জাপানের হোক্কাইডোর ইওয়ামিজ়াওয়া শহরে এক বিখ্যাত মন্দির রয়েছে। তবে, কোনও দেবতা বা দেবীর জন্য বিখ্যাত নয় সেই মন্দির। মন্দিরের ভিতরে থাকা একটি ‘ভূতুড়ে’ পুতুলকে কেন্দ্র করেই সেই মন্দিরের পরিচিতি এবং জনপ্রিয়তা।
‘ভূতুড়ে’ সেই জাপানি পুতুলটির নাম ‘ওকিকু’। সেই পুতুল ‘হোক্কাইডোর ভূতুড়ে পুতুল’ হিসাবেও পরিচিত।
কিন্তু কেন এই পুতুল ভূতুড়ে? প্রচলিত ধারণা, সাধারণ মানুষের মতো ওকিকু পুতুলেরও মাথার চুল সময়ের সঙ্গে বৃদ্ধি পায়। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, এই পুতুলের মালিকের আত্মাই বন্দি রয়েছে পুতুলের মধ্যে। আর সেই কারণেই পুতুলের চুল মানুষের চুলের মতো বৃদ্ধি পায়।
‘ওকিকু’ পুতুল নিয়ে অনেক গল্প প্রচলিত রয়েছে। তবে তার মধ্যে যেটি সব থেকে জনপ্রিয়,তা হল— এই পুতুলের মালিক ছিল এক বছর তিনেকের শিশুকন্যা। আর তার আত্মাই ঢুকে রয়েছে ওই পুতুলের মধ্যে।
কিংবদন্তি অনুযায়ী, ১৯১৮ সালে সাপ্পোরোতে ঘুরতে গিয়ে ‘ওকিকু’ পুতুলটি কেনেন ইওয়ামিজ়াওয়ার এক ১৭ বছর বয়সি তরুণ।
সেই তরুণের নাম ছিল ইকিচি সুজ়ুকি। সাপ্পোরো শহরে ঘুরতে ঘুরতে একটি দোকানে রাখা ওই পুতুলে চোখ আটকে যায় ইকিচির। পুতুলটি দেখেই নিজের দু’বছর বয়সি বোন ওকিকুর কথা মনে পড়ে যায় তাঁর। ঠিক করেন, ওই পুতুল তিনি বোনকে উপহার দেবেন।
পুতুলটি যখন কেনা হয়, তখন সেটির চুল ছিল ঘাড় অবধি ছাঁটা। জাপানে ওই ধরনের চুলের ছাঁট ‘ওকাপা’ (বব কাটের মতো) নামে পরিচিত। সেই সময় জাপানের বেশির ভাগ পুতুলেই ওই ধরনের চুল লাগানো থাকত।
ইওয়ামিজ়াওয়ায় ফিরে বোনের হাতে ওই পুতুলটি তুলে দেন ইকিচি। শোনা যায়, সেই পুতুল দেখে আনন্দে আত্মহারা হয়ে যায় ওকিকু। নিজের নাম অনুসারে সে ওই পুতুলটিরও নাম দেয় ‘ওকিকু’।
এর পর থেকে ওকিকু নিজের প্রিয় পিুতুল নিয়েই মেতে থাকত। জাগতে-ঘুমোতে-খেলতে, সারা ক্ষণ ওই পুতুল নিয়েই মেতে থাকত ছোট্ট ওকিকু।
এক বছর পেরোতে না পেরোতেই অসুস্থ হয়ে পড়ে ওকিকু। তিন বছরের মাথায় কঠিন অসুখে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় ওকিকুর। জানা যায়, মৃত্যুর সময়ও নাকি পুতুলটি আঁকড়ে ধরে রেখেছিল ওকিকু।
মেয়ের স্মৃতি হিসাবে ওকিকুর পুতুলটি বাড়িতেই রেখে দেয় সুজ়ুকি পরিবার। মেয়ের প্রিয় পুতুলের জন্য বাড়ির মধ্যে একটি বেদিও তৈরি করা হয়।
কিছু দিন যেতে না যেতেই উৎপাত শুরু হয় সুজ়ুকি পরিবারে। পরিবারের সদস্যরা লক্ষ করেন, মেয়ের প্রিয় পুতুলের চুল অস্বাভাবিক ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। চিন্তায় পড়ে যান তাঁরা। পুতুলটি যে ঘরে থাকত, রাতের বেলায় নাকি সেই ঘর থেকেও অদ্ভুত আওয়াজ ভেসে আসতে শুরু করে। ওকিকুর মা নাকি মেয়ের গলা অবধি শুনতে পেতেন।
এ ভাবেই বছর দু’য়েক পেরিয়ে যায়। সুজ়ুকি পরিবার লক্ষ করে, মেয়ের জন্মদিন এবং মৃত্যুদিন কাছাকাছি এলেই তাঁদের বাড়িতে ‘ভূতুড়ে’ কাণ্ডকারখানা শুরু হয়ে যায়।
এর পর সুজ়ুকি পরিবার স্থানীয় এক পুরোহিতের দ্বারস্থ হন। ওই পুরোহিত জানান, ওই পুতুলের মধ্যে ওকিকুর আত্মা বাস করছে। পরিবারের মায়া কাটিয়ে যেতে পারেনি বলেই নাকি সে ওই পুতুলের মধ্যে আশ্রয় নিয়েছে।
এই কথা শুনে সুজ়ুকি পরিবার সামান্য ভয় পেলেও, পরে তা সামলে নেয়। মেয়ে কাছাকাছি আছে ভেবে পুতুলের যত্ন আরও বেড়ে যায়।
কিংবদন্তি অনুযায়ী, ১৯৩৮ সাল পর্যন্ত ওকিকুর আত্মা ঢুকে থাকা ওই পুতুল সুজ়ুকি পরিবারের কাছেই ছিল। কিন্তু বিশেষ কারণে তাঁদের শহর ছাড়তে হয়।
তবে ইওয়ামিজ়াওয়া ছাড়ার সময় ওই পুতুলটিকে আর সঙ্গে নিয়ে যায়নি সুজ়ুকি পরিবার। জাপানের মন্দিরে পবিত্র আত্মাদের সম্মান করা হত। তাই শহরেরই এক মেনেঞ্জি মন্দিরে পুতুলটি দান করে দেয় সুজ়ুকি পরিবার।
সেই মন্দিরে এখনও পুতুলটি সংরক্ষিত রয়েছে। কেউ কেউ বিশ্বাস করেন, এখনও ওকিকু পুতুলের চুল মানুষের চুলের মতো বৃদ্ধি পায়। তবে তা সত্যি না মিথ্যা, তা জানতে ঢুঁ মেরে আসতে হবে ইওয়ামিজ়াওয়ার ওই মন্দিরে।