খড়েশ্বরী বাবা। অর্থাৎ যিনি সব সময় দাঁড়িয়ে থাকেন। শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা না বসে, না শুয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকেন এই সাধুরা। এমনকি, খড়েশ্বরী বাবারা ঘুমোনও দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে।
আশ্চর্যের বিষয় যে, এক বা দু’দিন নয়, বছরের পর বছর ধরে এক পায়ে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকেন খড়েশ্বরী সাধুরা।
মূলত ভারতেই খড়েশ্বরী সাধুদের দেখতে পাওয়া যায়। তবে ভারত ছাড়াও একাধিক দেশে তাঁদের উপস্থিতি রয়েছে।
খড়েশ্বরী বাবারা সাধারণত ঐতিহ্যগত ভাবে একটি গাছের নীচে দাঁড়িয়ে থাকেন। এটি বিশেষ যোগাসন করতে করতে দাঁড়িয়ে থাকেন তাঁরা।
এই খড়েশ্বরী সাধুদের মধ্যেই অন্যতম গাজিয়াবাদের খড়েশ্বরী বাবা। অযোধ্যায় রাম মন্দির নির্মাণের জন্য বিগত বহু বছর ধরে একটানা এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকার সংকল্প নিয়েছেন তিনি।
গাজিয়াবাদের খড়েশ্বরী বাবা গত চার বছরে এক মুহূর্তের জন্যও বসেননি। কখনও তাঁকে শুতেও দেখা যায়নি। সারা ক্ষণ তিনি রয়েছেন শুধু এক পায়ে দাঁড়িয়ে।
গাজিয়াবাদ থেকে প্রয়াগরাজে আসা খড়েশ্বরী বাবা সংকল্প করেছেন, যত ক্ষণ না অযোধ্যায় রামমন্দির এবং গাজিয়াবাদে শিবমন্দির তৈরি না হয়, তত ক্ষণ তিনি এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকবেন।
মন্দির দু’টি তৈরি না হওয়া পর্যন্ত তিনি কোনও খাবার ছুঁয়ে দেখবেন না বলেও সংকল্প নিয়েছেন গাজিয়াবাদের খড়েশ্বরী বাবা।
খড়েশ্বরী বাবা নাগা সন্ন্যাসীদের জুনা আখড়ার সাধু। তাঁর আসল নাম মহন্ত রূপগিরি। উজ্জয়িনী কুম্ভমেলার আগে এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন মহন্ত রূপগিরি।
খড়েশ্বরী বাবা গত প্রায় চার বছর ধরে তাঁর গুরু মহন্ত স্বামী নারায়ণ গিরির সঙ্গে দুধেশ্বর শিবমন্দিরের সামনে এই সংকল্প পূরণ করে চলেছেন।
খড়েশ্বরী বাবা সারাক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকেন দোলনায় ভর দিয়ে। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই আরাধনা করেন ভগবানের। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ফল খেয়ে সেখানেই ঘুমিয়ে পড়েন।
খড়েশ্বরী বাবা রূপগিরি জানিয়েছেন, মন্দির নির্মাণের স্বার্থে তিনি নিজের শরীরে অত্যাচার করার কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
শাস্ত্র অনুসারে, যে সমস্ত সাধু সারা জীবন বা একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য এই সংকল্প গ্রহণ করেন, তাঁদের খড়েশ্বরী বলা হয়।
প্রয়াগরাজের কুম্ভমেলায় মানুষের বিশেষ আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছেন খড়েশ্বরী বাবা।
বছরের পর বছর টানা দাঁড়িয়ে থাকার কারণে অনেক সময় খড়েশ্বরী সাধুদের পা ফুলে যায় এবং পায়ে আলসার হয়ে যায়।
সপ্তদশ শতাব্দীতেও ভারতে খড়েশ্বরী সাধুরা ছিলেন বলে বহু প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে।
অস্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত লেখক গ্রেগরি ডেভিড রবার্টসের বিখ্যাত উপন্যাস ‘শান্তরাম’-এও খড়েশ্বরীদের বর্ণনা রয়েছে।