জনপ্রিয় ইউটিউব শো ‘ইন্ডিয়াজ় গট ল্যাটেন্ট’-এ বসে অশ্লীল মন্তব্যের অভিযোগ। বিপাকে পড়েছেন কৌতুকাভিনেতা সময় রায়না এবং ইউটিউবার রণবীর ইলাহাবাদিয়া। এই নিয়ে দেশ জুড়ে হইচই পড়ে গিয়েছে। তৈরি হয়েছে বিতর্ক। দু’জনের বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে।
শুধু সময় এবং রণবীর নন, অনুষ্ঠানের বিচারকের আসনে থাকা জনপ্রিয় ইউটিউবার আশিস চঞ্চলানি, জসপ্রীত সিংহ এবং অপূর্বা মখীজার বিরুদ্ধেও এফআইআর দায়ের হয়েছে।
জনপ্রিয় কৌতুকাভিনেতা এবং ইউটিউবারদের বিরুদ্ধে অশ্লীলতা এবং যৌনতাপূর্ণ বিষয়বস্তু প্রচার করার অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু কী থেকে এই বিতর্কের সূত্রপাত? কী নিয়ে এত হইচই, বিতর্ক?
বিতর্কের সূত্রপাত, ইউটিউবের অনুষ্ঠান চলাকালীন রণবীরের এক মন্তব্যকে ঘিরে। ‘বিয়ারবাইসেপ’ নামে পরিচিত রণবীর। সময় সঞ্চালিত অনুষ্ঠানের মাঝে এক প্রতিযোগীকে রণবীর প্রশ্ন করেন, ‘‘আপনি কি সারা জীবন ধরে প্রতি দিন নিজের বাবা-মাকে সঙ্গম করতে দেখতে চান, না এক বার যোগ দিয়ে তাঁদের সঙ্গম চিরতরে বন্ধ করতে চান? কোনটা বেছে নেবেন?’’
রণবীরকে ওই প্রশ্ন করতে শুনে চমকে যান সময়ও। প্রশ্ন করে বসেন, ‘‘এ সব কী হচ্ছে ভাই?’’ তবে থামানো যায়নি ‘বিয়ারবাইসেপ’কে। পরে ওই প্রতিযোগীকে যৌনাঙ্গের আকার নিয়েও প্রশ্ন করতে শোনা যায় তাঁকে। বাকি বিচারকেরা রণবীরের ওই সব প্রশ্ন শুনে হাসতে থাকেন।
রণবীরের সেই মন্তব্যের ভিডিয়ো দ্রুত ভাইরাল হয়ে যায়। তাঁর প্রশ্ন অশালীন এবং আপত্তিকর দাবি করে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানান অনেকে। সমাজমাধ্যমে রোষের মুখে পড়েন রণবীর। নেটাগরিকদের অনেকেরই দাবি, রণবীর দায়িত্বজ্ঞানহীন ভাবে ওই মন্তব্য করেছেন।
নেটাগরিকদের সমালোচনার মুখে পড়েন সময়ও। শোতে ওই ধরনের কথাবার্তা বলার অনুমতি দেওয়া এবং যৌনতা প্রচারের অভিযোগ ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে। ভিডিয়োটি ইউটিউব থেকে সরানোরও দাবি ওঠে।
পুরো বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছেন লেখক এবং গল্পকার নীলেশ মিশ্র। পুরো বিষয়টিকে ‘বিকৃত’ মন্তব্য করে ইউটিউব অনুষ্ঠানটির নির্মাতাদের সমালোচনা করেছেন তিনি। এই ধরনের ‘কন্টেন্ট’ তরুণ প্রজন্মের দর্শকদের ক্ষতি করছে বলেও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তিনি।
সময়-রণবীরদের ভিডিয়ো পোস্ট করে নীলেশ এক্স হ্যান্ডলে লিখেছেন, ‘‘এই কন্টেন্টকে প্রাপ্তবয়স্কদের কন্টেন্ট বলে উল্লেখ করা নেই। অ্যালগরিদমের কারণে শিশুরাও ওই ভিডিয়োটি দেখতে পাবে।’’
অন্য দিকে, বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছেন কংগ্রেসের মুখপাত্র সুপ্রিয়া শ্রীনেতও। ইউটিউব কন্টেন্টটিকে ‘বিকৃত’ বলে মন্তব্য করে তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, কী ভাবে দর্শকদের একাংশ ওই মন্তব্য এত পছন্দ করতে পারেন? তাঁর কথায়, ‘‘বিষয়টি মোটেও সৃজনশীল নয়, বিকৃত। আমরা এই বিকৃত আচরণকে স্বাভাবিক ভাবে দেখতে পারি না।’’
মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডণবীসও বিষয়টি নিয়ে পদক্ষেপ করার ইঙ্গিত দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, বাক্স্বাধীনতার নামে কোনও ভাবেই অন্যের মর্যাদাকে ক্ষুণ্ণ করা যায় না।
এর পরেই গুয়াহাটি পুলিশ ভারতীয় ন্যায় সংহিতার একাধিক ধারায় সময়, রণবীর, আশিস, জসপ্রীত এবং অপূর্বার বিরুদ্ধে একটি এফআইআর দায়ের করে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা। হিমন্ত বলেছেন, ‘‘অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অশালীনতা প্রচার এবং যৌনতাপূর্ণ আলোচনায় জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে।’’
বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে মুম্বই পুলিশও। মুম্বইয়ের খার এলাকার যে স্টুডিয়োয় ওই অনুষ্ঠান ক্যামেরাবন্দি হয়েছিল, সেখানেও তল্লাশি চালিয়েছে পুলিশ।
তবে তাঁর মন্তব্য নিয়ে দেশ জুড়ে তোলপাড় শুরু হওয়ার পরে ক্ষমা চেয়ে নিয়েছেন রণবীর। জনসাধারণের কাছে ক্ষমা চেয়ে তিনি স্বীকার করেছেন যে, তাঁর মন্তব্য অনুপযুক্ত এবং কোনও ভাবেই মজার নয়।
‘বিয়ারবাইসেপ’ বলেন, ‘‘আমার মন্তব্যটি শুধু যে অনুপযুক্ত ছিল তা-ই নয়, এতে মজাও ছিল না। আমি সে ভাবে কৌতুক করতে পারি না। আমি শুধু বলতে চাই যে আমি দুঃখিত।’’
রণবীর বিষয়টির গুরুত্ব বিচার না করার জন্যও ক্ষমা চেয়েছেন এবং অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি যোগ করেছেন যে, কোনও পরিবারকে অসম্মান করা বা আপত্তিকর বিষয়বস্তু প্রচার করার উদ্দেশ্য তাঁর ছিল না।
যদিও পুরো বিষয়টি নিয়ে মুখ খোলেননি সময়। বর্তমানে তাঁর শো, ‘আনফিল্টারড: নর্থ আমেরিকা ট্যুর ২০২৫’-এর জন্য আমেরিকায় রয়েছেন সময়। শনিবার সান হোসে শহরের শোয়ের একাধিক ফটো ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করেন তিনি।
তবে বিতর্কের আবহে বিতর্কিত ওই ভিডিয়ো ইউটিউব থেকে সরানো হয়েছে বলেই খবর প্রকাশ্যে এসেছে।