বিশাল এই ব্রহ্মাণ্ডে কি পৃথিবীই একমাত্র গ্রহ, যেখানে প্রাণের অস্তিত্ব রয়েছে? এই নিয়ে নানা মুনির নানা মত। নানা চিন্তাভাবনা, নানা ব্যাখ্যা। পৃথিবীর বাইরে প্রাণের অস্তিত্ব খুঁজে পেতে দীর্ঘ গবেষণা চালাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। বিজ্ঞানীদের সেই গবেষণার আগুনে ঘিয়ের মতো কাজ করেছে কেপলার ৪৫২বি গ্রহের খোঁজ।
পৃথিবীর সঙ্গে সাযুজ্যের জন্য আপাতত কেপলার ৪৫২বি গ্রহটিকেই ‘দ্বিতীয় পৃথিবী’ বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।
আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ‘নাসা’ নিশ্চিত করেছে, পৃথিবীর মতোই বাসযোগ্য একটি গ্রহ সূর্যের মতো একটি নক্ষত্রকে প্রদক্ষিণ করছে। সেই নক্ষত্রের নাম কেপলার ৪৫২।
কেপলার ৪৫২-র নামেই তাকে প্রদক্ষিণ করা গ্রহগুলির নামকরণ করা হয়েছে। তার মধ্যে কেপলার ৪৫২বি অন্যতম। পৃথিবীর এই যমজগ্রহের অন্য একটি নামও রেখেছেন বিজ্ঞানীরা। নাম দেওয়া হয়েছে ‘আর্থ ২.০’।
কিন্তু এই গ্রহে কি প্রাণ আছে? পৃথিবী থেকে এই গ্রহের দূরত্বই বা কত? কেপলার ৪৫২বি গ্রহের খোঁজ পাওয়ার পর থেকে এমন বিভিন্ন প্রশ্ন ঘুরছে মহাকাশ নিয়ে কৌতূহলী মানুষদের মাথায়।
কেপলার অভিযানের সময় ‘আর্থ ২.০’-এর খোঁজ পেয়েছিলেন নাসার বিজ্ঞানীরা। কেপলার অভিযান হল পৃথিবীর মতো গ্রহ আবিষ্কারের জন্য নাসার প্রচেষ্টা৷
মূলত যে গ্রহগুলিতে জলের সন্ধান পাওয়া যেতে পারে বলে মনে করা হয়, সেই গ্রহগুলি নিয়েই আরও গবেষণা চালান বিজ্ঞানীরা। বিভিন্ন ছায়াপথ ঘেঁটে পৃথিবীর মতো গ্রহ খুঁজে বার করার অভিযান চালানোর সময়ই কেপলার ৪৫২বি-এর হদিস পায় নাসা।
কেপলার একটি মহাকাশ পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র, যা ২০০৯ সালে চালু করা হয়েছিল। মহাকাশে থাকা এই কেন্দ্র অত্যাধুনিক ফটোমিটার ব্যবহার করে বহু গ্রহ আবিষ্কার করেছে।
কেপলার মহাকাশযান এখনও পর্যন্ত প্রায় এক হাজার ‘এক্সোপ্ল্যানেট’ (যে গ্রহগুলি একটি নক্ষত্র বা নক্ষত্রের অবশিষ্টাংশকে প্রদক্ষিণ করে) খুঁজে পেয়েছে। যার মধ্যে এমন গ্রহও রয়েছে, যা দু’টি নক্ষত্রকে প্রদক্ষিণ করে।
২০১৫ সালের জুলাইয়ে কেপলার অভিযানের মাধ্যমে কেপলার-৪৫২বি গ্রহটি খুঁজে বার করে নাসা।
নাসার বিজ্ঞানীদের মতে, কেপলার-৪৫২বি যে নক্ষত্রের চারপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে, অর্থাৎ কেপলার-৪৫২ নক্ষত্রের সঙ্গে সূর্যের অনেক মিল রয়েছে। আবার পৃথিবীর সঙ্গে কেপলার-৪৫২বি-এর মিল রয়েছে।
কেপলার-৪৫২বি পৃথিবীর থেকে প্রায় ৬০ শতাংশ বড়। সূর্যকে ৩৬৫ দিনে এক বার প্রদক্ষিণ করে পৃথিবী। অন্য দিকে কেপলার-৪৫২বি নিজের ‘সূর্য’ কেপলার-৪৫২-কে প্রদক্ষিণ করে ৩৮৫ দিনে। অর্থাৎ, পৃথিবীর চেয়ে মাত্র ২০ দিন বেশি।
কেপলার-৪৫২বি-র মাটি কী দিয়ে তৈরি, তা এখনও জানেন না নাসার বিজ্ঞানীরা। তবে তাঁদের বিশ্বাস যে, সেই গ্রহের মাটি পাথুরে।
কেপলার-৪৫২ অনেকটা সূর্যের মতো। আকারে মাত্র ১০ শতাংশ বড়। তাপমাত্রাও সূর্যের থেকে কিছুটা বেশি। ঔজ্জ্বল্য সূর্যের তুলনায় ২০ শতাংশ বেশি।
তবে কেপলার-৪৫২ নক্ষত্রের বয়স সূর্যের থেকে বেশি। এর বয়স প্রায় ৬০০ কোটি বছর। অর্থাৎ, সূর্যের চেয়ে ১৫০ কোটি বছর বেশি।
কেপলার-৪৫২বি গ্রহ সৌরজগত থেকে ১,৪০০ আলোকবর্ষ দূরে। অর্থাৎ সেখানে পৌঁছনোর আপাতত কোনও উপায় নেই বিজ্ঞানীদের।
কেপলার-৪৫২বি-তে প্রাণের অস্তিত্ব রয়েছে কি না, তা নিয়েও একাধিক প্রশ্ন উঠছে। নাসার বিজ্ঞানীদের বিশ্বাস, এই গ্রহে প্রাণ থাকলেও থাকতে পারে।