জনতার ভোটে জয়ী হয়ে বিধায়ক হয়েছেন এমন নেতাদের মধ্যে কারও কারও সম্পত্তির পরিমাণ কয়েকশো কোটি টাকা। মাঝেমধ্যেই দেশের সেই বিধায়কদের সম্পত্তির খতিয়ান নজরে আসে। সম্পত্তির পরিমাণ এবং কোথা থেকে এত সম্পত্তি এল, তা নিয়ে কাটাছেঁড়াও হয়।
বিভিন্ন প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভারতের সব থেকে ধনী বিধায়ক কর্নাটকের কনকপুরার কংগ্রেস নেতা তথা সে রাজ্যের উপমুখ্যমন্ত্রী ডিকে শিবকুমার। তাঁর মোট সম্পত্তির পরিমাণ ১,১৪৩ কোটি টাকা। তবে বিধায়কদের কেউ কেউ বিত্তশালী হলেও কোনও কোনও বিধায়কের সম্পত্তির পরিমাণ অতি সামান্য।
সদ্য শেষ হওয়া মধ্যপ্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনে জয়ী বিধায়কদের মধ্যে যিনি সব থেকে ধনী, তাঁর সম্পত্তির পরিমাণ ২৩৩ কোটি টাকা। অন্য দিকে, এমন এক বিধায়কও রয়েছেন যাঁর বাড়িতে নুন আনতে পান্তা ফুরোয় অবস্থা।
কথা হচ্ছে কমলেশ্বর দোরিয়ার। মধ্যপ্রদেশের নবনির্বাচিত বিধায়ক। পেশায় শ্রমিক কমলেশ্বর ছোটবেলায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে টিফিন পৌঁছে দেওয়ার কাজ করতেন। টিফিন ডেলিভারির কাজ করে তিনি যা রোজগার করতেন, সেই টাকায় চালাতেন পড়াশোনার খরচ।
৩৩ বছর বয়সি কমলেশ্বর এখন যে বাড়িতে থাকেন, সেই বাড়ি মাটির তৈরি। ভারী বর্ষণে বাড়ির ছাদ ফুটো হয়ে বৃষ্টির জল ঘরে ঢোকে। বিধায়ক হয়েও সেই অবস্থার পরিবর্তন হয়নি।
মধ্যপ্রদেশের রতলম জেলার সাইলানা আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছেন কমলেশ্বর। নির্বাচনে জেতার পর বুধবার ভোপালের বিধানসভা সচিবালয়ে নথি জমা দিতে যান তিনি। বাড়ি থেকে ৩০০ কিলোমিটারের সেই দূরত্ব মোটরবাইকে চেপে অতিক্রম করেছিলেন কমলেশ্বর। গাড়ি ভাড়া করার মতো টাকাও তাঁর কাছে ছিল না।
মধ্যপ্রদেশের বিধানসভা নির্বাচনে ‘ভারত আদিবাসী পার্টি (বিএপি)’-র হয়ে লড়তে নেমেছিলেন কমলেশ্বর। কংগ্রেসের হর্ষ বিজয় গহলৌতকে ৪,৬১৮ ভোটে হারিয়ে জয়লাভ করেন তিনি।
মধ্যপ্রদেশের ২৩০ আসনের বিধানসভায় সাইলানা একমাত্র আসন যা বিজেপি বা কংগ্রেস ছাড়া অন্য কোনও দল জিতেছে।
সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার সময় কমলেশ্বর জানিয়েছেন, আর্থিক ভাবে সবল না হওয়ার কারণে দলীয় কর্মী এবং তাঁর বন্ধুরা নির্বাচনী খরচ চালিয়েছিলেন। তাঁর কথায়, ‘‘আমার দলের সহকর্মীরা আমাকে সমর্থন করেছিল। ওরা খালি পেটে আমার জন্য প্রচার চালিয়েছে। এমনকি, নিজেদের পকেট থেকে টাকাও খরচ করেছে।’’
কমলেশ্বর বলেন, ‘‘আমাকে বুধবার বিধানসভায় নথি জমা দিতে যেতে হয়েছিল। গাড়ি ভাড়া নিয়ে যাওয়ার সামর্থ্য ছিল না। তাই আমি একটি মোটরবাইকে চেপে বিধানসভার উদ্দেশে রওনা দিই।’’
তিনি নিজে দরিদ্র হলেও বিভিন্ন সুযোগসুবিধা থেকে বঞ্চিত এবং অনগ্রসর শ্রেণির মানুষদের জন্য ভাল কাজ করতে চান বলে জানিয়েছেন কমলেশ্বর। সরকারের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য সৎ ভাবে কাজ করবেন বলেও জানিয়েছেন।
সাইলানা এলাকার রাধাকুয়া গ্রামে কমলেশ্বরের জন্ম। তিনি এবং তাঁর পরিবার একটি মাটির বাড়িতে থাকতেন। স্থানীয় বাজারে ডিম বিক্রি করতেন কমলেশ্বরের মা। ছেলের পড়াশোনার খরচ জোগাতে শ্রমিক হিসাবেও কাজ করেছেন তিনি।
কলেজে পড়াশোনা করার সময় কমলেশ্বর নিজেও শ্রমিক হিসাবে কাজ করতেন। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন নিয়ে পড়াশোনা করার সময় দিল্লির বিভিন্ন বাড়ি এবং অফিসে টিফিন সরবরাহ করতেন।
পড়াশোনা শেষ করে গ্রামে ফিরে আসেন কমলেশ্বর। ২০১৮ সালে নির্দল প্রার্থী হিসাবে সাইলানা বিধানসভা আসনে দাঁড়ান। এর পর ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তবে দু’বারই হেরে যান।
নির্দল প্রার্থী হিসাবে দু’বার হারের পর, ২০২৩ সালে কমলেশ্বর নবগঠিত বিএপি দলে প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সিদ্ধান্ত নেন। বিএপি একটি রাজস্থান-ভিত্তিক দল। সে রাজ্যে এই দলের তিন জন বিধায়ক রয়েছে।