ছোট থেকেই অভিনয়ের প্রতি আগ্রহ ছিল। কৃষক পরিবারে জন্ম নিলেও অভিনয়ের টানে ছুটে গিয়েছিলেন মুম্বই। বড় পর্দায় প্রথম অভিনয় করেছিলেন শাহরুখ খানের সঙ্গে। ১৭ বছর পর আবার শাহরুখের সঙ্গেই ‘পাঠান’ ছবিতে অভিনয় করতে দেখা গেল শাজি চৌধরিকে।
‘পাঠান’ ছবিতে র এজেন্টের চরিত্রে অভিনয় করেছেন শাজি। শাহরুখের সঙ্গে এই ছবিতে প্রায় ৫ থেকে ৬টি দৃশ্যে অভিনয় করেছেন তিনি। ১৭ বছর আগেও এই সুযোগ মিলেছিল। একটি দৃশ্যে শাহরুখের সঙ্গে দেখা গিয়েছিল শাজিকে।
২০০৪ সালে ফারাহ খানের পরিচালনায় মুক্তি পেয়েছিল ‘ম্যায় হুঁ না’ ছবিটি। শাহরুখের সঙ্গে এই ছবিতে একটি দৃশ্যে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছিল শাজিকে। তার মাঝে পার হয়ে গিয়েছে প্রায় দু’দশক। আবার কোনও দিন বলিউডের বাদশার সঙ্গে অভিনয়ের সুযোগ পাবেন তা ভাবতেও পারেননি তিনি। কিন্তু ভাগ্যের চাকা আবার ঘুরেছে তাঁর জীবনে।
১৭ বছর বলিপাড়ায় কম কাঠখড় পোড়াতে হয়নি শাজিকে। ১৯৭২ সালে রাজস্থানের জয়পুরের কাছে দোদওয়াড়ি গ্রামে এক কৃষক পরিবারে জন্ম তাঁর। ওই গ্রামের স্কুলেই পড়াশোনায় হাতেখড়ি শাজির।
প্রতি বছর দীপাবলির সময় গ্রামে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হত। দীপাবলি উপলক্ষে প্রতি বছর বন্ধুর সঙ্গে ‘রামলীলা’ নাটকে অভিনয়ে যোগ দিতেন শাজি। সেখান থেকেই অভিনয়ের প্রতি আগ্রহ জন্মায় তাঁর।
কিন্তু পড়াশোনার গণ্ডি পেরোনোর আগেই বিয়ে করে নেন শাজি। দশ বছর বয়সে বিয়ে করে ফেলেন তিনি। বিয়ের দু’বছর পর জয়পুরে বড় দাদার কাছে চলে যান শাজি।
জয়পুরে যাওয়ার পর স্কুলের পড়াশোনা শেষ করেন শাজি। রোজগারের জন্য দাদার ব্যবসার কাজেও হাত লাগান তিনি। স্নাতক স্তরের পড়াশোনার জন্য রাজস্থান ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হন।
কিন্তু অভিনয় নিয়ে কেরিয়ার গড়তে চান বলে ২০০৪ সালে জয়পুর থেকে মুম্বই পাড়ি দেন শাজি। মডেলিংয়ে সুযোগও পান। ম়ডেলিংয়ের পাশাপাশি ছবিতে অভিনয়ের জন্য অডিশন দিতেন শাজি।
অডিশন দেওয়ার পর অভিনয়ের সুযোগও পেয়ে গেলেন শাজি। দূরদর্শনের বিখ্যাত ধারাবাহিক ‘শক্তিমান’-এ খলনায়কের চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছিল তাঁকে।
এর পর বহু হিন্দি ধারাবাহিকে শাজিকে পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যায়। ছোট পর্দার পাশাপাশি সিনেমাতেও অভিনয় করেন তিনি। ২০০৪ সালে ‘ম্যায় হুঁ না’ ছবিতে খুব ছোট চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন তিনি।
‘যোধা আকবর’, ‘শুটআউট অ্যাট ওয়াডলা’, ‘পিকে’, ‘তেভর’, ‘মহেঞ্জোদাড়ো’, ‘কাবিল’, ‘থাগস অফ হিন্দোস্তান’-এর মতো ছবিতে পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করেছেন শাজি।
কিন্তু প্রতিটি ছবিতে খলনায়কের সহকারী হিসাবে কাজ করতে হত শাজিকে। একই ধরনের চরিত্রে অভিনয় করে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন তিনি।বাঁধাগতের চরিত্র থেকে বেরিয়ে এসে নতুন ধরনের কিছু করতে চাইছিলেন তিনি।
সেই সময় শাজির কাছে ‘মির্জাপুর’ ওয়েব সিরিজ়ে অভিনয় করার প্রস্তাব আসে। মুখ্যচরিত্র কালীন ভাইয়ার বিশ্বস্ত কর্মীর চরিত্রে অভিনয় করতে হত তাঁকে। কিন্তু এই চরিত্রটিও খলনায়কের। তাই তিনি প্রথমে পরিচালকের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলেন।
শাজি পরিচালককে জানিয়েছিলেন, এই ধরনের চরিত্রে বহু বার অভিনয় করেছেন তিনি। তাই তিনি আর এমন চরিত্রে কাজ করতে চান না। কিন্তু পরিচালকরা শাজিকে ভরসা জুগিয়েছিলেন।
‘মির্জাপুর’ ওয়েব সিরিজ়ে খলনায়কের বিশ্বস্ত কর্মীর চরিত্র হলেও এই চরিত্রটির বিভিন্ন দিক ছিল। সচরাচর যে ধরনের চরিত্রে শাজি কাজ করে এসেছেন, এই চরিত্রটি একেবারেই আলাদা বলে দাবি করেন ওয়েব সিরিজ়ের পরিচালকেরা।
পরিচালকদের কথা মেনে ‘মির্জ়াপুর’-এ অভিনয়ের জন্য রাজি হয়ে যান শাজি। ‘মকবুল’ চরিত্রে অভিনয় করার পর জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন তিনি। এত বছর ইন্ডাস্ট্রিতে থেকেও তাঁর নাম হয়নি। কিন্তু একটি ওয়েব সিরিজ় শাজিকে সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছে দিল।
‘মির্জ়াপুর’-এর পর ‘ব্ল্যাঙ্ক’ এবং ‘প্রণাম’ ছবিতে অভিনয় করলেও শাজি আবার চর্চায় আসেন ‘পাঠান’ ছবিতে অভিনয়ের পর।
শাজি এক পুরনো সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন যে, তিনি স্বাস্থ্য সম্পর্কে বেশ সচেতন। প্রতি দিন টানা দু’ঘণ্টা শরীরচর্চা করেন তিনি। নিয়ম মেনে ডায়েটও করেন শাজি। স্বাস্থ্যকর খাবার এবং শরীরচর্চার মাধ্যমেই নিজেকে ফিট রেখেছেন ।
ইউটিউবে নিজের নামে একটি চ্যানেল রয়েছে শাজির। ইনস্টাগ্রামে অভিনেতার অনুরাগীর সংখ্যাও কম নয়। ইতিমধ্যেই ইনস্টাগ্রামে শাজির অনুরাগী সংখ্যা ৪৬ হাজারের গণ্ডি পেরিয়ে গিয়েছে।