দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরের বুকে শনিবারই তৈরি হতে চলেছে ঘূর্ণাবর্ত। যা আগামী ২৪ ঘণ্টায় পরিণত হবে নিম্নচাপে।
পরে তা আরও শক্তি সঞ্চয় করে ৮ মে নাগাদ গভীর নিম্নচাপে পরিণত হবে। অবশেষে ৯-১০ মে নাগাদ গভীর নিম্নচাপে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়ে আছড়ে পড়তে পারে উপকূলবর্তী কোনও রাজ্যে। এমনটাই পূর্বাভাস দিল হাওয়া অফিস।
হাওয়া অফিস সূত্রে খবর, এখনও পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড় তৈরির অনুকূল পরিস্থিতি রয়েছে দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে।
শুক্রবার মৌসম ভবনের তরফে বিবৃতি জারি করে জানানো হয়েছিল, পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা, তামিলনাড়ু এবং অন্ধ্রপ্রদেশ— এই চার রাজ্যের কোনও একটির দিকে ধেয়ে আসতে পারে ঘূর্ণিঝড়। যার মধ্যে বাংলা এবং ওড়িশা ঘূর্ণিঝড়ে সব থেকে বেশি ঝুঁকির মুখে রয়েছে বলেই মনে করছে হাওয়া অফিস।
এক আবহবিদ জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড়ের পরিস্থিতি তৈরি হলে তা কোন দিকে আছড়ে পড়তে পারে তার আভাস মিলতে পারে রবিবার।
শনিবার দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরের বুকে ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হলেও রাজ্যে তাপমাত্রা থাকবে উঠতির দিকেই। তবে বৃষ্টিতে ভিজতে পারে দক্ষিণবঙ্গে চার জেলা। শনিবার দুই বর্ধমান, বীরভূম এবং মুর্শিদাবাদে বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টিপাত হতে পারে বলে হাওয়া অফিস সূত্রে খবর।
তবে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা নেই কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের বাকি জেলাগুলিতে। পাশাপাশি, ঝোড়ো হাওয়া বইতে পারে ৩০-৪০ কিলোমিটার বেগে।
আবহবিদদের মতে, ঘূর্ণাবর্ত ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হলে তার নাম হবে ‘মোকা’। ‘মোকা’ নামটি দিয়েছে আরব সাগরের প্রান্তে অবস্থিত ইয়েমেন। যদিও ‘মোকা’ শব্দের আক্ষরিক কোনও অর্থ নেই। ইয়েমেনের বন্দর শহর ‘মোখা’ (উচ্চারণ মোকা)-র নামে ঘূর্ণিঝড়ের এই রকম নামকরণ করা হয়েছে।
সূত্রের খবর, ঝড়ের পূর্বাভাস মিলতেই প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে কলকাতা পুরসভা। বুধবার নবান্নে জরুরি বৈঠক করেছিলেন রাজ্যের মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী। উপস্থিত ছিলেন কলকাতা পুরসভার কমিশনার বিনোদ কুমার এবং পুরসভার ডিজি (সিভিল) পি কে দুয়া।
শহরের খালগুলির অবস্থা জানতে বৃহস্পতিবার পুর ভবনে পুরসভা, সেচ দফতর এবং পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন বিধানসভার পুর ও নগরোন্নয়ন সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান তথা বিধায়ক তাপস চট্টোপাধ্যায়।
‘মোকা’র পূর্বাভাস পাওয়ার পরই তোড়জোড় শুরু হয়েছে ওড়িশায়। মঙ্গলবার ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলা সংক্রান্ত আলোচনার জন্য একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকের ডাক দেন ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়ক।
প্রয়োজনে কী ভাবে উপকূলবর্তী এলাকার মানুষদের নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া যাবে, মূলত তা নিয়েই সেই বৈঠকে আলোচনা হয় বলে প্রশাসন সূত্রে খবর।
ঘূর্ণিঝড় হানা দিলে ত্রাণ ও উদ্ধারকাজ যেন শীঘ্র শুরু হতে পারে, সেই পরিকল্পনার দিকেও জোর দেওয়ার কথা বৈঠকে জানিয়েছেন ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী।
ঘূর্ণিঝড় ‘মোকা’ ঘিরে আগেভাগেই তৎপরতা শুরু করে দিয়েছে ওড়িশা। ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় উপকূলবর্তী ১৮টি জেলা এবং সংলগ্ন জেলাগুলিকে প্রস্তুত থাকতে প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছে ওড়িশা সরকার।
মৌসম ভবনের ডিরেক্টর জানিয়েছেন, বঙ্গোপসাগরে গোটা পরিস্থিতির উপর সর্ব ক্ষণ নজর রাখা হচ্ছে। বালেশ্বর, ভদ্রক, জাজপুর, কেন্দ্রপাড়া, কটক, পুরী-সহ ওড়িশার বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টির পূর্বাভাস জারি করা হয়েছে।
আর কয়েক ঘণ্টা পরই স্পষ্ট হবে পরিস্থিতি কোন দিকে যায়। তবে ঘূর্ণিঝড়ের মোকাবিলায় উপকূলবর্তী রাজ্যগুলিকে ইতিমধ্যেই সতর্ক করে দিয়েছে মৌসম ভবন।