আশির দশকে হিন্দি ছবির জন্য একের পর এক হিট গান গেয়েছেন। গান শোনার পর লতা মঙ্গেশকরের মতো সঙ্গীতশিল্পী প্রশংসায় ভরিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু কিশোর কুমার, মহম্মদ রফি, কুমার শানু এবং উদিত নারায়ণের মতো গায়কদের মধ্যে হারিয়ে গেলেন সুরেশ ওয়াড়কর।
১৯৫৫ সালে ৭ অগস্ট মুম্বইয়ের কোলাপুরে জন্ম সুরেশের। জন্মের পর কোলাপুর থেকে পরিবার-সহ গিরানগাঁও চলে আসেন তিনি। সুরেশের বাবা কুস্তিগির ছিলেন। পাশাপাশি একটি কাপড় তৈরির কারখানায় চাকরিও করতেন তিনি। ওই একই কারখানায় সুরেশের মা রান্নার কাজ করতেন।
সুরেশের বাবা যখন কুস্তি লড়তে যেতেন, তখন তাঁর সঙ্গী হতেন সুরেশ। বাবাকে দেখে নিজেও কুস্তি লড়তে শিখে গিয়েছিলেন। আট বছর বয়স থেকে সঙ্গীতের প্রতি আগ্রহ জন্মায় তাঁর। সঙ্গীতের প্রশিক্ষণ নেওয়া শুরু করেছিলেন ছোটবেলা থেকেই।
সঙ্গীত নিয়েই যে কেরিয়ারে এগিয়ে যাবেন তা আগে থেকেই ঠিক করে নিয়েছিলেন সুরেশ। তাই সঙ্গীত নিয়ে পড়াশোনা করার পর একটি স্কুলে সঙ্গীত বিষয়ে পড়াতেও শুরু করলেন তিনি।
বিভিন্ন সঙ্গীত প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে বিজয়ী হন সুরেশ। তেমনই একটি সঙ্গীত প্রতিযোগিতার বিচারকের আসনে ছিলেন সুরকার রবীন্দ্র জৈন এবং জয়দেব। সুরেশের গান তাঁদের এত পছন্দ হয় যে, তাঁরা নিজেরাই সুরেশকে হিন্দি ছবিতে গান গাওয়ার সুযোগ করে দেন।
১৯৭৭ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘পহেলি’ ছবির জন্য একটি গান গেয়েছিলেন সুরেশ। রবীন্দ্র জৈনের মারফত এই ছবিতে গান গাওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু গানটি হিট করেনি।
এক বছর পর জয়দেব একটি হিন্দি ছবিতে গান গাওয়ার সুযোগ দেন সুরেশকে। ১৯৭৮ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘গমন’ ছবিতে গান গেয়ে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন সুরেশ।
সুরেশের গান শুনে লতা মঙ্গেশকর এত মুগ্ধ হয়েছিলেন যে, সঙ্গীতজগতের নামী সঙ্গীত পরিচালকদের কাছে সুরেশকে দিয়ে গান গাওয়ানোর অনুরোধ করেছিলেন। লক্ষ্মীকান্ত-প্যারেলাল, কল্যাণজি-আনন্দজির মতো সুরকারদের সঙ্গে কাজ করতে শুরু করেন সুরেশ।
সুরেশের গান পছন্দ করতেন রাজ কপূরও। ‘প্রেম রোগ’ ছবির জন্য সুরেশের কাছে গান গাওয়ার প্রস্তাবও নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। এই ছবির গান হিট হওয়ার পর ‘বোল রাধা বোল’, ‘হীনা’, ‘বিজয়’-এর মতো বহু হিন্দি ছবিতে ঋষি কপূরের কণ্ঠে গান গেয়েছিলেন সুরেশ।
