইটিতে চাকরির ব্যবস্থা করা হয়।
স্কুল থেকে শুরু করে গবেষণা— শিক্ষাগুরুদের কাছে তথাগত পরিচিত ছিলেন ভাল এবং মেধাবী ছাত্র হিসাবে।
২০০১ সালে তথাগত প্রথম সংবাদপত্রের শিরোনামে আসেন। তৎকালীন কেন্দ্রীয় সরকার তাঁকে একটি নোবেল বিজয়ী সম্মেলনে অংশগ্রহণের জন্য জার্মানিতে পাঠিয়েছিল।
ভারতীয় বংশোদ্ভূত আমেরিকার কম্পিউটার বিজ্ঞানীর সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে একটি গবেষণাপত্র লিখেছিলেন তথাগত। তবে সেই গবেষণাপত্র কখনও প্রকাশিত হয়নি।
তথাগতকে এক সময় এশিয়ার ‘সবচেয়ে’ প্রতিভাবান তরুণ হিসাবে অভিহিত করা হয়েছিল। ভারতীয় এক পত্রিকায় তাঁকে ‘মাস্টারমাইন্ড’ বলে উল্লেখ করা হয়।
দেশ-বিদেশের বিভিন্ন বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে তথাগতকে নিয়ে একাধিক অনুষ্ঠানও করা হয়েছে।