বাবা ছিলেন হিরে কারখানার সামান্য কর্মচারী। ছেলের ছোটখাটো আবদার পূরণ করার ক্ষমতাও ছিল না তাঁর। সেই ছেলেই বর্তমানে কোটি কোটি টাকার ক্রিপ্টো সাম্রাজ্যের মালিক। কথা হচ্ছে জয়ন্তী কানানির। যাঁর সাফল্যের কাহিনি হার মানাবে যে কোনও সিনেমার গল্পকেও।
আমদাবাদে এক নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম জয়ন্তীর। তাঁর বাবা একটি হিরের কারখানায় শ্রমিক হিসাবে কাজ করতেন। দারিদ্রের কারণে ছেলের ছোটখাটো আবদার এবং চাহিদাগুলিও পূরণ করতে পারেননি তিনি।
স্কুলের বেতন দেওয়ার মতো টাকাও নাকি ছিল না জয়ন্তীর বাবার। তবে জয়ন্তীর বাবা ছেলের শিক্ষায় কোনও ত্রুটি রাখেননি। অনেক কষ্ট করেও ছেলেকে স্কুলে পাঠিয়েছেন। ছেলের উচ্চশিক্ষার জন্য ঋণও নিতে হয়েছিল তাঁকে।
জয়ন্তীর বাবার একমাত্র স্বপ্ন ছিল, ছেলে যেন ভাল একটা চাকরি পায়। তাঁর মতো দারিদ্রে জীবন যেন কাটাতে না হয় জয়ন্তীকে।
ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনায় ভাল ছিলেন জয়ন্তী। কোনও রকমে স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে একটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভর্তি হন তিনি।
ইঞ্জিনিয়ারিং-এর একটি শাখায় স্নাতক হওয়ার পর সামান্য বেতনের চাকরিতে পুণের একটি সংস্থায় যোগ দেন জয়ন্তী।
এর মধ্যেই দৃষ্টিশক্তি হারান জয়ন্তীর বাবা। বাবার দেখভাল করার জন্য চাকরি ছেড়ে দিয়ে বাড়ি ফিরে আসেন জয়ন্তী। কয়েক দিন সুখের মুখ দেখলেও আবার আর্থিক সঙ্কটের মুখোমুখি হতে হয় জয়ন্তীর পরিবারকে।
ছোটবেলা থেকেই চাকরির প্রতি বিশেষ ঝোঁক ছিল না জয়ন্তীর। ইচ্ছা ছিল নিজের পায়ে দাঁড়ানোর। তাই ঠিক করেন আর্থিক অনটন থাকলেও আর চাকরি করবেন না। ছোটখাটো কোনও ব্যবসা খুলবেন।
সুযোগের সন্ধানে বিভিন্ন উদ্যোগপতির দরজায় দরজায় ঘুরতে থাকেন জয়ন্তী। বেশ কয়েক জন উদ্যোক্তার সঙ্গেও দেখা করেন তিনি। এর মধ্যেই ঠিক করেন ক্রিপ্টোকারেন্সি সংক্রান্ত কোনও ‘স্টার্টআপ’ ব্যবসা শুরু করবেন।
২০১৭ সালে সন্দীপ নেলিওয়াল এবং অনুরাগ অর্জুনের সঙ্গে মিলে জয়ন্তী ওই ক্রিপ্টো সংক্রান্ত সংস্থা তৈরি করেন। পরে সার্বিয়ার প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ মিহালিও বাজেলিক চতুর্থ সহ-প্রতিষ্ঠাতা হিসাবে সংস্থায় যোগ দেন।
জয়ন্তীদের ওই ক্রিপ্টো সংক্রান্ত সংস্থা আসলে একটি ‘ব্লকচেন প্ল্যাটফর্ম’। যা ক্রিপ্টোমুদ্রা ব্যবহারকারীদের লেনদেনের খতিয়ান রাখতে এবং তথ্য নিরাপদ রাখতে সাহায্য করে।
সংস্থাটি শীঘ্রই আমেরিকার বিখ্যাত বিনিয়োগকারী মার্ক কিউবানের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। জয়ন্তীদের সংস্থায় প্রচুর টাকাও বিনিয়োগ করেন তিনি।
জয়ন্তীর সংস্থা ইতিমধ্যেই ক্রিপ্টোমুদ্রার জগতে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। তিন বছরে প্রচুর টাকার মুখও দেখেছে এই সংস্থা।
ছোটবেলা থেকে প্রচুর কষ্ট করে নিজের চেষ্টায় জয়ন্তী আজ বহু কোটি টাকার ক্রিপ্টো সাম্রাজ্যের সহ-প্রতিষ্ঠাতা। তাঁর নিজের সম্পত্তির পরিমাণও নেহাত কম নয়।
সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২২ সালেও বিভিন্ন দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ৪৫ কোটি ডলারের বিনিয়োগ পেয়েছে জয়ন্তীদের সংস্থা।
জয়ন্তীর সাফল্যকাহিনি তাঁর মতো হাজার হাজার যুবকের অনুপ্রেরণার কারণ হয়ে উঠেছে। কঠিন পরিশ্রম এবং অধ্যবসায় যে সাফল্য আনবেই— তার অন্যতম নিদর্শন হয়ে উঠেছেন জয়ন্তী।