শুধু ঋষি নন, রাজীব কপূরের কণ্ঠেও বিভিন্ন ছবিতে গান গেয়েছেন সুরেশ। হিন্দি ছাড়াও মরাঠি, কোঙ্কনি, ভোজপুরি, ওড়িয়া ভাষায় গান গেয়েছেন তিনি। ২০০৯ সালে একটি তামিল ছবিতেও গান গেয়েছিলেন সুরেশ।
বলিপাড়ায় কানাঘুষো শোনা যায় যে মাধুরীকে বিয়ে করার প্রস্তাব পেয়েও রাজি হননি সুরেশ। মাধুরী যখন অভিনয় জগতে আসেননি, তখন অভিনেত্রীর বাড়ির তরফে সুরেশের বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব গিয়েছিল। কিন্তু মাধুরী খুব রোগা ছিলেন বলে সুরেশের নাকি তাঁকে পছন্দ হয়নি। ফলে বিয়ের কথাও আর এগোয়নি।
মাধুরীর সঙ্গে বিয়ে ভাঙার বিষয়ে সুরেশকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ‘‘মাধুরী খুব ভদ্র মেয়ে। তাই এত দিন আমায় কিছু বলেনি। অন্য কোনও মহিলা হলে আমায় এত দিন চড়-থাপ্পড় লাগিয়ে দিত। ওর সঙ্গে বিয়ে ঠিক হলে আমি কোনও দিন মানা করতাম না। বিয়েতে রাজি হয়ে যেতাম। কিন্তু এ রকম কোনও ঘটনাই ঘটেনি। এ সমস্ত ভুয়ো খবর।’’
১৯৯৮ সালের জুলাই মাসে ক্লাসিক্যাল সঙ্গীতশিল্পী পদ্মাকে বিয়ে করেন সুরেশ। তাঁদের দুই কন্যাসন্তানও রয়েছে। দুই সন্তানই বাবার পদাঙ্ক অনুসরণ করে সঙ্গীতজগতের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন।
সুরেশ এত হিট গান উপহার দিয়েছেন, কিন্তু বলিউড থেকে তাঁকে কখনও তাঁর প্রাপ্য সম্মান দেওয়া হয়নি। বিভিন্ন পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে মনোনীত বিজেতাদের তালিকায় তাঁর নাম থাকলেও তিনি কখনও পুরস্কার পাননি।
২০২০ সালে সুরেশকে ‘পদ্মশ্রী’ সম্মানে ভূষিত করা হলে তিনি দুঃখপ্রকাশ করে জানিয়েছিলেন যে, যে ইন্ডাস্ট্রিতে তিনি এত বছর কাজ করেছেনসেখান থেকে কোনও দিন তাঁকে পুরস্কার দেওয়া হয়নি।
সুরেশের অনুমান, তিনি ইন্ডাস্ট্রিতে এমন সময় এসেছিলেন যখন কিশোর কুমার, মহম্মদ রফির জনপ্রিয়তা তুঙ্গে। তার পর ইন্ডাস্ট্রিতে উদিত নারায়ণ, কুমার শানুর মতো গায়কদের আবির্ভাব হওয়ায় তিনি হারিয়ে যান।
বর্তমানে মুম্বইয়ে নিজের গানের স্কুল খুলেছেন সুরেশ। সেখানেই ছাত্রছাত্রীদের গান শেখান তিনি। এমনকি, নিউ ইয়র্কেও একটি স্কুল রয়েছে তাঁর। সেখানে অনলাইন মাধ্যমে ক্লাস নেন সুরেশ।
মাঝেমধ্যে বিভিন্ন সঙ্গীতের রিয়্যালিটি শোয়ে বিচারকের আসনে দেখা যায় সুরেশকে। ইনস্টাগ্রামে তাঁর অনুরাগীর সংখ্যাও কোনও অংশে কম নয়। ইতিমধ্যেই ইনস্টাগ্রামে সুরেশের অনুরাগী সংখ্যা ৪৩ হাজারের গণ্ডি পার করে গিয়েছে।