বলিপাড়ার জনপ্রিয় খলনায়ক প্রেম চোপড়ার কন্যা। তার পর আবার বলি অভিনেতা শরমন জোশীর স্ত্রী। অভিনয় জগতের সঙ্গে পরোক্ষ ভাবে যুক্ত হলেও কোনও দিন বড় পর্দা বা ছোট পর্দায় অভিনয় করতে দেখা যায়নি প্রেরণা চোপড়াকে। বরং পর্দার পিছনে থেকে শরমনের কাজ সামলে এসেছেন তিনি।
১৯৭৪ সালের ২২ মে মুম্বইয়ে জন্ম প্রেরণার। পরিবারের সকলে এবং কাছের বন্ধুরা তাঁকে ‘প্রের’ বলেই ডাকেন। মুম্বইয়েই স্কুল এবং কলেজের পড়াশোনা শেষ করেছেন তিনি।
মুম্বইয়ের একটি কলেজ থেকে বাণিজ্যে স্নাতক হন প্রেরণা। কলেজে পড়াকালীন তাঁর আলাপ হয় শরমনের সঙ্গে। শরমনও ওই একই কলেজে পড়তেন। তাঁদের প্রেমকাহিনি কোনও রোম্যান্টিক হিন্দি ছবির তুলনায় কম নয়।
পুরনো এক সাক্ষাৎকারে শরমন এবং প্রেরণা দু’জনেই তাঁদের সম্পর্ক নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করেন। দম্পতি জানান, প্রথম দেখাতেই প্রেমে পড়ে গিয়েছিলেন তাঁরা। প্রেরণার স্বভাব দেখেই শরমন আকৃষ্ট হয়েছিলেন।
শরমন বলেন, ‘‘প্রেম চোপড়ার মতো এত নামকরা খলনায়কের কন্যা ও। তবুও প্রেরণার মধ্যে কোনও অহঙ্কার ছিল না। অত্যন্ত মিশুকে স্বভাবের মানুষ ও। তা দেখেই আমি ওর প্রেমে পড়ে যাই।’’
বন্ধুত্বের প্রথম থেকেই শরমন এবং প্রেরণা বুঝতে পেরেছিলেন যে, তাঁদের মধ্যে একটা অদ্ভুত বোঝাপড়া রয়েছে। দু’জনেই একে অপরের সমস্ত সমস্যায় পাশে দাঁড়াতেন।
শরমন এবং প্রেরণা কোনও দিন একে অপরকে প্রেম নিবেদন করেননি। প্রেরণা বলেন, ‘‘আমরা যে দু’জন দু’জনকে ভালবাসি, তা আর আলাদা করে বলার প্রয়োজন পড়েনি। একে অপরের মনের কথা বুঝে গিয়েছিলাম। অনুভব করতাম একে অপরকে।’’
২০০০ সালের ১৫ জুন মুম্বইয়ে সাতপাকে বাঁধা পড়েন শরমন এবং প্রেরণা। তখন বড় পর্দায় সবেমাত্র কাজ করতে শুরু করেছেন শরমন। অভিনেতা হিসাবে তখনও পরিচিতি পাননি তিনি। অবশ্য থিয়েটারশিল্পী হিসাবে তত দিনে নাম করে ফেলেছেন শরমন।
বিয়ের পর শরমনের যাবতীয় কাজ সামলান প্রেরণা। বকলমে শরমনের ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। সাক্ষাৎকারে প্রেরণা বলেন, ‘‘শরমন ওর কাজের চাপে এত ব্যস্ত থাকে যে মাঝেমধ্যে ও খুব গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে ভুলে যায়। তখন আমি ওকে সব মনে করিয়ে দিই।’’
শরমনের কাজ সম্পর্কে খুঁটিনাটি বিষয় জানেন প্রেরণা। এই কাজ করতে তাঁর ভালই লাগে বলে জানিয়েছেন তিনি। প্রেরণার মন্তব্য, ‘‘শরমনের সঙ্গে যখন ওর কর্মী বা ম্যানেজার যোগাযোগ করতে পারেন না, তখন আমি আপৎকালীন পরিষেবা দিতে হাজির থাকি।’’
বিয়ের পাঁচ বছর পর কন্যাসন্তানের জন্ম দেন প্রেরণা। মা হওয়ার এক বছরের মধ্যে ২০০৬ সালে একটি বেসরকারি সংস্থার ডিরেক্টর পদে যুক্ত হন তিনি।
২০০৯ সালে প্রেরণার কোলে আসে যমজ পুত্রসন্তান। একই বছর নিজস্ব একটি সংস্থা খোলেন তিনি। এই সংস্থার মাধ্যমে দেশের জনপ্রিয় চিত্রশিল্পীর হাতে আঁকা ছবির প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়।
সংসারের পাশাপাশি ব্যবসার কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকেন প্রেরণা। প্রতি মাসে ৩০ থেকে ৫০ লক্ষ টাকা উপার্জন করেন তিনি।
২০১৫ সালে ‘হেট স্টোরি ৩’ ছবিটি মুক্তি পাওয়ার আগে একটি সাক্ষাৎকারে শরমন বলেন, ‘‘আমার কাজের চাপ কতটা রয়েছে, তা প্রেরণা বোঝে। আমার পছন্দ-অপছন্দকে সম্মান করে ও। তবে আমরা কাজের জায়গায় যে ভাবে থাকি, বাড়ির মধ্যে একদমই তেমন নই। চার দেওয়ালের ভিতর আমাদের দেখলে চেনা যাবে না।’’
বাবা এবং স্বামী দু’জনেই ফিল্ম জগতের সঙ্গে যুক্ত হওয়া সত্ত্বেও নিজেকে আলোর রোশনাই থেকে যতটা সম্ভব দূরে সরিয়ে রাখেন প্রেরণা। ইনস্টাগ্রামেও তাঁর প্রোফাইল তালা লাগানো। পরিবারের নিকটাত্মীয় এবং কাছের বন্ধুবান্ধবদেরই ইনস্টাগ্রামের বন্ধুদের তালিকায় রেখেছেন তিনি।