বিচ্ছেদ হয়ে গিয়েছে শিল্পা শেট্টির স্বামী রাজ কুন্দ্রার। কিন্তু কার সঙ্গে? তা স্পষ্ট নয় এখনও। তবে বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডেল রাজ জানিয়েছেন, তাঁর বিচ্ছেদ হয়ে গিয়েছে। কাছের মানুষজনদের পাশে থাকার বার্তাও তিনি দিয়েছেন। রাজের এই পোস্ট ঘিরে তৈরি হয়েছে জোর বিতর্ক। চলছে আলোচনা-সমালোচনার ঝড়। বলিপাড়ায় ঘুরে বেড়াচ্ছে নানা প্রশ্ন।
এক্স হ্যান্ডলে রাজ লিখেছেন, ‘‘আমাদের বিচ্ছেদ হয়ে গিয়েছে। এই কঠিন সময়ে আমাদের পাশে থাকার অনুরোধ করছি।’’ সমাজমাধ্যমে রাজের এই বার্তার পর প্রশ্ন উঠছে, কার সঙ্গে বিচ্ছেদ হওয়ার কথা জানিয়েছেন শিল্পার স্বামী? জল্পনা তৈরি হয়েছে, তা হলে কি শিল্পা এবং রাজের ১৪ বছরের দাম্পত্য জীবনে ইতি পড়তে চলছে? যদিও এ বিষয়ে রাজ স্পষ্ট করে কিছু বলেননি। মুখে কুলুপ এঁটেছেন শিল্পাও।
তবে বলিপাড়ায় গুঞ্জন, সত্যি সত্যিই বিচ্ছেদ হতে চলেছে যুগলের। ২০০৯ সালে সাতপাকে বাঁধা পড়েন রাজ এবং শিল্পা। তার পর টানা ১৪ বছরের সংসার। দুই সন্তানও রয়েছে যুগলের। সেই সংসারেই এ বার নাকি ইতি টানতে চলেছেন অভিনেত্রী এবং তাঁর ব্যবসায়ী স্বামী।
আবার রাজের ‘বিচ্ছেদ’ বার্তাকে গুরুত্ব দিতে রাজি নন শিল্পার অনুরাগীদের একাংশ। সংশ্লিষ্ট মহলের একাংশের দাবি, আসন্ন ছবির প্রচারের ফিকির হিসাবেই সমাজমাধ্যমে এই বার্তা দিয়েছেন রাজ। রাজের আসন্ন ছবির নাম ‘ইউটি৬৯’। সেই ছবির প্রথম ঝলকও ইতিমধ্যেই প্রকাশ্যে এসেছে। নভেম্বর মাসে মুক্তি পাবে ছবিটি। গল্পে নাকি রাজ হাজতবাস করা এক ব্যবসায়ীর চরিত্রে অভিনয় করবেন। অনেকের ধারণা, সেই ছবির প্রচার করতেই বিচ্ছেদের কথা জানিয়েছেন রাজ।
২০২১ সালে পর্নোগ্রাফি মামলায় মুম্বই পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন রাজ। সেই সময় আর্থার রোড জেলে প্রায় দু’মাস কাটাতে হয়েছিল তাঁকে। অনেক দিন স্ত্রী এবং সন্তানদের ছাড়াই ছিলেন রাজ। শিল্পার অনুরাগী মহলের একাংশের দাবি, রাজের হাজতবাসের সময় যে হেতু অভিনেত্রীকে এবং তাঁকে আলাদা থাকতে হয়েছিল, সেই কারণেই ছবির প্রচার করতে রাজ বিচ্ছেদের কথা সমাজমাধ্যমে জানিয়েছেন।
তবে সত্যিকারের বিচ্ছেদ হোক কিংবা প্রচারের অভিনব কৌশল, রাজ এবং শিল্পার সম্পর্ক নিয়ে জোর তরজা শুরু হয়েছে। যদিও এই প্রথম নয়, এর আগেও অনেক বিতর্ক তৈরি হয়েছে যুগলকে নিয়ে।
১৯৯৩-এর ‘বাজিগর’ ছবিতে আত্মপ্রকাশ হয়েছিল শিল্পার। তার পর একের পর এক ছবি করে গিয়েছেন তিনি। ‘ম্যায় খিলাড়ি তু আনাড়ি’, ‘হাতকড়ি’, ‘ছোটে সরকার’, ‘হিম্মত’, ‘ইনসাফ’, ‘আজাদ’, ‘ধড়কন’-এর মতো একাধিক সফল ছবিতে অভিনয় করেছেন। দাপটের সঙ্গে অভিনয় করেছেন ‘লাইফ ইন আ মেট্রো’-র মতো ভিন্ন ধারার ছবিতেও।
অভিনয় পরিসরের বাইরে শিল্পাকে নিয়ে সেই ভাবে চর্চা শুরু হয় তাঁর সঙ্গে অভিনেতা অক্ষয় কুমারের প্রেমের সম্পর্ক নিয়ে। ‘ইনসাফ’, ‘জানোয়ার’, ‘ম্যায় খিলাড়ি তু আনাড়ি’, ‘ধড়কন’—অক্ষয়ের সঙ্গে একাধিক ছবি করেছেন শিল্পা। এক সময় দু’জনের ঘনিষ্ঠতাও চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছিল।
কিন্তু সেই সম্পর্ক বেশি দিন টেকেনি। শিল্পা জানতে পেরে গিয়েছিলেন, তাঁর পাশাপাশি টুইঙ্কল খন্নার সঙ্গেও সমান তালে সম্পর্ক রেখেছিলেন অক্ষয়। তার পর অক্ষয়ের থেকে সরে আসেন তিনি। অক্ষয় এবং শিল্পার প্রেম নিয়ে যেমন গুঞ্জন কম হয়নি, তেমনি আবার দু’জনের বিচ্ছেদ নিয়েও বহু বিতর্ক রয়েছে। দীর্ঘ দিন ধরে একে অপরকে এড়িয়েই চলতেন অক্ষয়-শিল্পা।
২০০২ সালেও বিতর্কের মুখোমুখি হতে হয়েছিল শিল্পাকে। আন্তর্জাতিক রিয়্যালিটি শো ‘বিগ ব্রাদার’-এ সুযোগ পাওয়া একমাত্র ভারতীয় তারকা হিসাবে চর্চায় এসেছিলেন শিল্পা। সেই প্রতিযোগিতায় জয়ীও হন তিনি। কিন্তু প্রতিযোগিতা চলাকালীন মারাত্মক বর্ণবিদ্বেষের শিকার হতে হয়েছিল তাঁকে। ‘বিগ ব্রাদার’-এর ঘরে থাকাকালীন বিদেশি এক প্রতিযোগীর সঙ্গে দিনরাত বিরোধের কারণেও খবরের শিরোনামে উঠে এসেছিল তাঁর নাম।
২০০৬ সালে অভিনেত্রী রিমা সেন এবং শিল্পা দু’জনের নামে জামিন অযোগ্য ধারায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছিল মাদুরাই কোর্ট। তাঁদের বিরুদ্ধে অশ্লীল ফটোশুট করার অভিযোগ ছিল। বিতর্কের মুখে পড়েন তাঁরা। যদিও পরবর্তী কালে শিল্পাদের পক্ষেই আদালত রায় দেয়। শিল্পাদের যুক্তি ছিল, নাভি প্রদর্শন যদি অপরাধ হয়, অশ্লীল হয়, তা হলে ভারতের ঐতিহ্যবাহী পোশাক শাড়ি আগে নিষিদ্ধ করা হোক।
পরের বছরই আবার বিতর্কের মুখে পড়েন শিল্পা। এইড্স নিয়ে একটি সচেতনতা মূলক প্রচারে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। সেখানে হাজির ছিলেন আমেরিকার অভিনেতা রিচার্ড গেয়ারও। মঞ্চে উঠেই সবাইকে অবাক করে শিল্পাকে জড়িয়ে ধরে ক্রমাগত চুমু খেতে শুরু করেন রিচার্ড।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সারা দেশে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। শিল্পা এবং রিচার্ডের কুশপুতুল পোড়ানো হয়। রাজস্থান কোর্ট তাঁদের গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়েছিল। পরে যদিও সুপ্রিম কোর্ট তা খারিজ করে দেয়।
চোখধাঁধানো সৌন্দর্যের খোঁজে অস্ত্রোপচারের সাহায্য নিয়েছিলেন বলে মন্তব্য করেও বিতর্ক তৈরি করেন শিল্পা। শোনা যায়, নিজের নাকের আকার নিয়ে মোটেই খুশি ছিলেন না অভিনেত্রী। নিজেকে বদলে ফেলার কথা প্রকাশ্যে কবুল করেন শিল্পা। অতীতে সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেন, “হ্যাঁ। আমি নাকের আকার পরিবর্তন করিয়েছি। তাতে কী হয়েছে?” শিল্পা মনে করেন, এই অস্ত্রোপচারের কারণেই তাঁকে আরও সুন্দর লাগে।
২০০৯ সালে ব্রিটিশ-ভারতীয় ব্যবসায়ী রাজ কুন্দ্রার সঙ্গে বিয়ে হয় শিল্পার। তাঁর আসল নাম রিপু সুদন কুন্দ্রা। লন্ডনের বসবাসরত ভারতীয় পরিবারে জন্মগ্রহণ করা রাজ পশমিনা শালের ব্যবসা করে খুব অল্প বয়সেই কোটিপতি হয়ে যান। এর পর ধীরে ধীরে আরও ব্যবসা খুলে বসেন তিনি। ব্রিটেনে থাকা ভারতীয় ব্যবসায়ীদের তালিকায় তিনি এক অন্যতম নাম হয়ে ওঠেন।
শিল্পার সঙ্গে বিয়ের আগে ২০০৩ সালে কবিতা নামে এক মহিলার সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল রাজের। এক মেয়েও হয় তাঁদের। তিন বছরের দাম্পত্যের পর ২০০৬ সালে কবিতার সঙ্গে রাজের বিচ্ছেদ হয়ে যায়। এর তিন বছর পর তিনি ২০০৯ সালে শিল্পাকে বিয়ে করেন।
এর পর দীর্ঘ দিন সুখী দাম্পত্য কাটিয়েছেন শিল্পা এবং রাজ। এক পুত্র এবং এক কন্যাও রয়েছে দম্পতির। তবে ২০২১ সালে বিতর্কের মুখে পড়তে হয় দম্পতিকে।
২০২১ সালের জুলাই মাস। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে পর্ন ছবি বানানোর অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছিল রাজকে। সেই সময় সংবাদমাধ্যম থেকে সমাজমাধ্যম— রাজকে নিয়ে উত্তাল হয়ে ওঠে। রাজের নামের সঙ্গে বলিউডের অভিনেত্রী শিল্পার নাম জড়িয়ে থাকায় বিষয়টি নিয়ে আরও মাতামাতি শুরু হয়।
সেই ঘটনায় জেরা করা হয়েছিল শিল্পাকেও। স্বামীর হঠাৎ গ্রেফতারিতে শিল্পার দিকেও আঙুল উঠতে শুরু করে। স্বামীর এই কাণ্ড স্ত্রী শিল্পা কি জানতেন না? আর জানলে সব জেনে কী ভাবে তিনি চুপ করে বসে ছিলেন? প্রশ্ন ঘুরপাক খেতে থাকে শিল্পাকে নিয়ে।
গ্রেফতারির কয়েক মাস হাজতবাস করতে হয় রাজকে। আর্থার রোড জেলে প্রায় দু’মাস বন্দি ছিলেন তিনি। পরে জামিনে মুক্তি পান।
তবে এই প্রথম নয়, শিল্পা শেট্টির স্বামী এর আগেও জড়িয়েছেন বিতর্কে। আইপিএল বিশ্ব রাজকে চিনেছিল বিতর্ক দিয়েই। ২০১৬ এবং ২০১৭ সালে নির্বাসিত করা হয় রাজস্থান রয়্যালস দলকে।
২০০৮ সালে রাজস্থান রয়্যালসের আইপিএল জয়ও ভুলিয়ে দিয়েছিল ম্যাচ গড়াপেটা বিতর্ক। রাজস্থান বলতেই মুখ ভেসে ওঠে শেন ওয়ার্নের। মাঠে যদি থাকেন ওয়ার্ন, তবে মাঠের বাইরে ছিলেন শিল্পা শেট্টি। বলি অভিনেত্রী এবং তাঁর স্বামী রাজ ছিলেন রাজস্থান রয়্যালসের অন্যতম কর্ণধার। ‘হল্লা বোল’ রব তুলে প্রথম আইপিএল-এ বাকি দলগুলিকে পিছনে ফেলে দিয়েছিলেন তাঁরা। সামনে ওয়ার্ন এবং শিল্পা থাকলেও রাজস্থান দলের রাশ ছিল রাজের হাতেই।
ভারতীয় ক্রিকেটে ম্যাচ গড়াপেটার কলঙ্ক ফের মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিল রাজের হাত ধরে। দুই বছরের জন্য নির্বাসিত করা হয় রাজস্থান দলকে। ক্রিকেটের সব রকম বিষয় থেকে রাজকে নির্বাসিত করা হয় চিরকালের জন্য। শিল্পার স্বামী হয়ে উঠলেন আইপিএল-এর খলনায়ক।
রাজের এই ম্যাচ গড়াপেটা কাণ্ডে জড়িয়ে যায় শ্রীসন্থ, অজিত চান্ডিলা এবং অঙ্কিত চবণের মতো ক্রিকেটারের নাম। কিছু দিন আগে শ্রীসন্থের নির্বাসন তুলে নেওয়া হয়। সৈয়দ মুস্তাক আলি ট্রফিতে কেরল দলের হয়ে খেলতে দেখা যায় তাঁকে।
পর্নকাণ্ডের পর থেকে ক্যামেরার লেন্স থেকে দূরত্ব বজায় রেখে চলেন শিল্পার স্বামী। রাস্তায় ক্যামেরার সামনাসামনি পড়ে গেলে দেখা যায়, রাজের মুখে মাস্ক পরা। সেই সব রকমারি মাস্ক। কোনও ভাবেই মুখ থেকে মাস্ক খুলে প্রকাশ্যে আসেন না তিনি। মজা করে সমাজমাধ্যম ব্যবহারকারীরা রাজের নাম দেন ‘মাস্ক ম্যান’।
২০২১ সাল থেকেই সময়টা খারাপ যাচ্ছিল শিল্পার ব্যবসায়ী স্বামীর। তার মধ্যেই আবার তাঁর অভিনীত ছবি মুক্তির বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। সেই ছবি মুক্তির আগে তাঁর ‘বিচ্ছেদ’ টুইট নতুন করে বিতর্ক তৈরি হয়েছে।